‘বন্দুকযুদ্ধ’ অব্যাহত, আজও নিহত ১৪

‘বন্দুকযুদ্ধ’ অব্যাহত, আজও নিহত ১৪

ঢাকা, ৩০ মে (জাস্ট নিউজ) : আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাদক বিরোধী অভিযানে দেশের বিভিন্ন স্থানে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আজও ১৪ জন নিহত হয়েছেন।

মঙ্গলবার দিবাগত রাতে কুমিল্লা, নড়াইল, মাগুরা, যশোর, আশুলিয়া, চুয়াডাঙ্গায় ও রাজধানী ঢাকায় এসব বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে।

রাজধানী: রাজধানীর ভাষানটেক দেওয়ানপাড়া লোহার ব্রিজ এলাকায় র‌্যাবের সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আতাউর রহমান আতাসহ (৪০) তিন মাদক বিক্রেতা নিহত হয়েছেন। বন্দুকযুদ্ধে নিহত অপর দুই মাদক বিক্রেতার নাম-পরিচয় জানা যায়নি।

মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এসময় ঘটনাস্থল থেকে দু’টি পিস্তল ও বিপুল পরিমাণ ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক চৌধুরী মঞ্জুর কবির জানান, মাদক বিক্রেতাদের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে রাতে লোহার ব্রিজ এলাকার একটি বাড়িতে অভিযান চালানোর সময় মাদক বিক্রেতারা র‌্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। আত্মরক্ষার্থে র‌্যাবও পাল্টা গুলি ছোড়ে। একপর্যায়ে আতাসহ তিন মাদক বিক্রেতা নিহত হন।

মাগুরা: মাগুরা শহরতলীর বাটিকাডাঙ্গা মাঠপাড়া এলাকা থেকে তিন মাদক ব্যবসায়ীর গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এসময় ঘটনাস্থল থেকে ৩২০ গ্রাম হেরোইন, ১ কেজি গাঁজা, ৬ বোতল ফেনসিডিল, ৬ টি রাইফেলের গুলি ও ৮ টি গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে।

মঙ্গলবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে সেই তিন মাদিক ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার করা হয়। সেই তিন মাদক ব্যবসায়ী হচ্ছেন শহরের ভায়না চোপদার পাড়া এলাকার মহিউদ্দিন চোপদারের ছেলে বাচ্চু চোপদার (৫৫), ইসলামপুর এলাকার আবদুর রাজ্জাক ঢালির ছেলে রায়হান ঢালি ব্রিটিশ (২০) এবং নতুন বাজার বৈরাগি পাড়ার খোকন অধিকারীর ছেলে কিশোর অধিকারী কালা (৪২)।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইলিয়াস হোসেন জানান, রাত ১ টার দিকে টহল পুলিশ গোলাগুলির সংবাদ পেয়ে বাটিকাডাঙ্গা মাঠপাড়া এলাকায় গিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় তিনজনকে পড়ে থাকতে দেখে। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাদের মৃত্যু হয়।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নিহত রায়হান ঢালি ব্রিটিশ ও কিশোর অধিকারী কালার নামে সদর থানায় ১০টি ও বাচ্চু চোপদাররে নামে ৭ টি মাদকের মামলা রয়েছে।
নড়াইল: নড়াইলে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে সজিব (২৬) নামে এক মাদক বিক্রেতা নিহত হয়েছেন। সজিব নড়াইল সদর উপজেলার দত্তপাড়া গ্রামের আলতাবের ছেলে।
মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টার দিকে নড়াইল-লোহাগড়া সড়কের মালিবাগ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এসময় ঘটনাস্থল থেকে ২৭৬ পিস ইয়াবা, রিভলবার, দুই রাউন্ড গুলি, তিনটি দা উদ্ধার করা হয়।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন জানান, মাদক বিক্রেতারা এলাকাতে অবস্থান করছেন, এমন সংবাদের ভিত্তিতে রাতে মালিবাগ এলাকায় অভিযান চালানো হয়। টের পেয়ে মাদক বিক্রেতারা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে।

তিনি আরো জানান, একপর্যায়ে সবুজ গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন এবং তার সঙ্গীরা পালিয়ে যান। পরে সবুজকে উদ্ধার করে নড়াইল সদর হাসপাতালে নিলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। সবুজের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা রয়েছে।

কুমিল্লা: কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে রোসমত আলী নামে এক মাদক বিক্রেতা নিহত হয়েছেন। নিহত রোসমত উপজেলার কালিকৃষ্ণ নগরের মৃত আলী আহমেদের ছেলে।

মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টার দিকে উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের লরিবাগ রাস্তায় এ ঘটনা ঘটে। এসময় ঘটনাস্থল থেকে পাইপগান, কার্তুজ ও ৪০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়।
বুড়িচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনোজ কুমার দে জানান, মাদকের চালান যাচ্ছে, এমন সংবাদের ভিত্তিতে রাতে লরিবাগ এলাকায় অভিযান চালানো হয়। টের পেয়ে মাদক বিক্রেতারা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে।

তিনি আরো জানান, একপর্যায়ে রোসমত গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন এবং তার সঙ্গীরা পালিয়ে যান। রোসমতের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে থানায় সাতটি মামলা রয়েছে।

