১০ম দিনে গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে পড়েছে ৭ জন

অনশনে অসুস্থ শিক্ষকেরা আর চিকিৎসা নেবেন না

অনশনে অসুস্থ শিক্ষকেরা আর চিকিৎসা নেবেন না

ঢাকা, ৪ জুলাই (জাস্ট নিউজ) : স্বীকৃতি প্রাপ্ত সকল বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির দাবিতে গত ১০ দিনের আমরণ অনশনরত শিক্ষকরা এখন থেকে আর স্যালাইন না নেয়া এবং হাসপাতালে ভর্তি না হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার বুধবার বেলা ৪টায় গণমাধ্যমের সাথে আলাপকালে সংগঠনের ও অনশনরত শিক্ষকদের এ ধরনের সিদ্ধান্তের কথা জানান।

তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, কয়েক শ’ শিক্ষক গত ১০দিন খোলা আকাশের নীচে অনশন করছেন, অথচ সরকারের বা মন্ত্রণালয়ের কোনো দায়ভার নেই এ শিক্ষকদের প্রতি। এ সব শিক্ষকদের শিক্ষকতা ও স্কুল পরিচালনার স্বীকৃতি দিয়েছেন সরকার। সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা বোর্ড। অথচ তারা এখন নিরব দর্শকের ভূমিকায়। এ অবস্থায় আমরা শিক্ষকরা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনেই মৃত্যু মুখে নিজেদের সপে দেয়া ছাড়া বিকল্প কিছুই আর থাকল না।

ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার অভিযোগ করে বলেন, গতকাল (গতপরশু) আমাদের প্রতিনিধি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের সাথে সাক্ষাৎ করে এসেছেন। অনশনরত শিক্ষকদের সাথে আলোচনার কথা বলেছিলেন। বুধবার সকালেই এ ব্যাপারে মন্ত্রী-সচিবের সাথে কথা বলে আমাদের জানানোর কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত মন্ত্রণালয় বা উক্ত কর্মকর্তার পক্ষ থেকে কোনো সাড়া বা জবাব পাওয়া যায় নি।

অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী আরো জানান, প্রধানমন্ত্রীর অফিসে গত ২ জুলাই অনশনরত শিক্ষকদের পক্ষ থেকে দাবী মেনে নেয়ার জন্য (যেহেতু বাজেটে বরার্দ কম তাই) বিকল্প দু’টি প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। ঐ প্রস্তাবনাও দেয়া হয়েছিল, তাদের অনুরোধেই। কিন্তু গত তিনদিনেও এ ব্যাপারে কোনো সাড়া মিলে নি। শুনেছি, আমাদের প্রস্তাবনা প্রধানমন্ত্রীর বিবেচনার জন্য উপস্থাপনা করা হয়েছে। আর কিছুই জানি না।

নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার বলেন, সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বুধবার সকালে (৯ টার পর) আমার সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা অনশনস্থলেই বৈঠক করি এবং সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এখন থেকে আমরা অনশনরত শিক্ষকরা কোনো ধরনের চিকিৎসা নেব না। অসুস্থ হলেও হাসপাতালে যাব না। শিক্ষকদের অনেকেই অনশনস্থলেও স্যালাইন নিতে রাজী হচ্ছে না গত কয়েকদিন থেকেই।

অনশনরত শিক্ষকদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, তারা বলেন, গত ১০/১২ বা ১৫ বছর ধরে বিনা বেতনে পাঠদান করে আসছি। কিন্তু এখন স্বীকৃতির পরীক্ষা দিতে হবে। যখন আমাদের অনেকেরই ভিন্ন চাকুরিতে যোগ দেয়ার বয়স ও শেষ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় ফুটপাতেই মৃত্যুই শ্রেয়।

গত ১০দিনে মোট দুই শতাধিক অনশনরত শিক্ষক-কর্মচারী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, তাদের সবারই স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত গুরুত্বর অসুস্থ ৪ জন হাসপাতালে এখনও চিকিৎসাধীন রয়েছেন। গত ২৫ জুন থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের বিপরীত দিকের ফুটপাতে আমরন অনশন কর্মসূচি চলছে। আষাড়ের রোদ-বৃষ্টি-ঝড় উপক্ষো করে দিনের পর দিন লাগাতার আমরন অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন এ সব শিক্ষকরা। তাদের দাবী শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা বোর্ড থেকে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে একযোগে এমপিওভূক্ত করতে হবে।

অনশনকারীরা জানান, বর্তমানে নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে পাঁচ হাজার ২৪২টি। এছাড়া সরকার নতুনভাবে ১৩১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে স্বীকৃতি দিয়েছে। তাদের দাবি, সারা দেশে পাঁচ হাজারের বেশি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে ২০ লাখের বেশি শিক্ষার্থীদের বিনা বেতনে পাঠদান করে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অনেকের চাকরির মেয়াদ ও শেষ হয়ে গেছে। এখন তাদের জীবন পরিচালনার কোন পথ নেই। মানবিক বিবেচনায় তাদের এমপিওভূক্ত করা হোক।

(জাস্ট নিউজ/একে/২০৩৪ঘ.)