আরপিও সংশোধনে ইসি’র তোড়জোড়

আরপিও সংশোধনে ইসি’র তোড়জোড়

ঢাকা, ২৫ আগসট (জাস্ট নিউজ) : গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ (আরপিও) সংশোধন নিয়ে ফের তোড়জোড় শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামীকাল রবিবার আরপিও সংশোধনের অগ্রগতি বিষয়ে আলোচনার জন্য সভা আহ্বান করা হয়েছে। সভায় আরপিও সংশোধনের খসড়া প্রস্তাব অনুমোদন হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আরপিও সংশোধন হবে না বলে কিছুদিন আগে জানিয়েছিলেন ইসি সচিব।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, আরপিওতে ডিজিটাল পদ্ধতিতে তথা ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণের বিধান যুক্তসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সংশোধন আসছে। দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির রাজনৈতিক দলের প্রধান থাকার বিষয়টি নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে বলে সূত্রের দাবি।

আরপিও সংশোধনের বিষয়ে ইসির আইন সংস্কার কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বলেন, আইন সংস্কার কমিটির প্রতিবেদন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে জমা দেয়া হয়েছে। আইন পরামর্শকও এ নিয়ে কাজ করেছেন। ইভিএমের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করাসহ কিছু বিষয় রয়েছে। আগামী রোববারের বৈঠকে আলোচনার জন্য বিষয়টি এজেন্ডাভুক্ত রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আরপিও সংশোধনের জন্য পর্যাপ্ত সময় আছে কিনা জানতে চাইলে কবিতা খানম বলেন, সংশোধনীর চিন্তা থেকেই বিষয়টি বৈঠকে তোলা হচ্ছে। আমি মনে করি, যে সময় হাতে রয়েছে তাতে আরপিও সংস্কার সম্ভব। সংস্কার না হওয়ারও কোনো কারণ দেখছি না। তবে সব সিদ্ধান্ত ইসির ওপর নির্ভর করছে। কমিশন যেভাবে সিদ্ধান্ত নেয় সেটাই বাস্তবায়ন হবে।

ইভিএম থাকার বিষয়টি জানালেও অন্যান্য সংশোধনীর প্রস্তাবনার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি। বলেন, কমিশনের কিছু পরামর্শ ছিল। আমরা সেগুলো বিবেচনায় নিয়ে এবং যুগের চাহিদার বিষয়টি চিন্তা করে সংশোধনী প্রস্তাব করেছি। ইসি সূত্রে জানা গেছে, জরুরি ভিত্তিতে দেড় লাখ ইভিএম কিনতে যাচ্ছে ইসি।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোট কেন্দ্রে এসব মেশিন ব্যবহার করা হতে পারে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৪৪ হাজার। মেশিনগুলো কেনার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন গত সপ্তাহে একটি প্রকল্প অনুমোদন করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে। ‘নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় অধিকতর স্বচ্ছতা আনার লক্ষ্যে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ক্রয়, সংরক্ষণ ও ব্যবহার’ শীর্ষক এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮২১ কোটি ৪০ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এর সিংহভাগই ব্যয় হবে ইভিএম কেনার খাতে। প্রতি ইউনিট ইভিএমের দাম পড়ছে প্রায় দুই লাখ টাকা। আগামীকাল রবিবার এ প্রকল্পের ওপর পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির) সভা অনুষ্ঠিত হবে।

এ ছাড়া ইভিএম সাধারণ মানুষের মধ্যে জনপ্রিয় করতে শিগগিরই ‘ইভিএম মেলা’র আয়োজন করতে যাচ্ছে কমিশন। ইসি কর্মকর্তারা জানান, এবার একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ইলেট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম), অনলাইন মনোনয়নপত্র জমা, জামানত বাড়ানো, স্বতন্ত্র প্রার্থিতা সহজীকরণসহ অন্তত ৩৫টি প্রস্তাব নিয়ে বসেছিল ইসির আইন সংস্কার কমিটি।

