নাটোরে হত্যা মামলায় ৫ জনের ফাঁসি

নাটোরে হত্যা মামলায় ৫ জনের ফাঁসি

নাটোর, ১৯ আগস্ট (জাস্ট নিউজ) : নাটোরের সিংড়া উপজেলার বিয়াস গ্রামের কৃষক আবদুল কাদেরকে অপহরণ করে হত্যার দায়ে পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড ও দুজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। নাটোরের অতিরিক্ত দায়রা জজ মোহাম্মদ সাইফুর রহমান সিদ্দিক এ আদেশ দেন।

রবিবার দুপুরে প্রকাশ্য আদালতে চাঞ্চল্যকর আবদুল কাদের হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। বিচারক রায়ের ৮ পৃষ্ঠার সারাংশ পড়ে শোনান। রায়ে সিংড়া উপজেলার বিয়াস গ্রামের হাফিজুর রহমান ওরফে হাফিন, খলিলুর মো. বুলু (পলাতক), খলিলুর রহমান ওরফে খলিল (পলাতক), মজিবর রহান ওরফে মজি, গুরুদাসপুর উপজেলার যোগেন্দ্রনগর গ্রামের মনির হোসেনকে (পলাতক) মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। একই সঙ্গে আদালত আসামি গুরুদাসপুর উপজেলার যোগেন্দ্র নগর গ্রামের নজরুল ইসলাম ওরফে দুদু ও আবদুল হাকিমকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১ লাখ ১ টাকা অর্থদণ্ডাদেশ দেন। অর্থদণ্ড পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে আরও ৬ মাস ১ দিন কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। মামলার ওপর দুই আসামি আসলাম ওরফে জবান ও নজরুল ইসলাম মৃত্যুবরণ করায় তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারা গ্রেপ্তার হওয়ামাত্র রায় কার্যকর হবে। হাজতবাস দণ্ড থেকে বাদ যাবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। 

রায় ঘোষণার আগে আদালত উল্লেখ করেন, সর্বহারাদের চাঁদা দাবির কথা প্রকাশ করে দেওয়ায় আসামিরা একজন সাধারণ কৃষককে সকালবেলা নিজ বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে প্রকাশ্যে ঠান্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করেছেন। এটা একটা পৈশাচিক ঘটনা। ঘটনার সঙ্গে আসামিরা সবাই জড়িত ছিলেন। তাদের মধ্যে আসামি মজিবর রহমান বিচারিক হাকিমের কাছে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দিও দিয়েছেন।

মামলার এজাহারের সংক্ষিপ্ত বিবরণ সূত্রে জানা যায়, ২০০৪ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি সকাল ৬টায় আসামিরা সিংড়ার বিয়াস গ্রামের কৃষক আবদুল কাদেরের বাড়িতে আসেন। তারা পরিবারের সদস্যদের সামনে থেকে তাঁকে তুলে নিয়ে যান। বিয়াস বাজারে নিয়ে গিয়ে তাকে সবার সামনে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় তার স্ত্রী জয়নব বেওয়া বাদী হয়ে ওই দিন সিংড়া থানায় হত্যা মামলা করেন। থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নজরুল ইসলাম মামলাটি তদন্ত করে ওই বছরের ২০ সেপ্টেম্বর আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলায় ১২ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দেন।

মামলার বাদী জানান, হত্যাকারীরা সবাই সর্বহারা দলের সদস্য। তারা স্থানীয় একটি হাসপাতালের নির্মাণকাজের ঠিকাদারের কাছে চাঁদা দাবি করেছিল, এমন কথা প্রচার করার অভিযোগ তুলেছিল তার স্বামীর বিরুদ্ধে। এর দায়ে তাকে হত্যা করা হয় বলে মজিবর রহমান নামের এক আসামি ১৬৪ ধারায় স্বীকারও করেছে। তিনি ন্যায়বিচার পেয়েছেন বলে জানান।

আসামিপক্ষের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আলী আজগর জানান, একজন আসামির স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে সবাইকে দণ্ডিত করায় তার মক্কেলেরা ন্যায় বিচার পাননি বলে তিনি মনে করেন। দণ্ডিত ব্যক্তিরা উচ্চ আদালতে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন। সরকারপক্ষের আইনজীবী (এপিপি) মাসুদ হাসান জানান, আসামিরা হত্যার ঘটনায় পরস্পর জড়িত ছিলেন। সবাই দণ্ডিত হওয়ায় তিনি ও তার বাদী খুশি হয়েছেন।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১৫২৮ঘ.)