স্টেট ডিপার্টমেন্ট ব্রিফ্রিংয়ে জাস্ট নিউজ সম্পাদকের প্রশ্ন

রোহিঙ্গাদের উপর সহিংসতায় যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র নিন্দা, করণীয় নির্ধারণের চেষ্টা চলছে

রোহিঙ্গাদের উপর সহিংসতায় যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র নিন্দা, করণীয় নির্ধারণের চেষ্টা চলছে

ওয়াশিংটন থেকে মুশফিকুল ফজল আনসারী, ৮ সেপ্টেম্বর (জাস্ট নিউজ): মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের ওপর চলমান সহিংসতা আর হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ এবং উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট। সংকট মোকাবিলায় সব দেশকে একত্রে কাজ করার আহবান জানিয়েছে দেশটি। প্রায় দুই সপ্তাহ বিরতির পর বৃহস্পতিবার স্টেট ডিপার্টমেন্টের নিয়মিত বিফ্রিং রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরগরম হয়ে উঠে।

ব্রিফ্রিংয়ের শুরুতেই রোহিঙ্গা সংকট পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান এবং উদ্বেগ নিয়ে লিখিত বিবৃতি উপস্থাপন করেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হিদার নোয়ার্ট। এরপর একের পর এক সাংবাদিকদের প্রশ্নে সরগরম হয়ে উঠে কনফারেন্স কক্ষ।

ব্রিফ্রিংয়ে অংশ নিয়ে জাস্ট নিউজ সম্পাদক মুশফিকুল ফজল আনসারী জানতে চান, বাংলাদেশ সীমান্তে আশ্রয়ের জন্য ছুটে আসা মিয়ানমারের অপেক্ষমান হাজার হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশে আশ্রয় দিতে কর্তৃপক্ষকে যুক্তরাষ্ট্র আহবান জানাবে কিনা?

জবাবে হিদার নোয়ার্ট বলেন, শরণার্থী আশ্রয় দেবার বিষয়টি বাংলাদেশসহ যেকোনো দেশের জন্য একটি কঠিন কাজ।

রোহিঙ্গাদের কল্যানে যুক্তরাষ্ট্র কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুধু রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য বাংলাদেশেও এবছর ৫৫ মিলিয়ন ডলার সহযোগিতা প্রদান করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

যুক্তরাষ্ট্রের উৎকন্ঠা প্রকাশ করে প্রশ্নোত্তর পর্বের পূর্বে হিদার বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্েয চলমান সংকটময় পরিস্থিতি নিয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্য এবং অস্ত্রধারি নাগরিক কর্তৃক চরম মানবাধিকার লংঘন, অধিকাংশ রোহিঙ্গা গ্রাম পুড়িয়ে দেয়া এবং সহিংসতা সৃষ্টির কারণে উল্লেখেযোগ্য সংখ্যক রোহিঙ্গারা তাদের বসত-ভিটা ছেড়ে পালিয়ে আসছে।

তিনি বলেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ওপর আক্রমণের ঘটনায় আবারো আমরা নিন্দা জানাচ্ছি তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সুর মিলিয়ে আর কোনো সহিংসতায় জড়াতে বা বৃদ্ধি না করার আহবান জানাচ্ছি। একিসঙ্গে নাগরিক অধিকার এবং আইনশৃঙ্গলা আর মানবাধিকার সুরক্ষার আহবান জানাচ্ছি।

উত্তেজনা আরো ছড়িয়ে পড়ে এমন কাজ থেকে সবপক্ষকে বিরত থাকার আহবান জানিয়ে হিদার বলেন, আমরা রাখাইনের নাগরিকসহ মিয়ানমারের সবপক্ষকে বলবো, এমন কোনো পদক্ষেপে যাবেন না যাতে করে পরিস্থিতি অধিকতর অবনতির দিকে মোড় নেয়।

মুখোপাত্র বলেন, আমরা সব নাগরিকের সুরক্ষার বিষয়ে মিয়ানমার সরকারের বোধোদয়কে স্বাগত জানাই। দেশটির গণতান্ত্রিক অবস্থার অধিকতর উন্নয়নে রাখাইন সংকট নিরসনে আনান কমিশনের দেয়া প্রস্তাব বাস্তবায়নে তাদের অঙ্গিকারের কথাও স্বরণ করিয়ে দেন হিদার।

তিনি বলেন, যারা আক্রান্ত হয়েছে তাদের দ্রুত মানবিক সহায়তা প্রদানের সুযোগ করে দিতে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানাই।

