জেরুজালেম প্রশ্নে ওআইসি চুপ থাকতে পারে না: রাষ্ট্রপতি

জেরুজালেম প্রশ্নে ওআইসি চুপ থাকতে পারে না: রাষ্ট্রপতি

ঢাকা, ১৩ ডিসেম্বর (জাস্ট নিউজ) : জেরুজালেম প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রকে সিদ্ধান্ত বদলে বাধ্য করতে মুসলিম দেশগুলোর জোট ওআইসিকে দ্রুত কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ওআইসির বিশেষ সম্মেলনে অংশ নিয়ে এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, যুক্তরাষ্ট্রের ওই বৈরী সিদ্ধান্তের পর ওআইসি চুপ করে বসে থাকতে পারে না।

আরব দেশগুলোর আহ্বান উপেক্ষা করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতির ঘোষণা দেয়ায় ওআইসির বর্তমান চেয়ার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়িপ এরদোগান জোটের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের এই সম্মেলন আয়োজন করেন।

‘আল-কুদসের (জেরুজালেমের আরবি নাম) প্রতি সংহতিতে সম্মিলিত উদ্যোগ’ শীর্ষক ইস্তাম্বুল কংসে অ্যান্ড এক্সিবিশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে বাংলাদেশের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন। জেরুজালেম মুসলিম, খ্রিষ্টান ও ইহুদি- সব ধর্মের অনুসারীদের কাছেই পবিত্র নগরী।

জেরুজালেমকে ইসরায়েল রাজধানী দাবি করে আসছে। তবে পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে সমর্থন রয়েছে বাংলাদেশসহ মুসলিম বিশ্বের নেতাদের। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প গত ৬ই ডিসেম্বর এক ঘোষণায় জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়ে তেল আবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তর করতে পররাষ্ট্র দপ্তরকে নির্দেশনা দেন। ট্রাম্পের ওই সিদ্ধান্ত মুসলিম বিশ্বের অনুভূতিতে আঘাত এনেছে এবং ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে বলে বক্তৃতায় উল্লেখ করেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তিনি সতর্ক করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ওই সিদ্ধান্ত ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। মুসলিম বিশ্বে নতুন করে ক্ষোভের আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হলে তা সহিংস উগ্রবাদকে আরো উসকে দিতে পারে, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারে। ট্রাম্পের ওই ঘোষণায় ইসরায়েলি বাহিনী ও ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীদের উত্তেজনা বেড়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগের কথা জানিয়ে ওআইসি সম্মেলনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ওই ঘোষণায় মুসলমানদের পবিত্র শহর আল কুদস বা জেরুজালেমের ওপর ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করবে। মুসলিম বিশ্ব তা কখনোই মেনে নেবে না। এই সিদ্ধান্ত কোনো ইতিবাচক প্রভাব তো রাখবেই না, বরং তা ওই ভূখণ্ডে স্থিতিশীলতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দেবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, ওই সিদ্ধান্তের ফলে আরব-ইসরায়েল শান্তি প্রক্রিয়ার মধ্যস্থতাকারী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের গ্রহণযোগ্যতাই প্রশ্নের মুখে পড়েছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত ৪৬৭ নম্বর প্রস্তাবে জেরুজালেমের রাষ্ট্রীয় পরিচয় পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত বাতিল ঘোষণা করা হয়েছিল। আর ৪৭৮ নম্বর প্রস্তাবে ইসরায়েলকে ওই ভূখণ্ডে বসতি স্থাপন বন্ধ করে জেরুজালেমের আইনি পরিচয় এবং জনমিতিক বৈশিষ্ট বদলে দেয়ার চেষ্টা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের ওই সিদ্ধান্ত জেরুজালেমের মুসলমান ও খ্রিষ্টানসহ ফিলিস্তিনি জনগণের আত্ম-নিয়ন্ত্রণের অধিকার এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের গৃহীত প্রস্তাব ও আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ফিলিস্তিনের ‘ভাই-বোনদের’ অধিকার ও ন্যায় বিচারের প্রশ্নে পূর্ণ সমর্থন নিয়ে পাশে আছে বাংলাদেশের মানুষ। যুক্তরাষ্ট্র যাতে তাদের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে এবং এই সংকটে গঠনমূলক ভূমিকা পালন করে, সেই দাবিতে মুসলিম উম্মাহর সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে আবদুল হামিদ বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রক্রিয়া পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে এবং ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বিরাষ্ট্র নীতির আলোকে গঠনমূলক এবং বাস্তবমুখী প্রক্রিয়া গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।

এ ইস্যুতে ওআইসিকে দ্রুত কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ইসরাইলকে তাদের নীতি ও কর্মকাণ্ড থেকে সরে আসতে বাধ্য করার চেষ্টায় আমাদের বিশ্ব সম্প্রদায়কে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। জেরুজালেম নিয়ে ওআইসির এ পর্যন্ত যেসব বাস্তবায়নযোগ্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেগুলো আমাদের এগিয়ে নিতে হবে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানের সভাপতিত্বে সম্মেলনে ওআইসি মহাসচিব ইউসেফ বিন আহমদ আল-ওসাইমিন এবং ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসসহ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।

(জাস্ট নিউজ/একে/২২০৮ঘ.)