এনআইডি পাচ্ছে না এক কোটি নতুন ভোটার

এনআইডি পাচ্ছে না এক কোটি নতুন ভোটার

ঢাকা, ২১ জুন (জাস্ট নিউজ) : জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নিয়ে ভোগান্তি শেষ হচ্ছে না নাগরিকদের। আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে এনআইডি পাচ্ছেন না দেশের এক কোটি নতুন ভোটার। ফলে ব্যাংক হিসাব, মোবাইল ফোনের সিম নিবন্ধনসহ বিভিন্ন নাগরিক সেবা নিতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তারা। এ ছাড়াও স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোর মতো সংসদ নির্বাচনেও এনআইডি ছাড়াই তাদের ভোট দিতে হবে। অন্য দিকে সঠিকভাবে এনআইডি তৈরিতে ব্যর্থ হওয়ায় স্মার্ট টেকনোলজিস বিডির সঙ্গে চুক্তি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, ফেব্রুয়ারি থেকে এক কোটি নতুন ভোটারকে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। কিন্তু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান স্মার্ট টেকনোলজিস বিডি সঠিকভাবে লেমিনেটেড জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরিতে ব্যর্থ হওয়ায় ইসি প্রতিশ্রুতি রাখতে পারছে না। এ কারণে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিতে বলেছে ইসির লেমিনেটেড কার্ড পর্যালোচনা কমিটি। কমিশন অনুমোদন দিলে লিখিতভাবে তাদের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করা হবে। ২০১৭ সালের নভেম্বরে এ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রাথমিকভাবে ৯৩ লাখ লেমিনেটেড জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির জন্য চুক্তি করে ইসি।

নাদিরা পারভীন রংপুর মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রী। ভোটার হয়েছেন ২০১৫ সালে। এখনো জাতীয় পরিচয়পত্র পাননি। নির্বাচন কমিশনের থানা অফিস থেকে বলা হয়েছে, নতুন ভোটারদের স্মার্টকার্ড দেয়া হবে। পরে বলা হয়, স্মার্টকার্ড না হলেও লেমিনেটেড কার্ড দেয়া হবে। সেই আশায় আছেন তিনি। কিন্তু বর্তমানে জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া অনেক সেবা নিতে পারছেন না তিনি। কোনো ব্যাংক হিসাবও খুলতে পারছেন না এ শিার্থী। বাবার জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে একটি মোবাইল ফোন সিম কিনে ব্যবহার করছেন।

চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি কমিশন সভা শেষে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে ব্রিফিংকালে কমিশনের সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ২০১২ সালে যারা ভোটার হয়েছেন এবং এখনো কোনো জাতীয় পরিচয়পত্র পাননি, ফেব্রুয়ারির ১ তারিখ থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তাদের লেমিনেটেড জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়া হবে। ২০১২ সালের পরে নিবন্ধিত নতুন এসব ভোটারকে স্মার্টকার্ড দেয়ার ল্য থাকলেও তা প্রস্তুত করা নিয়ে জটিলতায় একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে স্মার্টকার্ড দিচ্ছি না। এ জন্য কমিশন সভায় নতুন ভোটারদের লেমিনেটেড জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি কার্ড) দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, লেমিনেটেড জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির জন্য স্মার্ট টেকনোলজিস বিডি লিমিটেডের সঙ্গে ৮ কোটি ৯৬ লাখ ২৮ হাজার ৪০০ টাকার চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী ফেব্রুয়ারি থেকে লেমিনেটেড কার্ড ইসির কাছে সরবরাহ করার কথা প্রতিষ্ঠানটির। কিন্তু ওই প্রতিষ্ঠানের সরবরাহকৃত কার্ড খুবই নিম্নমানের। কার্ড তৈরির কাগজে ময়লা দাগ পাওয়া যায়। প্রিন্টের মানও খারাপ। ইসির অভ্যন্তরীণ তদন্তে কার্ড প্রিন্টে প্রতিষ্ঠানটির খামখেয়ালিপনার প্রমাণ মিলেছে। এ কারণে ইসি তাদের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করতে যাচ্ছে।

ইসি কর্মকর্তারা জানতে পেরেছেন, প্রতিষ্ঠানটি কাজ পাওয়ার পর অনেক কম্পিউটারের দোকানে সাব কন্ট্রাক্টে তা ভাগ করে দেয়। এমনকি রাজধানীর কয়েকটি বস্তিতে এ কার্ড ছেঁড়া-ফাটা অবস্থায় পাওয়া গেছে।

সূত্র জানায়, নতুন ভোটারদের হাতেই একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটে জয়-পরাজয় নির্ভর করবে। অথচ এমন কোটি নাগরিকের হাতে জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়ার বিষয়টি ছয় বছর ধরে ঝুলে আছে। এ নিয়ে দুর্ভোগে পড়ছেন নাগরিকেরা। বিষয়টি মাথায় নিয়ে লেমিনেটেড কার্ড দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল ইসি।

সবশেষ কাজী রকিব উদ্দীনের নেতৃত্বাধীন ইসি স্মার্টকার্ড দেয়ার কথা বললেও লেমিনেটেড এনআইডিও ভোটারদের হাতে দিতে পারেনি। তবে কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসি দায়িত্ব নেয়ার পর ১২তম কমিশন সভা থেকে স্মার্টকার্ড বিতরণের কর্মসূচির মধ্যেও দ্রুত লেমিনেটেড এনআইডি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু স্মার্টকার্ড দেয়া বিলম্বিত হওয়ায় ২০১২ সালের পর ভোটার হয়েছে এমন এক কোটি ৪৩ লাখ ভোটারকে লেমিনেটেড জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এর পাশাপাশি পর্যায়ক্রমে তাদের স্মার্টকার্ডও দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

২০০৮ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়নের পর নবম সংসদে ভোটার ছিল ৮ কোটি ১০ লাখের বেশি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচনের সময় ভোটার ছিল ৯ কোটি ১৯ লাখের বেশি। বর্তমানে ভোটার ১০ কোটি ৪৩ লাখের বেশি। চলতি বছরের শেষ দিকে একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন এসব ভোটার।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১১১১ঘ.)