২১ আগস্টের বোমা হামলায় আওয়ামী লীগ দায়ী, অভিযোগ রিজভীর

২১ আগস্টের বোমা হামলায় আওয়ামী লীগ দায়ী, অভিযোগ রিজভীর

ঢাকা, ১৪ অক্টোবর (জাস্ট নিউজ) : ২১ আগস্ট বোমা হামলায় আওয়ামী লীগই দায়ী বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। রবিবার নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি এ অভিযোগ করেন।

রিজভী আহমেদ বলেন, সব কিছু বিচার বিশ্লেষণে এটা মনে করার যথেষ্ট কারণ সৃষ্টি হয় যে, ২১ আগস্ট বোমা হামলায় আওয়ামী লীগ বা তাদের শুভাকাঙ্খীরাই দায়ী। যেহেতু তখন সরকার পরিচালনা করেছে বিএনপি সেহেতু নিজের সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হবে, এমন আত্মবিধ্বংসী কাজ বিএনপি কেন করতে যাবে? আওয়ামী লীগের সভার ওপর ভয়াবহ বোমা হামলা হলে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের প্রতি সাধারণ মানুষের ব্যাপক সহানুভূতির সৃষ্টি হবে এবং বিএনপির বিরুদ্ধে মানুষের আস্থা কমবে। এতে আওয়ামী লীগের লাভ। ঠিক এই উদ্দেশ্য নিয়েই আওয়ামী লীগের সভার ওপর বোমা হামলা করা হয়েছে, শেখ হাসিনার মঞ্চকে পাশ কাটিয়ে।

তিনি বলেন, এই বোমা হামলার আরেকটি উদ্দেশ্য আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বিএনপি নেতৃত্ত্বাধীন জোট সরকারকে জঙ্গী সরকার বা তার পৃষ্ঠপোষক হিসাবে প্রমাণ করা-সেজন্য পরবর্তিতে শেখ হাসিনা ও তার সহকর্মীরা হীন উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সম্মিলিত কন্ঠস্বরে দেশে-বিদেশে বিএনপি ও জোট সরকারের বিরুদ্ধে অপবাদের কোরাশ গেয়েছেন। অথচ জঙ্গী উৎপাদন করেছে আওয়ামী লীগ, আর তাদেরকে দমন করেছে বিএনপি।

রিজভী আহমেদ বলেন, দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় যাওয়া বিএনপি নেতৃত্ত্বাধীন জোট সরকার এমন হঠকারি কাজ করে নিজেদের পাকা ধানে মই দেয়ার মতো নির্বোধ কাজ করবে, এটা পাগলেও বিশ্বাস করবে না। সুতরাং এক ঢিলে কয়েকটা পাখি মারার কাজ নেপথ্যে ও প্রকাশ্যে সম্পন্ন করেছে আওয়ামী লীগ। বিএনপি কখনোই আওয়ামী লীগের মতো কুটকৌশল ও নিষ্ঠুরতা শিখতে পারেনি।

তিনি বলেন, একইভাবে ২০০৯ সালে বিডিআর সদর দপ্তরের পৈশাচিক হত্যাকান্ড আওয়ামী সরকারের আমলেই ঘটেছে। এর জন্য কেন আওয়ামী সরকার দায়ী নয়? দরবার হলের এধরণের অনুষ্ঠানে সবসময় প্রধান অতিথি থাকেন প্রধানমন্ত্রী, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী কেন সেদিন যাননি? আওয়ামী মন্ত্রী ও নেতারা যথাক্রমে সাহারা খাতুন, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মির্জা আজম প্রকাশ্যে সদর দপ্তরে ঢুকে ঘাতক বিডিআর সদস্যদের সঙ্গে দেন-দরবার করেছেন। সদর দপ্তরের বাহিরে হত্যাকারী ঘাতকদের নেতা ডিএডি তৌহিদসহ তার সঙ্গীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নিজের সরকারী বাসভবনে বৈঠক করেন। ফাইভ স্টার হোটেল থেকে সেদিন তাদের জন্য খাবারও আনা হয়েছিল। তৎকালীন সেনাপ্রধান মঈন উদ্দিন দ্রুত বিডিআর সদর দপ্তরে সেনাবাহিনী পাঠানোর নির্দেশ চেয়েছিলেন, কিন্তু বর্তমান অবৈধ সরকার সেই নির্দেশ দেয়নি। কেন এই বিলম্ব করা হলো? আর এই বিলম্ব না হলে প্রাণ দিতে হতো না অর্ধ শতাধিক চৌকস সেনা কর্মকর্তাদের। এরজন্য কি আওয়ামী সরকার দায়ী নয়? একজন উর্দ্ধতন সেনা কর্মকর্তার নেতৃত্বে যে তদন্ত হয়েছিল সেটা স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হলেও কেন তা প্রকাশ করা হয়নি? সে আলোকে কোনো ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়নি কেন? এগুলোর জবাব তো একদিন বর্তমান অবৈধ শাসকগোষ্ঠীকে দিতে হবে।

তিনি আরো বলেন, ফ্যাসিবাদী শাসনে গোয়েবলসীয় কায়দায় ক্ষমতাসীন দলের নেতারা সারাদিন অপপ্রচারে ব্যস্ত থাকলেও সত্যকে কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে পারবে না। অবৈধ শাসকগোষ্ঠীর মনে নিত্য ত্রাস আর আশঙ্কার মেঘের আনাগোনা। তাই নিয়ন্ত্রিত মিডিয়ায় ওবায়দুল কাদের অনবরত মিথ্যা ভাষণ দিয়ে যাচ্ছেন। তার বক্তব্যের বৈশিষ্ট্য ক্রোধপরায়ণতা ও কলহপ্রিয়তা। আওয়ামী লীগের গেম প্ল্যান খুব স্পষ্ট। আইন, আদালত, বিচার তাদের হাতে মুঠোয় থাকায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে কারাবন্দী করে এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলায় একের পর এক সাজা দিয়ে ফাঁকা ময়দানে ইলেকশনের নামে সিলেকশন করে ক্ষমতা ধরে রাখা। সেজন্যই ছিনতাইবাজ সরকার গণতন্ত্র ছিনতাই করে ফ্যাসিবাদের বিশুদ্ধ শাসন কায়েম করেছে। এরা গণতন্ত্রের শক্তি শুষে নিয়ে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর ওপর নজরদারীর শক্তি বৃদ্ধি করেছে।

ব্রিফিংয়ে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সাংগঠনিক সহ সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ, দপ্তর সহ সম্পাদক বেলাল আহমেদ প্রমুখ।

(জাস্ট নিউজ/একে/১৩৪৫ঘ.)