মেলেনি মা-বাবার সন্ধান, ডেনমার্ক ফিরছেন মিন্টু কার্সটেন

মেলেনি মা-বাবার সন্ধান, ডেনমার্ক ফিরছেন মিন্টু কার্সটেন

ঢাকা, ১৩ সেপ্টেম্বর (জাস্ট নিউজ) : মা-বাবার সন্ধানে পাবনায় আসা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ডেনমার্কের নাগরিক মিন্টু কার্সটেন সনিক (৪৭) এখনও তার মা-বাবাকে খুঁজে পাননি। এ অবস্থায় আগামী তিন-চারদিনের মধ্যেই ডেনমার্ক ফিরে যাচ্ছেন তিনি। তবে কয়েক মাসের মধ্যেই মা-বাবার সন্ধানে ফের তিনি বাংলাদেশে আসবেন বলে জানিয়েছেন।

মিন্টু কার্সটেন বৃহস্পতিবার এ প্রতিবেদককে বলেন, 'এবারের সফর আমার মা-বাবা ও পরিবারের সন্ধান দিতে বড় ভূমিকা রাখবে। আমি এখন অর্ধেক সফল। আগামীবার সম্পূর্ণ সফল হবো বলে আশা করছি।'

এর আগে বুধবার পাবনা প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে মিন্টু জানান, গত ৪ সেপ্টেম্বর সস্ত্রীক তিনি পাবনায় আসেন। এর কিছুদিন আগে ফেসবুকের মাধ্যমে পাবনার স্বাধীন বিশ্বাস নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়। ওই যোগাযোগের সূত্র ধরেই পরিবারের সন্ধানে চলে আসেন বাংলাদেশের পাবনায়।

মিন্টুর বিলি করা লিফলেট থেকে জানা যায়, ১৯৭৭ সালে ছয় বছর বয়সে পাবনার নগরবাড়ী ঘাটে হারিয়ে যান মিন্টু। সেখান থেকে চৌধুরী কামরুল হোসেন চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি মিন্টুকে পৌঁছে দেন ঢাকার এক আশ্রমে। ১৯৭৮ সালে ওলে ও বেনফি নামের ডেনিশ দম্পতি দত্তক নিয়ে ডেনমার্ক নিয়ে যান মিন্টুকে।

মিন্টু জানান, ছেলেবেলার কোনো স্মৃতিই মনে নেই তার। জানেন না বাংলা ভাষা। ৪১ বছর পর হারিয়ে যাওয়া মা-বাবার সন্ধানে স্ত্রীকে নিয়ে পাবনার পথে পথে ঘুরছেন মিন্টু। ছয় বছর বয়সে হারিয়ে যাওয়া মিন্টু জানেন না তার বাবা-মা এমনকি গ্রামের নামও। ছোটবেলার একটি ছবিকে সম্বল করে নিজের পরিবার ফিরে পেতে ১০ দিন ধরে পাবনার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বেড়িয়েছেন মিন্টু। হারিয়ে যাওয়ার সময়কার তার ছবি দেখিয়ে জানতে চাইছেন কেউ এই ছেলেটিকে চেনেন কি-না?

মিন্টু জানান, পুরনো কাগজ ঘেঁটে জেনেছেন মাত্র ৬ বছর বয়সে পাবনার বেড়া উপজেলার নগরবাড়ী ঘাট এলাকা থেকে হারিয়ে যান তিনি। সেখান থেকে ঢাকার ঠাটারীবাজার টেরি ডেস হোমস নামের শিশু সদনে ছিলেন। পরে শিশু সদন থেকে ১৯৭৮ সালে ডেনমার্কের এক নিঃসন্তান দম্পতি মিন্টুকে দত্তক নিয়ে যায়। সেখানেই তার শৈশব কৈশোর কাটে। বিত্ত বৈভবের মাঝে লেখাপড়া শিখে বড় হন। পেশায় একজন চিত্রশিল্পী তিনি। ডেনমাকের নাগরিক এনিটি হোলমিহেভ নামের এক চিকিৎসককে বিয়ে করে সংসার জীবন শুরু করেন। তাদের দাম্পত্য জীবনে এক ছেলে ও মেয়ে রয়েছে।

মিন্টু বলেন, 'ডেনমার্কে আমার পালক পিতা-মাতা ও স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে সুখেই আছি। তবুও আমার অন্তর এখনো বারবার কেঁদে ওঠে বাংলাদেশের বাবা-মা ও স্বজনদের জন্যে। মনে হয় স্বজনদের পেলে জীবনটা সম্পূর্ণ হয়ে উঠবে।'

তিনি আরো বলেন, 'বাবা-মা ও স্বজনদের কথা মনে হলে আমি প্রচণ্ড শূন্যতা অনুভব করি। যদি বাবা, মায়ের খোঁজ পাই তাহলে সেটা অসাধারণ হবে। না পেলে মৃত্যুর আগে জানবো তাদের খুঁজে পেতে আমি চেষ্টা করেছিলাম।'

বাংলাদেশে এসে কেমন লাগছে জানতে চাইলে মিন্টু বলেন,'প্রতিটি মানুষকে আমার আপন মনে হচ্ছে, আমার চেহারার সাথে তাদের মিল। যেন আমি আয়নায় নিজেকেই দেখছি।'

মিন্টুর স্ত্রী এনিটি হোলমিহেভ বলেন, মিন্টুর এ দেশে কাটানো শৈশবের কোনো স্মৃতিই মনে নেই। যে আশ্রমে সে ছিল তারও অস্বিত্ব খুঁজে পাইনি। ছোটবেলার দু, একটি ছবি ছাড়া কোনো সূত্র নেই। জানি তার স্বজনদের খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন কাজ। এরপরও এক বুক আশা নিয়ে পাবনার পথে পথে মিন্টুর শেকড় খুঁজে বেড়াচ্ছি।'

এ বিষয়ে পাবনা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) শামিমা আকতার বলেন, 'বিষয়টি আমরা জেনেছি। পুলিশের পক্ষ থেকে যতটুকু সহযোগিতা করার আমরা করছি। ইতিমধ্যেই তিনি (মিন্টু) পাবনা সদর থানায় একটি এজহার দায়ের করেছেন। তার উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে আমাদের পাশাপাশি দেশের গণমাধ্যমগুলোরও মিন্টুর পাশে দাড়ানো দরকার।'

পাবনা ব্যাপ্টিস্ট মিশন হাউসের কর্মকর্তা স্বাধীন চার্লস বিশ্বাস মিন্টুর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, পাবনার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ প্রশাসন বিষয়টির দায়িত্ব নিয়েছেন। তাই এবার মিন্টু ফিরে যাবেন। পরে আবার সময় নিয়ে আসবেন।

পাবনার জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিন এ প্রতিবেদককে বলেন, 'মিন্টু কার্সটেন সনিকের বিষয়টি স্পর্শকাতর। অনেকেই তার বাবা মায়ের দাবি নিয়ে এসেছিল। কিন্তু ডিএনএ টেস্ট করার কথা বলায় চলে গেছে। তবে যিনি মিন্টুকে প্রথমে উদ্ধার করে ঢাকায় নিয়েছিল আমরা সেই কামরুল ইসলাম চৌধুরীর সন্ধান পেয়েছি। তিনি এখন অস্টেলিয়ায় সেটেলড। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে উনি বাংলাদেশ আসবেন। আমরা তখন মিন্টুকেও আসতে বলেছি। আশা করি তখন সব সমস্যার সমাধান হবে।' সূত্র: সমকাল

(জাস্ট নিউজ/ডেস্ক/একে/২০২৯ঘ.)