রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পেয়ে দেশ ছাড়লেন শীর্ষ সন্ত্রাসী জোসেফ

রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পেয়ে দেশ ছাড়লেন শীর্ষ সন্ত্রাসী জোসেফ

ঢাকা, ৩০ মে (জাস্ট নিউজ) : যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী তোফায়েল আহমেদ ওরফে জোসেফ রাষ্ট্রপতির ক্ষমায় মুক্তি পেয়েছেন। কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে গত রোববার তার সাজা মওকুফ করা হয়। ছাড়া পেয়েই গোপনে দেশ ছেড়েছেন তিনি।

কারা সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের জুন মাসে জোসেফের মা রেনুজা বেগম ছেলের সাজা মওকুফের জন্য আবেদন করেন। আইন মন্ত্রণালয় সাজা মওকুফের পক্ষে মতামত দেয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও ইতিবাচক মতামত পাঠানো হয়। এরপর প্রায় দুই বছর বিষয়টি নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা শোনা যায়নি। জোসেফ দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর তাকে ক্ষমা করার বিষয়টি জানাজানি হয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, কারাবিধির ৫৬৯ ধারা অনুসারে কোনো বন্দী তার সাজার মেয়াদের দুই-তৃতীয়াংশ খাটলে সেই বন্দীর বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ না থাকে, তবে সরকার চাইলে বিশেষ সুবিধায় তাকে মুক্তি দিতে পারে। সে অনুযায়ী জোসেফের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতি তার সাজা মওকুফ করে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দিয়েছেন। এমিরেটসের একটি ফ্লাইটে জোসেফ মালয়েশিয়ায় গেছেন।

জোসেফকে কেন মুক্তি দেওয়া হলো, তা জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, নিয়মনীতি মেনেই তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। চার দিন আগে তার সাজা মওকুফের পরই তিনি বিদেশে গেছেন। জোসেফ ২০ বছর সাজা খেটেছেন।

অবশ্য কোনো জটিল রোগ ছাড়াই ২০১৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৭ সালের ৮ মে পর্যন্ত টানা ২০ মাস কারাগারে না থেকে হাসপাতালে ছিলেন জোসেফ। ১৯৯৬ সালে মোহাম্মদপুরের ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান হত্যা মামলার আসামি ছিলেন তিনি। এ মামলায় তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। এই রায় বহাল রাখেন হাইকোর্ট। পরে আপিল বিভাগ সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।

নব্বইয়ের দশকে মোহাম্মদপুর এলাকায় ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন জোসেফ। তখন আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা ‘সেভেন স্টার’ গ্রুপে যোগ দেন তিনি। রাজধানীতে তখন ‘সেভেন স্টার’ গ্রুপ ও ‘ফাইভ স্টার’ গ্রুপ দাপিয়ে বেড়াত।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের চিকিৎসক বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস বুধবার গণমাধ্যমকে বলেন, জোসেফ চিকিৎসার জন্য কারাগারের বাইরে হাসপাতালে ছিলেন। যেহেতু তার সাজা মওকুফ হয়েছে, সেহেতু আর কারাগারে আসার দরকার হয়নি।

জোসেফ ২০ বছর আগে গ্রেপ্তার হওয়ার সময় তার নামে ঢাকার বিভিন্ন থানায় চাঁদাবাজি, খুন, অবৈধ অস্ত্র বহনের অভিযোগে অন্তত ১১টি মামলা ছিল। এর মধ্যে মোস্তাফিজুর রহমান হত্যা মামলা ছাড়া বাকিগুলোর নিষ্পত্তি হয়েছিল আগেই। সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে জোসেফের বড় ভাই হারিস আহমেদ নিজেকে মোহাম্মদপুর এলাকায় জাতীয় পার্টির নেতা হিসেবে পরিচয় দিতেন। এরশাদ সরকারের পতনের পর তিনি নিজের পরিচয় দিতে শুরু করেন মোহাম্মদপুর থানা যুবলীগের নেতা হিসেবে।

ঢাকার ৪৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কমিশনার পদে নির্বাচনও করেছিলেন তিনি। জোসেফও এক সময় নিজেকে ছাত্রলীগের মোহাম্মদপুর থানার নেতা হিসেবে দাবি করতেন। তবে সংগঠনের কোনো পদে তিনি ছিলেন না।

(জাস্ট নিউজ/একে/২৩৫৮ঘ.)