গাজীপুর সিটি নির্বাচন

অনেক কেন্দ্রে অস্বাভাবিক ভোট, ব্যবধানও বেশি

অনেক কেন্দ্রে অস্বাভাবিক ভোট, ব্যবধানও বেশি

ঢাকা, ২৯ জুন (জাস্ট নিউজ) : খুলনার মতো গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও অনেক কেন্দ্রে অস্বাভাবিক ভোট পড়েছে। দুটি কেন্দ্রে ৯০ শতাংশের বেশি ও ২৮টি কেন্দ্রে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ ভোট পড়েছে। এসব কেন্দ্রে মেয়র পদে নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীকের ভোটের ব্যবধানও অস্বাভাবিক।

নির্বাচন কমিশন ঘোষিত ফলাফলে দেখা যায়, ৯০-এর ওপরে পড়া বিপ্রবর্থা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা পেয়েছে ১ হাজার ৮২৭ ভোট। ধানের শীষ পেয়েছে ৪৭৬ ভোট। আর বসুরা মক্তব মাদ্রাসা কেন্দ্রে নৌকা পেয়েছে ২ হাজার ৩২৬ ভোট। এখানে ধানের শীষ পেয়েছে ৫৪৭ ভোট।

খুলনা সিটি নির্বাচনেও তিনটি কেন্দ্রে মেয়র পদে যথাক্রমে ৯১ দশমিক ৩৮ শতাংশ, ৯৭ দশমিক ৬০ শতাংশ ও ৯৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ ভোট পড়েছিল। তখন নির্বাচন কমিশন এই অস্বাভাবিক ভোট পড়ার কারণ অনুসন্ধান করেছিল। কিন্তু অনুসন্ধানের ফলাফল এখনো প্রকাশ করেনি।

গত মঙ্গলবার গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়। পরের দিন দুপুর সাড়ে ১২টায় রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মণ্ডল মেয়র পদে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমকে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করেন। তিনি পেয়েছেন ৪ লাখ ১০ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে হাসান উদ্দিন সরকার পেয়েছেন ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬১১ ভোট।

নির্বাচন কমিশনের ফলাফলে দেখা যায়, বিজয়ী জাহাঙ্গীর আলম ও পরাজিত হাসান উদ্দিন সরকার নিজ নিজ কেন্দ্রে জয়ী হয়েছেন। হাসান সরকার টঙ্গীর বশির উদ্দিন উদয়ন একাডেমি কেন্দ্রে ভোট দেন। তিনি ভোট পান ৭৫৫টি, আর জাহাঙ্গীর পান ৪৮৯ ভোট। জাহাঙ্গীর আলম কানাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট দেন। ওই কেন্দ্রে তিনি ১ হাজার ৪৭৮ ভোট ও হাসান সরকার ১৭৭ ভোট পান। আর বিদায়ী মেয়র এম এ মান্নান সালনা ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন। ওই কেন্দ্রে জাহাঙ্গীর আলম ১ হাজার ৩০ ভোট এবং হাসান সরকার ৫১৯ ভোট পান।

ফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গাজীপুর সিটি নির্বাচনে গড়ে ৪১৬টি কেন্দ্রে ৫৮ শতাংশ ভোট পড়েছে। ইভিএমে ভোট নেওয়া ছয় কেন্দ্রে গড়ে ৫০ শতাংশ ভোট পড়ে। আবার দুটি কেন্দ্রে ৩০ শতাংশের কম ভোট পড়েছে। ৩০ থেকে ৪০ শতাংশের মধ্যে ভোট পড়েছে ৪০টি কেন্দ্রে। এই ৪০টি কেন্দ্রে নৌকা পেয়েছে মোট ২০ হাজার ৭৬৮ ভোট এবং ধানের শীষ পেয়েছে ১৪ হাজার ২২৫ ভোট। কিন্তু ভোট দেওয়ার পরিমাণ যেখানে বেড়েছে, সেখানে ভোটের ব্যবধানও অনেক বেড়েছে। যেমন: ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ ভোট পড়েছে ২৮টি কেন্দ্রে। এসব কেন্দ্রে নৌকা মোট ভোট পেয়েছে ৩৩ হাজার ৫৫৯ ভোট এবং ধানের শীষ পেয়েছে ১৫ হাজার ১০৩ ভোট।

অনেক কেন্দ্রে অস্বাভাবিক ভোট পড়ার বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মণ্ডল সাংবাদিকদের বলেন, দু-একটি কেন্দ্রে ৯০ শতাংশের ওপরে ভোট পড়তেই পারে। এটা অস্বাভাবিক না। বিশেষ করে কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেশি হলে ভোটারদের উপস্থিতি বেড়ে যায়। আর ইভিএমে ভোট নেওয়া ছয় কেন্দ্রে গড়ে ৫০ শতাংশ ভোট পড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ওই সব কেন্দ্রে হয়তো ভোটাররা কম গেছেন।

অবশ্য বেশ কিছু কেন্দ্রে অস্বাভাবিক ভোট পড়া এবং তা বিজয়ী প্রার্থীর পক্ষে যাওয়ার বিষয়টি স্বাভাবিক নয় বলে মনে করেন সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এটা উন্মোচন করার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত যে পদ্ধতি, তাতে বিজয়ী প্রার্থীর পক্ষে যদি উচ্চ হারে ভোট পড়ে এবং নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর ভোট যদি নিম্ন হারে কমে; তাহলে বোঝা যায় বিজয়ীর পক্ষে ব্যালটে সিল মারা হয়েছে। এখানেও মনে হয় তা-ই হয়েছে।

৮০ শতাংশের বেশি ভোট
ইছালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৮৭ দশমিক ০৮ শতাংশ, শুকুন্দিবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৮৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ, ইছর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৮৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ, মজলিসপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৮৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ, মীরেরগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৮৪ দশমিক ৪৬ শতাংশ, খালিসাবর্থা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৮৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ, রোভার পল্লী উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ৮৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ, কোনাবাড়ী এম এ কুদ্দুস উচ্চবিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ-২ কেন্দ্রে ৮৫ শতাংশ, গুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৮২ দশমিক ৮১ শতাংশ, ধূমকেতু প্রি-ক্যাডেট অ্যান্ড হাইস্কুল-১ কেন্দ্রে ৮০ দশমিক ১৩ শতাংশ, শিলমুন আবদুল হাকিম মাস্টার উচ্চবিদ্যালয়-১ কেন্দ্রে ৮৩ শতাংশ, গোপালপুর কিশোর বিদ্যানিকেতন কেন্দ্রে ৮১ দশমিক ২৭ শতাংশ, নন্দীবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৮০ দশমিক ৬৭ শতাংশ, বিন্দান উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ৮৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ, বাড়ইবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৮২ দশমিক ৮১ শতাংশ, উধুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৮৩ দশমিক ৮১ শতাংশ, পূবাইল উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ৮৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ, মেঘডুবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৮৬ শতাংশ, খাইলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-১ কেন্দ্রে ৮১ দশমিক ৫৮ শতাংশ, খাইলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-২ কেন্দ্রে ৮১ দশমিক ৭৪ শতাংশ, ল্যাঙ্গুয়েজ উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ৮২ দশমিক ২৪ শতাংশ এবং হাতিমারা হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ-২ কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ৮৩ দশমিক ২৮ শতাংশ। সুত্র: প্রথম আলো।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১২৩৯ঘ.)