ঈদযাত্রা: বাস-ট্রেন-লঞ্চে নেই তিল ধারণের ঠাঁই

ঈদযাত্রা: বাস-ট্রেন-লঞ্চে নেই তিল ধারণের ঠাঁই

ঢাকা, ২১ আগস্ট (জাস্ট নিউজ) : রাত পোহালেই পবিত্র ঈদুল আজহা। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগ করে নিতে দলে দলে রাজধানী ছাড়ছে মানুষ। বাস, ট্রেন, লঞ্চ কোনোখানেই নেই তিল ধারণের ঠাঁই। যে যেভাবে পারছেন ফিরছেন বাড়ি।

ঈদে বাড়ি ফিরতে ট্রেন ভ্রমণ নিরাপদ হলেও সিডিউল বিপর্যয়ের কারণে ভোগান্তিতে রয়েছেন যাত্রীরা। রাজশাহী-ঢাকা, খুলনা-ঢাকা ও দিনাজপুর-ঢাকা রুটে ট্রেন চলাচলে সিডিউল বিপর্যয় চলছে। প্রতিটি ট্রেনই ছয় থেকে নয় ঘণ্টা পর্যন্ত বিলম্বে আসা-যাওয়া করছে। এতে করে উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চল থেকে ঢাকাগামী ট্রেনযাত্রীদের পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ। রেললাইনের পাশ ঘেষেই গরুর হাট, অতিরিক্ত যাত্রী ও ট্রেন ক্রসিংজনিত কারণেই সিডিউল বিপর্যয় হচ্ছে বলে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে।

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, ট্রেনে সিডিউল বিপর্যয়ের ফলে সোমবার সকাল থেকে বেশিরভাগ ট্রেন ছাড়তে কয়েক ঘণ্টা করে বিলম্ব হচ্ছে। যার ফলে রাজধানীর কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেলস্টেশনে যাত্রীদের তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। বেশিরভাগ ট্রেনই দেরিতে ছেড়েছে। এতে যাত্রী দুর্ভোগ চরমে ওঠে। ট্রেনের টিকিট না পেয়ে অনেক যাত্রী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছাদে, ইঞ্জিনের সামনে, দরজার হাতলে ঝুলে বাড়ির পথে রওনা দেন।

ট্রেনের সূচি অনুযায়ী, সকাল ৬টায় কমলাপুর থেকে দিনের প্রথম আন্তঃনগর ট্রেন ধূমকেতু এক্সপ্রেস রাজশাহীর উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটি ছেড়ে যায় এক ঘণ্টা দেরিতে, সকাল ৭টার পর। খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস সকাল ৬টা ২০ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও সেটি সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে স্টেশন ছাড়ে।

চিলাহাটির নীলসাগর এক্সপ্রেস সকাল ৮টায় কমলাপুর ছাড়ার কথা, তবে ট্রেনটি স্টেশনেই আসে বেলা ১০টা ৫ মিনিটে, ছেড়ে যায় ১০টা ৫৫ মিনিটে। বেলা ৯টার রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেন বেলা এগারোটা পর্যন্ত প্ল্যাটফর্মে আসেনি। দিনাজপুরের এক্সপ্রেস সকাল ১০টায় কমলাপুর ছাড়ার কথা থাকলেও সেটি পৌনে ১১টায় কমলাপুরে এসে বেলা ১১টায় স্টেশন ছেড়ে যায়।

লালমনিরহাট ঈদ স্পেশাল ট্রেন ছাড়ার কথা বেলা ৯টা ১৫মিনিটে। তবে বেলা ১১টা পর্যন্ত সেটি স্টেশনেই আসেনি। রেলওয়ে বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে ট্রেনটি ছাড়ার সম্ভাব্য সময় দিয়েছে। ঢাকা-চিলাহাটি রুটের নীলসাগর ট্রেনের কমলাপুর ছেড়ে যাওয়ার কথা সকাল ৮টায়। দুই ঘণ্টা ৫ মিনিট দেরি করে বেলা ১০টা ৫ মিনিটে ট্রেনটি কমলাপুরের প্ল্যাটফর্মে আসে। দীর্ঘসময় অপেক্ষায় থাকা যাত্রীরা ট্রেনে ওঠার জন্য হুড়োহুড়ি শুরু করেন।

এদিকে রেলস্টেশনের মতই নগরীর টার্মিনালগুলোতে রয়েছে ঘরমুখো মানুষের উপচে পড়া ভিড়। ভোগান্তি উপেক্ষা করে বাসে বাড়ি যাচ্ছেন তারা।

ভোরে সময়মতই ছেড়ে গেছে সবগুলো বাস। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিডিউল বিপর্যয়ে পড়ে বাসগুলো। ফেরি পারাপারে বিলম্বের কারণে ফিরতি বাস আসতে দেরি হওয়ায় ঢাকা থেকে বাস ছাড়তে দেরি হচ্ছে বলে জানিয়েছে কাউন্টার কর্তৃপক্ষ।

একই পরিস্থিতি ছিলো সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালেও। ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে লঞ্চগুলো ঢাকা ছাড়ছে।

মঙ্গলবার দুপুরের পর লঞ্চ ছাড়লেও সকাল থেকেই সদরঘাটে অবস্থান নেন লঞ্চযাত্রীরা। বিশেষ করে যারা কেবিন বুকিং দিতে পারেননি, তারা আগে থেকেই লঞ্চের ডেকে চাদর বিছানোর জায়গা খুঁজছেন।

রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় লঞ্চেই যাতায়াত করেন এ অঞ্চলের লাখো মানুষ। তাই অন্যান্য টার্মিনালের চেয়ে সদরঘাটে ভিড় একটু বেশি হয়। আজ ঈদযাত্রার শেষ দিনে মানুষের স্রোত ছিল চোখে পড়ার মতো। লঞ্চঘাটের দিকে জনস্রোত নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খাচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

ঢাকা নদীবন্দরে নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক জয়নুল আবেদিন বলেন, এবার মোট ৪১টি রুটে ২০৬টি লঞ্চ চলাচল করবে সদরঘাট থেকে। এবারের ঈদে ঘরমুখো মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে কয়েকটি স্তরে নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি), কোস্টগার্ড, র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব), আনসার বাহিনী, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) নিজস্ব ডুবুরি দল, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি) এবং নৌ-নিরাপত্তার ক্যাডেট দল কাজ করছে।

নৌ নিরাপত্তা বিভাগের পরিচালক আরো বলেন, ‘অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনের যাতে কোনোভাবে সাধারণ মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় না ভোগে, সেদিকে বিশেষ নজর রাখছি আমরা। কোনো লঞ্চ অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সদরঘাট টার্মিনাল থেকে সরাসরি বরিশাল ছাড়াও চাঁদপুর, হুলারহাট, পিরোজপুর, ভাণ্ডারিয়া, শরীয়তপুর, বরগুনা, ভোলা, চরফ্যাশন, দুমকী, আমতলীসহ বেশ কয়েকটি রুটে লঞ্চ চলাচল করে।

ঢাকা নদীবন্দর নৌযান পরিদর্শক দীনেশ কুমার সাহা জানান, এবার আবহাওয়ার বিষয়টি খুব গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় যেন দ্রুত নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত পাঠানো যায়।

(জাস্ট নিউজ/জেআর/১৪০০ঘ.)