গুম হওয়া স্বজনদের ফিরিয়ে দেয়ার দাবি ৪০ পরিবারের

গুম হওয়া স্বজনদের ফিরিয়ে দেয়ার দাবি ৪০ পরিবারের

ঢাকা, ৩০ আগস্ট (জাস্ট নিউজ) : সরকারের কাছে গুম হওয়া স্বজনদের ফিরে পাওয়ার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ৪০টি পরিবারের সদস্যরা। বৃহস্পতিবার সকালে আন্তর্জাতিক গুম দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবে নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান দাবিতে উপস্থিত হয় পরিবারগুলো। নিখোঁজ হওয়া মানুষদের স্মরণ ও গুমের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তুলতেই, আন্তর্জাতিক গুম দিবস পালনের ঘোষণা দেয় জাতিসংঘ।

গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা জানান, প্রিয়জনের প্রতীক্ষার প্রহর গুনছে সবাই। কারো অপেক্ষা এক বছর। কেউ পথ চেয়ে বসে আছেন ৫-৭ বছর। বাবা-ভাই বা প্রিয় সন্তানের জন্য এই অপেক্ষা যেনো শেষ হয় না। বাবাকে ফিরে পাওয়ার দাবি নিয়ে প্রেসক্লাবে এসেছিলো সামিহা।

বাবাকে খুঁজে পাওয়ার জন্য সামিহার সংগ্রাম শুরু ৯ মাস আগে। তারপর থেকে প্রতিদিনই ঘুরছেন সরকারি দপ্তর আর অফিসের দ্বারে দ্বারে। বাবা সাবেক কূটনীতিক মারুফ জামানের কী হয়েছে, কোথায় আছেন, জানা নেই কারো।

গত কয়েক বছরে নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান দাবিতে, আন্তর্জাতিক গুম দিবসে ৪০টি পরিবারের সদস্যরা একত্র হন জাতীয় প্রেসক্লাবে। সরকারের কাছে তাদের একটাই দাবি, ফিরিয়ে দেওয়া হোক স্বজনদের।

অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের অভিযোগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীই এসব গুমের সাথে জড়িত। নিখোঁজ ব্যক্তিদের দায় সরকারকেই নিতে হবে বলে মনে করেন বক্তারা।

প্রতিবাদী সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন তেজগাঁও থেকে নিখোঁজ বিএনপি নেতা মো. সাজেদুল ইসলাম সুমনের মা হাজেরা বেগম।

এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কমরেড সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের চেয়ারম্যান সি আর আবরার।

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যে গুমগুলো হয়েছে, তার প্রায় সবগুলোই রাজনৈতিক। মানুষকে দু’ভাবে মারা যায়; মনোবল ভেঙে দিয়ে তাকে মানসিকভাবে দমিয়ে রাখা এবং তাকে ভয়ের মধ্যে রাখা। এভাবে ভয়ের সংস্কৃতি চালু করতে পারলে লাভ সরকারেরই।’

তিনি আরো বলেন, ডিসেম্বরে দেশে একটি নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এ নির্বাচনের আগে সরকার কোনো ফরিয়াদই আমলে নেবে না। তাই এ নির্বাচনে এমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যেন স্বৈরাচার ফের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় না আসতে পারে।

কমরেড সাইফুল হক বলেন, গুম-খুন নিয়ে সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা ক্রমাগত মিথ্যাচার করে যাচ্ছেন। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে তাদের কোনো সত্য কথাও এখন আর জনগণ বিশ্বাস করতে পারছে না।

সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, দেশে যদি আরেকটা প্রহসনের নির্বাচন না চান, তবে গুমের শিকার ব্যক্তিদের তাদের স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দিন। কোথায়, কখন কিভাবে দেবেন সেটা আপনারাই ঠিক করুন। দয়া করে এসব স্বজনহারাদের প্রতি আর অবিচার করবেন না।

জোনায়েদ সাকী বলেন, গুমের রাজ্যে প্রতিদিনই আমরা নানাভাবে অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। রাষ্ট্রীয় এ অপরাধ বন্ধে রাজনৈতিক ও সামাজিক উত্থান প্রয়োজন। আগামী নির্বাচনে আমাদের সেটিই নির্ধারণ করতে হবে।

অধিকারের চেয়ারম্যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সি আর আবরার বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যদি সামান্যতম শ্রদ্ধা থাকে, এসব গুমের অবসান হওয়া উচিত। রাষ্ট্র কেবল ক্ষমতাশালীদের জন্য নয়, এ রাষ্ট্র ক্ষমতাহীনদেরও।

সমাবেশের শেষে গুমের শিকার সাজেদুল ইসলাম সুমনের মা হাজেরা খাতুন বলেন, ‘আমাদের সন্তানদের কোনো অপরাধ নেই। আমরা এ জন্য কাউকে দোষারোপও করব না। দয়া করে সন্তানদের ফেরত দিন।’

এ সময় হাজেরা খাতুনসহ অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন।

(জাস্ট নিউজ/একে/২৩০০ঘ.)