সংকট নিরসনে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগ প্রসঙ্গে হিদার বলেন, গত ২৫ আগস্ট থেকে হাজার হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীর বাংলাদেশে প্রবেশের পর তাদের সহায়তা দিতে জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংগঠনের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। সহিংসতা কমাতে এবং সহায়তার হাত বাড়াতে আমরা মিয়ানমারের প্রতিবেশী দেশসহ অন্যান্য শরীকদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি।

মিয়ানমারের সব সম্প্রদায়কে রক্ষায় প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে দেয়া অং সান সূচির বক্তব্য, রোহিঙ্গাদের রক্ষায় দেশটির কর্তৃপক্ষের ইচ্ছার বিষয়টিতে যুক্তরাষ্ট্রের আস্থা আছে কিনা এক সাংবাদিকের করা এমন প্রশ্নের জবাবে হিদার বলেন, মিয়ানমারে কিছু ব্যাপার ঘটছে। সাংবাদিক হিসেবে আপনারা যারা পররাষ্ট্র বিষয়ক খোঁজ খবর রাখেন, তারা এটা জানেন যে দেশটি থেকে তথ্য পাবার বিষয়টি খুবি দুরুহ। এমনকি সেখানে প্রবেশাধিকার পাওয়াও কঠিন রকমের কাজ। আমরা মিয়ানমার সরকারকে বলবো তাদের এখানে যেন সাংবাদিকদের প্রবেশের বেশি করে সুযোগ দেয়া হয়, যাতে করে সেখানে আসলে কি ঘটছে তার প্রকৃত তথ্য পাওয়া যায়।

তিনি বলেন, এছাড়াও রয়েছে মানবিক বিবেচনার দিকটিও। যেখান মানবিক সহায়তা এবং সহযোগিতা জরুরি সেসব জায়গায় মানবাধিকার কর্মী আর সংস্থাগুলো প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছে না।

ব্রিফ্রিংয়ে হিদার আরো বলেন, আমরা মিয়ানমারের সরকারের সঙ্গে শুধু সহিংসতা ইস্যু নয়, এছাড়া সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার এবং বিশেষ করে মানবিক সহায়তার বিষয়গুলো নিয়েও কথা বলছি। মিয়ানামারে আমাদের দূত স্কট মারশিয়েলের সঙ্গে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে বৃহস্পতিবার ইমেইলে যোগাযোগ করেছি। তিনি এ সপ্তাহে অন্তত তিনবার মিয়ানমার সরকারে সঙ্গে কথা বলেছেন। বিষয়টি নিয়ে আমরা তৎপর রয়েছি।

মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র কি মিয়ানমারের ওপর নতুন কোনো অবরোধ আরোপের কথা ভাবছে আরেক সাংবাদিকের করা এমন প্রশ্নের জবাবে হিদার বলেন, সম্ভাব্য কোনো অবরোধ আরোপ নিয়ে কথা বলার সময় এটা নয়। আমরা ইস্যুটকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছি এবং কূটনৈতিক যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি।

ভূয়া সংবাদ প্রচারের কারণে মিয়ানমারে সহিংসতা ছড়াচ্ছে- অং সান সূচির এমন অভিযোগের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ঘটনার কোনো প্রকৃত তথ্য জানা আছে কিনা, সাংবাদিকের করা এমন প্রশ্নের জবাবে হিদার বলেন, মিয়ানমারের পরিস্থিতিটা জটিল রকমের। আর সেখানে জটিল সংকট বিরাজ করছে। দেশটির সম্পর্কে তথ্য পাওয়াটা দুরুহ। যে সমস্ত সংস্থাগুলো মানবিক সহায়তা দিচ্ছে তাদের সঙ্গে আমরা ঘনিষ্ট যোগাযোগ রাখছি। আশা রাখছি দেশটিতে কি ঘটছে সে সম্পর্কে সঠিক তথ্যই পাবো।

অং সান সূচি যা করছেন তা সহিংসতা বন্ধে যথেষ্ট কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে হিদার বলেন, সেখান যা ঘটছে তা নিয়ে আমরা খুবি উদ্বিগ্ন। কারণ দেশটির জনগণের বিষয়টিকে আমরা গুরুত্ব দেই। যা ঘটছে তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে মিয়ানমারের যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস।

সূচির শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বহাল থাকা উচিত কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে হিদার বলেন, আমি এ বিষয়ে কেনাে মন্তব্য করতে চাই না। এটা পুরস্কার সংক্রান্ত কমিটির বিষয়।

 

(জাস্ট নিউজ/জিইউ/০৯০০ঘ)