ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পরিবর্তন না করার ইঙ্গিত প্রধানমন্ত্রীর

সম্পাদক পরিষদের প্রতি শেখ হাসিনার ক্ষোভ!

সম্পাদক পরিষদের প্রতি শেখ হাসিনার ক্ষোভ!

ঢাকা, ১৮ অক্টোবর (জাস্ট নিউজ) : সম্পাদক পরিষদের মানববন্ধন কর্মসূচির প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ডিজিটাল আইন কোনো সাংবাদিকের বিরুদ্ধে নয়। আধুনিক প্রযুক্তি ও বিভিন্ন ডিভাইস দিয়ে ডিজিটাল সিস্টেমে যারা অপপ্রচার চালাবে, তাদের বিরুদ্ধে এই আইন করা হয়েছে। তিনি বলেন, আইনটি কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য করা হয়নি। বরং মিথ্যা তথ্যের মাধ্যমে যারা সমাজকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, যারা শিশুদের বিনষ্ট করবে, ভুল প্ররোচনা দিয়ে উস্কানি দিবে- তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথা জানাতেই এই আইন করেছে সরকার। মন্ত্রিসভা বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রসঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য জানান, প্রধানমন্ত্রী এই আলোচনার শুরুতেই মন্ত্রিসভার সদস্যদের কাছ থেকে তাদের মতামত জানতে চেয়েছেন। তথ্যমন্ত্রী, আইন মন্ত্রী ও সেতুমন্ত্রী আলোচনায় অংশ নেন।

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক প্রধানমন্ত্রীকে জানান, সম্পাদক পরিষদকে জানানো হয়েছিল, মন্ত্রিসভায় আইনটি নিয়ে আলোচনা হবে। তাদের কথা কেড়ে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বলে দিবেন আলোচনা হয়েছে। এসময় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মন্ত্রিসভাকে জানান, এটা তো পাস হয়ে গেছে। আলোচনার কিছু নেই।

এই পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা যে ডিজিটাল আইনের এত বিরোধিতা করছেন, এটা তো তাদের বিরুদ্ধে নয়। বরং তারাই আমার বিরুদ্ধে। আমার সরকারের বিরুদ্ধে। একজন সম্পাদক এর আগে স্বীকার করলেন যে, আমার বিরুদ্ধে ডিজিএফআই-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী তড়িঘড়ি করে সংবাদ প্রকাশ করে তিনি ভুল করেছেন। এজন্য কি তিনি পদত্যাগ করেছেন? তার বিরুদ্ধে কি সম্পাদক পরিষদ কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে? সে তো সব সময় আমার বিরুদ্ধে লেখার জন্য প্রস্তুত থাকে। এমনকি পদ্মাসেতুর অর্থায়ন যাতে না হয়, সে জন্য ড. ইউনূসের সঙ্গে তিনি বিশ্বব্যাংকে গিয়ে কথা বলেছিলেন। এমনকি তার বুদ্ধিতেই আমাকে ১/১১ এর সময় গ্রেপ্তার করা হয়। এই সম্পাদককে ‘নাটের গুরু’ হিসেবে অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে-ই সব কিছু করছে। এই সম্পাদক ভাল কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছে না; সেটা আপনাদের বুঝতে সময় লাগলেও আমার লাগেনি। আসলে তারা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে, নির্বাচনের আগে যা খুশী তাই লিখে বিব্রত করবে। আর সরকার যতে তাদের ছুঁতে না পারে।

ক্ষোভের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন সাংবাদিক কেন মনে করছে তার হাতে অনেক ক্ষমতা? সে যা খুশী তাই করতে পারবে! আমার যে ড্যামেজ আপনি করেছেন আগে তা পূরণ করেন। তা না করে পরিষদ পরিষদ করছেন। এরাই প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রিপরিষদের বিরুদ্ধে লিখেছেন। তো মন্ত্রীদের পরিবারের কি কোনো মান-সম্মান নেই। তারা লিখলো, সারা দুনিয়া জানলো।

শেখ হাসিনা বলেন, এই যে, পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি হয়েছে বলে মিথ্যা সব খবর প্রকাশ হয়েছে। তাতে কানাডার আদালতে মামলা পর্যন্ত হয়েছে। সেখানে তো কিছু প্রমাণ হয়নি। অথচ এই ঘটনায় একজন মন্ত্রী পদত্যাগ করলেন। একজন সচিব এক বছর জেল খাটলেন। এতে যে তাদের ক্ষতি হয়েছে তার কী হবে? তাদের ক্ষতিপুরণ কি এই সম্পাদক পরিষদ করতে পারবে?

