‘বন্দুকযুদ্ধ’ অব্যাহত, আজও নিহত ৯

‘বন্দুকযুদ্ধ’ অব্যাহত, আজও নিহত ৯

 

ঢাকা, মে ২৪ (জাস্ট নিউজ): আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে দেশে বিভিন্ন স্থানে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আজও ৯ জন নিহত হয়েছেন।
বুধবার রাতে কুমিল্লা, ফেনী, মাগুরা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সাতক্ষীরা ও নারায়ণঞ্জে তারা নিহত হয়।

কুমিল্লা: কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে পুলিশের সাথে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ বাবুল প্রকাশ লম্বা বাবুল (৩৫) এবং সদর দক্ষিণে রাজিব (২৬) নামের দুইজন নিহত হয়েছে। বুধবার দিবাগত রাত ১টার দিকে জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলাধীন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন আমানগন্ডা সলাকান্দা নতুন রাস্তার মাথায় এবং রাত সোয়া ২টার দিকে সদর দক্ষিণ উপজেলার চৌয়ারা সংলগ্ন ঢাকা-চট্টগ্রাম পুরাতন ট্যাংক রোডের গোয়ালমথন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত বাবুল চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বৈদ্দেরখিল গ্রামের হাফেজ আহাম্মদের ছেলে এবং রাজিব সদর দক্ষিণ উপজেলার কোটবাড়ি সংলগ্ন চাঙ্গিনী গ্রামের মৃত শাহ আলমের ছেলে। উভয়ই তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী বলে পুলিশ দাবি করেছে। উভয় ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি মো: আবুল ফয়সাল জানান, মাদক বিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে পৌর এলাকার রামরায় এলাকা থেকে তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী বাবুলকে আটক করা হয়। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, তার একটি মাদকের চালান উপজেলার আমানগন্ডা এলাকায় রয়েছে। মাদক ব্যবসায়ী বাবুলকে নিয়ে আমানগন্ডার নতুন রাস্তার মাথার মন্তাজের বাগানে রাত ১টার দিকে অভিযানকালে বাবুলের সহযোগীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এ সময় পুলিশও আত্মরক্ষায় পাল্টা ২৩ রাউন্ড গুলি চালায়। উভয় পক্ষের গুলিবিনিময়ে মাদক ব্যবসায়ী বাবুল ছাড়াও থানার এসআই মোজাহের, কনস্টেবল মিজান ও ফরিদ আহত হয়। আহত বাবুলকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঘটনাস্থল থেকে একটি এলজি এবং ২০০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত বাবুলের বিরুদ্ধে মাদক আইনে ৫টি মামলা রয়েছে।

অপরদিকে সদর দক্ষিণ মডেল থানার ওসি মো: নজরুল ইসলাম জানান, রাত সোয়া ২টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম পুরাতন ট্যাংক রোডের গোয়ালমথন এলাকায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় মাদক ব্যবসায়ীরা একটি প্রাইভেটকারে মাদকদ্রব্য নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক ব্যবসায়ী রাজিব (২৫) ও তার সহযোগীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এ সময় আত্মরক্ষায় পুলিশও ১৭টি রাউন্ড গুলি চালায়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন মাদক ব্যবসায়ী রাজিব। আহত রাজিবকে কুমেক হাসপাতালে নেয়ার পর ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে নিহত উভয়ের মরদেহ কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে নেয়া হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

ফেনী: ফেনীর ফুলগাজীতে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দুই মাদক বিক্রেতা নিহত হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোরে উপজেলার সীমান্তবর্তী জাম্বুড়া এলাকায় এ ‘বন্দুকযুদ্ধে’র ঘটনা ঘটে। এসময় মাদক ও অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে বলে পুলিশ দাবি করেছে।

ফুলগাজী থানা সূত্রে জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সীমান্তবর্তী ওই এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। এসময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক বিক্রেতারা গুলি ছোড়ে। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলি ছুড়লে দুই মাদক বিক্রেতা আহত হয়। পরে তাদের আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ফেনী আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠানো হলে সেখানে তাদের মৃত্যু হয়।

ঘটনাস্থল থেকে ২শ’ বোতল ফেনসিডিল ও ৭শ’ পিস ইয়াবা, একটি পিস্তল ও একটি কার্তুজ উদ্ধার করা হয়। নিহত মাদক বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে থানায় ১০টিরও বেশি করে মামলা রয়েছে। তারা এলাকায় চিহ্নিত মাদক বিক্রেতা হিসেবে পরিচিত বলেও পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

নিহতরা হলেন- সামিরান শামীম উপজেলার আনন্দপুর মাইজ গ্রামের মোহাম্মদ মোস্তফার ছেলে ও অপরজন মনতলা গ্রামের মৃত ফটিক মিয়ার ছেলে মজনু মিয়া ওরফে মনির।

মাগুরা: মাগুরায় পারনান্দুয়ালী হাউজিং প্রজেক্ট এলাকায় বুধবার দিবাগত রাতে আয়ুব হোসেন (৪৮) ও মিজানুর রহমান কালু (৪৫) নামে দুই মাদক ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

