‘শেখ হাসিনা-মমতা বৈঠকে তিস্তা প্রসঙ্গ এড়িয়ে গেলেন’

‘শেখ হাসিনা-মমতা বৈঠকে তিস্তা প্রসঙ্গ এড়িয়ে গেলেন’

ঢাকা, ২৭ মে (জাস্ট নিউজ) : বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুদিনের সফরে গত শুক্রবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গে যান। সফর শেষে শনিবার রাতে দেশে ফিরেছেন তিনি। নির্বাচনের বছর হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর এ সফরকে ঘিরে দেশবাসীর বাড়তি কৌতূহল ছিল। সেই সাথে দীর্ঘকাল ঝুলে থাকা তিস্তা চুক্তি নিয়ে আশা ছিল অনেকের। যদিও এবারের সফরে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা হবে না, তা আগেই জানিয়ে দেয়া হয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে। তারপরও চুক্তিসহ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে ভারত সরকার কী মনোভাব দেখায় তা নিয়ে আলোচনার কমতি ছিল না। ভারতের গণমাধ্যমও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে কভার করেছে।

ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যম এ সফর নিয়ে বিশেষ করে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পৃথক একান্ত বৈঠক ও বৈঠকে আলোচনার ইস্যু নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন ছেপেছে। এর মধ্যে কলকাতার দৈনিক বর্তমান একটি প্রতিবেদনে বলেছে, ‘শেখ হাসিনা-মমতা বৈঠকে তিস্তা প্রসঙ্গ এড়িয়ে গেলেন দুপক্ষই। ’দৈনিক বর্তমান পত্রিকাটির সেই সংবাদটি জাস্ট নিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে শনিবার সন্ধ্যায় একান্ত বৈঠক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ওই বৈঠকে মমতা অংশ নিলেও কূটনৈতিক স্তরে তা দু’দেশের দ্বিপাক্ষিক শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক হিসেবেই চিহ্নিত হয়েছে। আর সে কারণেই দক্ষিণ কলকাতার এক পাঁচতারা হোটেলের (শেখ হাসিনা যেখানে রয়েছেন) ওই বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন ভারত-বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও।

কর্মকর্তাদের নিয়ে ওই বৈঠকের পর দুই নেত্রী আধঘণ্টারও কিছু বেশি সময় একান্তে কথা বলেন।

সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি বছরের শেষে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সেই নির্বাচনে অবশ্যম্ভাবী ইস্যু হয়ে উঠেছে ‘তিস্তার পানি চুক্তি’। সেই চুক্তি রূপায়ণের ক্ষেত্রে একমাত্র মমতাই যে সহায়ক শক্তি, তা উপলব্ধি করেছেন বাংলাদেশের শাসকদল আওয়ামী লীগের নেতা-নেত্রীরা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ সফরে আসা বাংলাদেশের কূটনৈতিক মহলের খবর, এদিনের আলাপচারিতায় সেই চুক্তি রূপায়ণে ‘সহায়ক’ হয়ে ওঠার জন্য খোদ ঢাকার তরফ থেকে অনুরোধ এসেছে মমতার কাছে।

কী বলেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী?
উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দাবি, তিস্তা চুক্তি প্রসঙ্গে এবার অনেকটাই সদর্থক ভূমিকায় দেখা গিয়েছে মমতাকে। তবে বৈঠকে তিস্তা প্রসঙ্গ এসেছিল কি না, সে প্রশ্নের কোনও জবাব মেলেনি দু’পক্ষের কাছ থেকে।

দু’দিনের রাজ্য সফরের সূচিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক নির্ধারিত ছিল না। নির্ধারিত সফরসূচি অনুযায়ী ঠিক ছিল, নেতাজি ভবন ঘুরে বিকেল পাঁচটা নাগাদ দক্ষিণ কলকাতার ওই হোটেলে ফিরে আসবেন শেখ হাসিনা। রমজান মাসের ধর্মীয় ক র্মকাণ্ড সেরে সেখানে বিশ্রাম নেওয়ার পর রাত ৯টা নাগাদ দমদম বিমানবন্দর থেকে ফিরে যাবেন ঢাকায়।

তাহলে কীভাবে আয়োজন করা হল এই বৈঠকের?

সচেতন মহল সূত্রে জানা গিয়েছে, মমতার সঙ্গে আলাদা করে বৈঠক করতে চান শেখ হাসিনা, এই অনুরোধ জানিয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘দ্বারস্থ হয়’। পররাষ্ট্র মন্ত্রালয়ের বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের দায়িত্বে থাকা এক যুগ্মসচিব এই বিষয়ে উদ্যোগ নেন। বাংলাদেশের ওই অনুরোধে সাড়া দেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও। তারপরই ঠিক হয়, শনিবার বাংলাদেশ ফেরার আগে সেই বহু প্রতীক্ষিত ওই বৈঠকটি হবে।

দক্ষিণ কলকাতার যে পাঁচতারা হোটেলে শেখ হাসিনা তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে উঠেন। সেখানেই একটি কক্ষে বৈঠকের স্থান ঠিক হয়। যেদিন থেকে শেখ হাসিনা এখানে রয়েছেন, সেদিন থেকেই ওই কক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের প্রতিকৃতি আর বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা রাখা আছে।

বর্তমানের প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈঠকের আগে ওই ঘরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান তারা। তারপর শুরু হয় বৈঠক। বৈঠকের প্রথম পর্বে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা। পরে তারা বেরিয়ে আসার পর দুই নেত্রী একান্তে আলোচনা করেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এদিন বৈঠক শেষে মমতা সাংবাদিকদের বলেন, আলোচনা ভালো হয়েছে। দুই বাংলার সৌভ্রাতৃত্ব, বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল, আছে, থাকবে। শেখ হাসিনা এবং তার বোন শেখ রেহানাকে আমি ২০-২৫ বছর ধরে চিনি। উনি আমাদের এখানে এসে কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি লিট নিয়েছেন, তাতে আমাদের সম্মান বেড়েছে।

কী নিয়ে আলোচনা হল? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মমতা বলেন, পারস্পরিক সব বিষয় নিয়েই আলোচনা হয়েছে। তার মধ্যে শিক্ষা, সংস্কৃতি, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য তো রয়েছেই।

মমতা বলেন, দু’দেশের সরকারের সম্মতি মিললেই কলকাতায় বঙ্গবন্ধু মিউজিয়াম গড়া হবে। থিয়েটার রোডে শেখ হাসিনার পরিবারের একটি জায়গা ছিল। সেই জায়গা ওঁরা ‘রেস্টোর’করতে বলছেন। জায়গাটি এখন অরবিন্দ আশ্রমের আওতাধীন। আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলব। না পেলে বিকল্প ব্যবস্থা করব।

(জাস্ট নিউজ/ডেস্ক/একে/২৩০২ঘ.)