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে কোনো আইন করি নাই। অনুসন্ধানীসহ সব সাংবাদিকতা থাকবে। কিন্তু উদ্দেশ্যমূলকভাবে সরকার, দেশ, মুক্তিযুদ্ধ কিংবা একটা প্রজন্মকে নষ্ট করার জন্য যদি মিথ্যা তথ্য দিয়ে খবর প্রকাশ করে, তার বিরুদ্ধে এই আইন কার্যকর হবে। তিনি বলেন, আমিসহ সবার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা যাবে। নির্ভয়ে করতে পারবে। কিন্তু প্রশ্ন হল, যা নয়, তা করতে পারবে না। আর তার জন্য একটার পর একটা আবদার করছে তারা। আবদার কেন? তাদের নিশ্চই নতুন কোনো এজেন্ডা আছে। নির্বাচনের আগে যা খুশী তাই ছাপিয়ে দিবে। আর নির্বাচনে আমরা পরাজিত হলে আর সম্পাদকদের আর পায় কে? কে তাদের বিচার করবে? তাই আমরা তাদের যা খুশী তাই করার লাইসেন্স দিব কেন?

শেখ হাসিনা বলেন, সাংবাদিকরা যে কোনো সত্য খবর প্রকাশ করুক। সেটা সরকার বা আমার বিরুদ্ধে হলেও তাতে ভয়ের কিছু নেই। কিন্তু যদি মিথ্যা তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে, জঙ্গিবাদকে উস্কে দেয়, তবেই তারা আইনের আওতায় আসবে।

ডিজিটাল আইন নিয়ে সম্পাদক পরিষদের এত কনসার্ন কেন? এই প্রশ্ন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে সাংবাদিকরা অন্যায় করবে না, তাদের কোনো ভয় নেই।

সম্পাদক পরিষদের বর্তমান কর্মকাণ্ডের বিষয়ে প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর আগে আমার পরিবার নিয়ে যে সমস্ত মিথ্যাচার হয়েছে, তার জন্য সম্পাদক পরিষদ কি কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে? অথচ এসব যে মিথ্যা, তা প্রমাণ করতে আমার কয়েক বছর লেগে গেছে। আমি দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় না আসলে তো তারা এই মিথ্যাচারকেই সত্য বলে প্রচার করে দিত।

তীব্র ক্ষোভের সঙ্গে সম্পাদক পরিষদের কাছে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন, তারা একটা প্রশ্নের জবাব দিক, কোন কোন ভাল সাংবাদিকের বিরুদ্ধে কী কী মামলা হয়েছে আজ পর্যন্ত? ডিজিটাল হউক বা অন্য কোনো মামলায় হউক, তারা আমাকে দেখাক কোন কোন ভাল সাংবাদিক অন্যায়ভাবে মামলার শিকার হয়েছে। তারা কেন মনে করছে ডিজিটাল আইনে তাদের স্বাধীনতা থাকবে না? সাংবাদিক নয় এমন কোনো মানুষ যদি বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার করে প্রযুক্তির সহায়তায় জঙ্গিবাদকে উস্কে দেয় বা অপপ্রচার করে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য এই আইন। যারাই অন্যায়কে উস্কানি দিবে, সত্যকে বিকৃত করবে, মানুষের চরিত্র হনন করবে, তথ্যপ্রমাণ ছাড়া ঢালাওভাবে মিথ্যা প্রচার করবে তাদের বিরুদ্ধে এই আইন। কোনো তথ্য প্রচার করার পর যদি তা প্রমাণ দিতে না পারে, তবেই এটা কার্যকর হবে।

এসময় সরকার-সমর্থক কয়েক জন সম্পাদককে নিয়ে কথা ওঠে। ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা সরকারের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়েছে, সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়িয়েছে, তারাও আছে সম্পাদক পরিষদের সঙ্গে।

মন্ত্রিসভার সদস্যদের প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেন, এই সম্পাদকদের পত্রিকাকে কী কী সুবিধা দেয়া হয়েছে, তা খুঁজে বের করুন। আগামীতে যাতে ঢালাওভাবে তাদের আর সুযোগ দেয়া না হয় সেটাও বিবেচনায় নিতে হবে, বলেন প্রধানমন্ত্রী। সূত্র: আমাদের অর্থনীতি

(জাস্ট নিউজ/ডেস্ক/একে/২০২৬ঘ.)