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামে র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে’ ইসহাক নামে (৩৫) এক মাদক বিক্রেতা নিহত হয়েছেন। নিহত ইসহাক নগরের কোতোয়ালি থানার ঝাউতলা কলোনির মোহাম্মদ আলীর ছেলে।

মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর টাইগারপাসের পলোগ্রাউন্ড এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ইসহাকের বিরুদ্ধে থানায় ১৯টি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

র‌্যাব-৭ এর উপ-অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আশেকুর রহমান জানান, রাতে টাইগারপাসের পলোগ্রাউন্ডে মাদক বিক্রেতাদের অবস্থানের খবর পেয়ে র‌্যাবের মোবাইল টিম অভিযান চালায়। টের পেয়ে মাদক বিক্রেতারা র‌্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এসময় র‌্যাবও পাল্টা গুলি ছোড়ে।

তিনি আরো জানান, একপর্যায়ে ইসহাক গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন এবং তার সঙ্গীরা পালিয়ে যান। এসময় ঘটনাস্থল থেকে চার হাজার পিস ইয়াবা, একটি ওয়ান শুটার গান, পাঁচ রাউন্ড গুলি ও পাঁচ রাউন্ড গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়।

কক্সবাজার: কক্সবাজার শহরের কবিতা চত্বর এলাকায় র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। নিহত সেই মাদক ব্যবসায়ীর নাম মজিবুর রহমান (৪২)।

মঙ্গলবার দিবাগত রাত সোয়া ১২ টার দিকে এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। নিহত মজিবুর রহমান নেত্রকোনার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ও ১০ মামলার আসামি ছিলেন বলে জানা গেছে।

র‌্যাব-৭ এর কক্সবাজার ক্যাম্প কমান্ডার মেজর রুহুল আমিন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, এসময় ঘটনাস্থল থেকে ছয় হাজার পিস ইয়াবা, একটি ওয়ান শুটার গান, তিন রাউন্ড গুলি ও গুলির দু’টি খালি খোসা উদ্ধার করা হয়।

যশোর: বেনাপোলে দু’দল মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে ‘গোলাগুলিতে’ দুজন নিহত হয়েছেন।

বুধবার ভোরে বেনাপোলের বড়আঁচড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- বেনাপোল ভবেরবেড় গ্রামের মৃত শাহাজানের ছেলে লিটন (৩৪) ও অজ্ঞাত (৪০)।

বেনাপোল পোর্ট থানার ওসি অপূর্ব হাসান জানান, ভোরে বেনাপোল বড়আঁচড়া এলাকায় দু’দল মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে গোলাগুলি হচ্ছে এমন খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে যায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। এ সময় সেখানে দুজনকে পড়ে থাকতে দেখে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। নিহতদের লাশ ময়না তদন্তের জন্য যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

ঘটনাস্থল থেকে ১০ কেজি গাজা, একটি দেশি আগ্নেয়াস্ত্র, দুই রাউন্ড গুলি ও গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়।

যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সালাউদ্দিন শিকদার জানান, স্থানীয়রা নিহত লিটনের মরদেহ শনাক্ত করেছেন। তিনি চিহ্নিত মাদক কারবারি। তার বিরুদ্ধে ১০টি মামলা রয়েছে। তবে অপরজনের পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি।

আশুলিয়া: আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ এক ডাকাত নিহত হয়েছেন। এসময় ঘটনাস্থল থেকে দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

মঙ্গলবার ভোর রাতে টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কের মরাগাঙ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তবে নিহতের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।

আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রুহুল আমিন জানান, ভোর রাতে একদল ডাকাত মহাসড়কে ডাকাতির চেষ্টাকালে টহল পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এসময় পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলিও ছোড়ে তারা। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক ডাকাত গুরুতর আহত হন এবং তার সঙ্গীরা পালিয়ে যান। পরে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

চুয়াডাঙ্গায়: জেলায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ তানজিল হোসেন (৩০) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন।

পুলিশের দাবি, নিহত তাজজিল শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় পুলিশের ৩ সদস্য আহত হয়েছেন।

চুয়াডাঙ্গা শহরতলির সাতগাড়ী এলাকার মাঠে মঙ্গলবার দিনগত রাতে এ ঘটনা ঘটে। নিহত তানজিল হোসেন জেলা শহরের দৌলাতদিয়াড় গ্রামের মৃত রমজান আলীর ছেলে।

ঘটনাস্থল থেকে একটি ওয়ান শুটারগান, চার রাউন্ড গুলি ও এক বস্তা ফেনসিডিল উদ্ধার করেছে পুলিশ।

চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি দেলোয়ার হোসেন খান জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর পেয়ে রাত আড়াইটার দিকে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছানো মাত্র মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশের ওপর গুলিবর্ষণ করে। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এক পর্যায়ে মাদকব্যবসায়ীরা পিছু হটলে ঘটনাস্থল থেকে তানজিলের গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

লাশ উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় চুয়াডাঙ্গা সদর থানার এসআই রবিউল ইসলাম ও কনস্টেবল আব্দুস সবুর আহত হয়েছেন।
নিহত তানজিল জেলার একজন শীর্ষ মাদকব্যবসায়ী। তার নামে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় ১২টি মামলা রয়েছে বলে জানান ওসি।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/০৯৫৭ঘ.)