বিরোধিতার মধ্যেই জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম অনুমোদন ইসির

বিরোধিতার মধ্যেই জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম অনুমোদন ইসির

ঢাকা, ৩০ আগস্ট (জাস্ট নিউজ) : খোদ কমিশনে বিরোধিতা থাকলেও আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের সুযোগ রেখে আরপিও’র সংশোধী অনুমোদন করেছে নির্বাচন কমিশন।

বৃহস্পতিবার কমিশন বৈঠকে চার কমিশনার ইভিএম ব্যবহারে একমত হন। তবে এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে সভা বর্জন ও নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছেন অপর কমিশনার মাহবুব তালুকদার।

কমিশন সভা শেষে বিকালে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা আরপিও’র সংশোধনী চূড়ান্তের কথা জানান। তিনি বলেন, এ বিষয়ে চারজন কমিশনার একমত হয়েছেন। একজন কমিশনার এই সিদ্ধান্তে একমত হননি।

কে এম নুরুল হুদা বলেন, মাহবুল তালুকদারের নোট অব ডিসেন্ট সম্পের্ক ওনার ভিন্নমত থাকতে পারে এটা গণতান্ত্রিক পদ্ধতি। তিনি বলেন, সংশোধনী জাতীয় সংসদে পাস হলে জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সুযোগ থাকবে।

বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে এই বৈঠক শুরু হয়। তবে বৈঠক শুরুর আধা ঘণ্টার মধ্যে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার সভা বর্জন করেন। তিনি ইভিএম কেনার বিষয়ে আপত্তি (নোট অব ডিসেন্ট) জানান। সিইসির ঘোষণার পর গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মাহবুব তালুকদার আবার বলেন, ‘আমি এটার (ইভিএম ব্যবহারের) বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছি। আমি মোটেই চাই না আগামী সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের জন্য আরপিও সংশোধন হোক। এখন ওনারা বসে বসে আরপিও সংশোধন করতে থাকবেন আর আমি সেখানে নোট অব ডিসেন্ট দেওয়ার পর মূর্তির মতো বসে থাকব, এটা আমার কাছে যথাযথ মনে হয়নি।’

মাহবুব তালুকদার আরো বলেন, ‘ওনারা ওনাদের কাজ করুন আমি আমার কাজ করি।’

ইভিএম নিয়ে খোদ নির্বাচন কমিশনের মধ্যে এই মতভিন্নতা যেমন রয়েছে তেমনি রাজনৈতিক অঙ্গনেও এ নিয়ে বিতর্ক চরমে। আর এই রাজনৈতিক বিতর্কের মধ্যেই আরপিও সংশোধনের থেমে যাওয়া উদ্যোগ হঠাৎ করে সচল করে ইসি। আরপিও সংশোধনী প্রস্তাব চূড়ান্ত করতে আজ বৈঠকে বসে।

জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার মাস দুয়েক আগে ইভিএমের জন্য আরপিও সংশোধনে ইসির এই তোড়জোড় নিয়ে রাজনৈতিক মহলে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। বড় পরিসরে ব্যবহার করার মতো সক্ষমতা ও দক্ষ জনবল তৈরি না করেই দেড় লাখ ইভিএম কেনা এবং আইন সংশোধনের উদ্যোগ শুধু কেনাকাটার জন্য কি না, সে প্রশ্নও সামনে এসেছে।

বিএনপি ইসির এই উদ্যোগে সমালোচনায় মুখর হয়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকায় আজ বলেছেন, আওয়ামী লীগ এখন জনগণের ওপর আস্থা হারিয়ে যন্ত্রের ওপর ভর করছে। জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা সরকার ও নির্বাচন কমিশনের একটি অশুভ পার্টনারশিপ।

বৃহস্পতিবার বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলন শেষে ম্যাট বিশপ নামের একজন ইভিএম বিশেষজ্ঞের সঙ্গে স্কাইপে কথা বলেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ। এই বিশেষজ্ঞ ইভিএমের বিভিন্ন ত্রুটি, আস্থার সংকট ও ঝুঁকির বিষয় তুলে ধরেন।

মির্জা আলমগীর অভিযোগ করেন, নির্বাচন কমিশন ও সরকার জনমতকে উপেক্ষা করে জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আরপিও সংশোধনের মাধ্যমে ভোট জালিয়াতি করতে নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের অপকৌশল হাতে নেওয়া হয়েছে।

গতকাল বুধবার রাজধানীতে এক সভায় বাম গণতান্ত্রিক জোটও ইভিএম ব্যবহারের বিরোধিতা করে। জাতীয় নির্বাচনে ইসির ইভিএম ব্যবহারের তোড়জোড় নিয়ে জোটের সমন্বয়ক সাইফুল হক বলেন, যেখানে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ইভিএমের বিপক্ষে, সেখানে ইসির এ ধরনের পদক্ষেপ সন্দেহজনক। তিনি বলেন, মানুষের মনে এখন সন্দেহ জাগছে, সরকারি দলকে বাড়তি কোনো সুবিধা দিতে ডিজিটাল কারচুপির জন্য এই ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

(জাস্ট নিউজ/একে/১৯৪৫ঘ.)