তবে আগামী রবিবার ইসিতে যে সংস্কার প্রস্তাব উঠবে সেখানে এই ৩৫টি প্রস্তাবনার মধ্যে কিছু কমতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রার্থিতা সহজীকরণের যে উদ্যোগ ছিল সেটা হচ্ছে না বলে জানা গেছে। এটির ক্ষেত্রে বিদ্যমান ব্যবস্থাই বহাল রাখার প্রস্তাব হচ্ছে। এ ছাড়া ফেসবুক, টুইটারসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করার চিন্তা করলেও ইসি সেখান থেকে সরে আসছে। তবে, নির্বাচনী আচরণবিধিতে সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষেত্রে একটি গাইডলাইন থাকবে বলে জানা গেছে।

এদিকে কমিশন সভার বিবিধ এজেন্ডায় রাজনৈতিক দলের গঠনতন্ত্র নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে জানা গেছে। সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদের ১ (ঘ) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি ‘নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হইয়া অন্যূন দুই বৎসরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তাঁহার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বৎসরকাল অতিবাহিত না হইয়া থাকে’ তবে তিনি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য অযোগ্য বিবেচিত হবেন। কিন্তু ৭২ এর আরপিওতে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃত্বের ক্ষেত্রে দুর্নীতিবাজদের রাখা না রাখার ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট কোনো বক্তব্য নেই। কোনো রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে থাকতে হলে তাঁকে সংবিধান অনুযায়ী যোগ্য বিবেচিত হতে হবে- এমন সংশোধনী আনা হতে পারে আরপিওতে। এজন্য কোনো রাজনৈতিক দলে দুর্নীতির মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত এবং যিনি সংসদ সদস্য পদে নির্বাচিত হওয়ার অযোগ্য, তিনি কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে থাকতে পারবেন না। যদি তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে থাকেন তবে সেই নেতৃত্ব বাতিল বলে বিবেচিত হবে।

উল্লেখ্য, গত বছরের জুলাইয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপে ইসি ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে আরপিওসহ প্রয়োজনীয় নির্বাচনি আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়ার কথা বলেছিল। সে অনুযায়ী কমিশনার কবিতা খানমের নেতৃত্বে গঠিত ইসির আইন সংস্কার কমিটি আরপিও সংশোধনের একটি প্রস্তাবনা তৈরি করে গত ১২ই এপ্রিল কমিশন সভায় উত্থাপন করে। পাশাপাশি সংশোধনী কার্যক্রমে সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব একেএম মোহাম্মদ হোসেনকে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এই পরামর্শক সমপ্রতি ইসির কাছে তার সংস্কার প্রস্তাব জমা দিয়েছেন। তবে কমিশন তা অনুমোদন না করে কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়ে ফেরত পাঠায়। এরপর আরপিও সংশোধনীর বিষয়টি আড়ালে চলে যায়।

পরবর্তীতে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ জানান, একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে আরপিও সংশোধন হচ্ছে না। অবশ্য, রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মতিতে জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হলে আরপিও সংশোধনীর প্রয়োজন পড়বে বলে উল্লেখ করেছিলেন তিনি। ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য সময় কম হলেও কমিশন চাইলে এই সময়ের মধ্যেও আরপিও সংশোধন সম্ভব। আগামী ৯ই সেপ্টেম্বর সংসদ অধিবেশন শুরুর আগে দুই সপ্তাহের বেশি সময় পাওয়া যাবে। ফলে এর মধ্যেই কমিশনে সংশোধন প্রস্তাব অনুমোদন, আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং ও মন্ত্রিসভায় অনুমোদন করানো সম্ভব। সংসদে বিল ওঠার পর এক সপ্তাহের মধ্যেই তা আইন আকারে পাস করা সম্ভব।

প্রসঙ্গত, বিএনপির পক্ষ থেকে এর আগে অভিযোগ করা হয়েছিলো খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে নেতৃত্ব থেকে সরাতে আরপিও সংশোধনের চক্রান্ত চলছে। তখনই ইসির পক্ষ থেকে বলা হয়, আরপিও সংশোধন হবে না। সুত্র: মানবজমিন

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১০০৩ঘ.)