মাগুরার সহকারি পুলিশ সুপার ছনরুদ্দিন আহমেদ জানান, রাত সাড়ে ১২টার দিকে পারনান্দুয়ালী হাউজিং প্রজেক্ট এলাকায় দুই দল মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে গুলাগুলি হয়। আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক ব্যবসায়ী দুইগ্রুপ সেখান থেকে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলে গিয়ে আমরা দুইজনকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখি। এ সময় সেখানে ৫০০ গ্রাম হেরোইন ও ৬টি গুলির খোসা পাওয়া যায়।

নিহত আয়ুব হোসেনের বাড়ি শহরতলীর নিজনান্দুয়ালী গ্রামে। তার নামে মাদকসহ ২১টি মামলা আছে। অন্যদিকে, মিজনুর রহমান কালুর বাড়ি শহরের ভায়না টিটিডিসি পাড়ায়। তার নামে মাদকসহ ১৮টি মামলা আছে।

নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে পুলিশের সাথে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ১৫ মামলার আসামি, মাদক ব্যবসায়ী সেলিম ওরফে ফেন্সি সেলিম নিহত হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) ৬ জন।

বৃহস্পতিবার ভোর ৩টায় সিদ্ধিরগঞ্জের দক্ষিণ নিমাইকাসারী ক্যানেলপাড় বজলুখানের খালি জায়গায় এ ‘বন্দুকযুদ্ধে’র ঘটনা ঘটে। সেলিম ৩ নং ওয়ার্ডের সিদ্ধিরগঞ্জের নিমাইকাসারী বাঘমারা এলাকায় আবুল কাশেম ওরফে গাঞ্জা কাশেমের ছেলে। কাশেম এলাকায় গাজার ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে। সেলিমের মা মর্জিনা বেগমও মাদক ব্যবসায়ের সাথে জড়িত। সেলিমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ১৫টি মাদক মামলা রয়েছে।

ঘটনাস্থল থেকে একটি একনলা বন্দুক, একটি সুইসগিয়ার চাকু, ৫ বোতল ফেনসিডিল, প্রায় ৫শ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগেও একবার পুলিশের এক কর্মকর্তাকে কুপিয়ে আহত করেছিল ফেন্সি সেলিম।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সাত্তার জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ফেন্সি সেলিমকে মাদক বিক্রির সময় হাতেনাতে ধরতে মৌচাক এলাকায় গেলে সেলিম ও তার সহযোগীরা পুলিশের উপর গুলি শুরু করে। রাত আড়াইটা থেকে প্রায় ৩০ মিনিট গুলিবিনিময় হয় পুলিশের সাথে তাদের। এ সময় ঘটনাস্থলেই সেলিম নিহত হয় ও পুলিশের ছয়জন আহত হয়। আহতরা খানপুর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় পুলিশের সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আমির খাঁ নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। বুধবার দিবাগত গভীর রাতে উপেজলার ধরখার ইউনিয়নের বনগজ স্টিল ব্রিজ সংলগ্ন পাকা রাস্তার মোড়ে এ ‘বন্দুকযুদ্ধে’র ঘটনা ঘটে। নিহত আমির উপজেলার চানপুর এলাকার মৃত সুরুজ খাঁর ছেলে। তিনি শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ও হত্যা মামলার আসামি বলে দাবি করেছে পুলিশ।

আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশারফ হোসেন তরফদার জানান, রাতে পুলিশের একটি দল বনগজ স্টিল ব্রিজ সংলগ্ন পাকা রাস্তার মোড়ে মাদকবিরোধী অভিযানে যায়। এসময় আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা আমির খাঁ ও তার সহযোগীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এ সময় সহযোগীদের গুলিতে আমির খাঁর মৃত্যু হয়।

তিনি জানান, নিহত আমিরের বিরুদ্ধে আখাউড়া থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে ২টি ও ১টি হত্যা মামলাসহ ১২টি মামলা রয়েছে। মরদেহটি ময়নাতদন্তের জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

ওসি আরো বলেন, ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আখাউড়া থানা পুলিশের এএসআই ও ২ জন কনস্টেবল আহত হয়েছেন। তাদের আখাউড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ১টি পাইপগান, ১টি কাতুর্জ, ১টি রামদা, ১০ কেজি গাঁজাসহ ৮টি স্কফ সিরাপ উদ্ধার করেছে।

সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে এক মাদক বিক্রেতার গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মৃত সেই মাদক বিক্রেতার পরিচয় সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে তার বয়স আনুমানিক ৪০ বছর বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার ভাড়াসিমলা ইউনিয়নের চৌবাড়িয়া এলাকা থেকে সেই অজ্ঞাত মাদক বিক্রেতার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান হাফিজুর রহমান বিষয়টি নিশ্চত করেছেন।

তিনি জানান, কোনো মাদক বিক্রেতা গ্রুপ নিজেদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জড়িয়ে তাকে হত্যা করেছে। মরদেহের পাশে পড়ে থাকা অবস্থায় এক বস্তা ফেনসিডিল, একটি রিভলবার, একটি বন্দুকের গুলির খোলা ও একটি রাইফেলের গুলির খোসা পাওয়া গেছে।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১০২৪ঘ)