পাবনায় বিএনপি-পুলিশের সংঘর্ষ : আহত ৩৫, আটক ২৬

পাবনায় বিএনপি-পুলিশের সংঘর্ষ : আহত ৩৫, আটক ২৬

পাবনা, ১ জানুয়ারি (জাস্ট নিউজ) : পাবনায় ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর র‌্যালী করতে দেয়নি পুলিশ। জেলা বিএনপি ও ছাত্রদল আনন্দ র‌্যালী বের করলে পুলিশের বাধা নেতাকর্মীদের ওপর লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল নিক্ষেপ, গুলি ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

সোমবার দুপুরে শহীদ আমিন উদ্দিন সড়কে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে এই ঘটনা ঘটে। এতে ৯ পুলিশ সদস্যসহ বিএনপির সাধারন সম্পাদক হাবিবুর রহমান তোতা ও কৃষক দল নেতা আবুল কাশেম গুলি সহ ছাত্রদল ও বিএনপির অন্তত ৩৫ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে হেলিকপ্টার যোগে একজনকে ঢাকা ও অপর একজনকে রাজশাহী মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে। তাদের অবস্থা আশংকাজন।

এ ঘটনায় শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। মোড়ে মোড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ছাত্রদলের দাবী র‌্যালীর জন্য তারা ৪ দিন আগে অনুমতি নেয়।

পাবনার পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির বলেন, সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জেলা বিএনপি কার্যালয় থেকে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর র‌্যালী বের করার চেষ্টা করলে র‌্যালীর অনুমতি না থাকায় পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় তারা অতর্কিত পুলিশের উপর ইট পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এতে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ করলে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের জন্যে ৭ রউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ ও ৪১ রাউন্ড শর্ট গানের গুলি ছুড়ে। এ সময় পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাকসহ ৯ পুলিশ আহত হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ২৬ জনকে আটক করেছে।

এদিকে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার দুপুর ১২টার দিকে জেলা বিএনপি কার্যালয় থেকে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে একটি বিশাল আনন্দ র‌্যালী বের করার প্রস্ততি নেয়। শান্তিপূর্ণ ভাবে শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে খণ্ড খণ্ড র‌্যালী দলীয় কার্যালয়ে সমবেত হয়। এক পর্যায়ে পূর্ণাঙ্গ র‌্যালি বের করতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। এসময় নেতা-কর্মীদের সাথে পুলিশের কথা কাটা-কাটি শুরু হলে পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে পুলিশ অতর্কৃতভাবে ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের উপর লাঠির্চাজ, টিয়ার শেল নিক্ষেপ এবং শর্ট গানের গুলি ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

এ সময় এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পড়ে। দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। মহূর্তের মধ্যে শহীদ আমিন উদ্দিন সড়ক জনশূন্য হয়ে পরে। বিএনপি কার্যালয়ের সামনে বেশ কয়েকজনকে গুলিবৃদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তোতা, কৃষক দল নেতা আবুল কাশেম গুলিবিদ্ধ ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান জাফির তুহিন মাথায় গুরুত্বর আঘাত অবস্থায় পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

উন্নত চিকিৎসার জন্য আবুল কাশেমকে রাজশাহী ও হেলিকপ্টার যোগে এগ্রিকালচার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এ্যাব) মহাসচীব কৃষিবিদ হাসন জাফির তুহিনকে হেলিকাপ্টারে ঢাকা পাঠানো হয়েছে। তাদের অবস্থা আশংকাজন। এঘটনায় জেলা ছাত্রদল সভাপতি হিমেল রানা, দপ্তর সম্পাদক জহুরুল ইসলামসহ অন্তত: ৩৫ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছে বলে বিএনপি দাবি করেছে। আহত পুলিশ সদস্য ও নেতাকর্মীরা পাবনা জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি হিমেল রানা বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীতে পুলিশ উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে আক্রমন করেছে। নিয়মতান্ত্রিক ভাবে গত ৪ দিন পূর্বে পুলিশ সুপারের নিকট এই কর্মসূচীর কথা জানিয়ে আবেদন করা হয় এবং অনুলিপি পাবনা সদর থানায়ও দেওয়ার পরেও কেন পুলিশ আমাদের উপর এই ধরনের হামলা করেছেন আমাদের বোধগম্য নয়। অগণতান্ত্রিক সরকার ছাত্রদলের জনপ্রিয়তায় নেতাকর্মীদের উপর পুলিশী হামলা করেছে। এ ধরনের হামলা মামলা করে ছাত্রদলকে ঘরে আটকে রাখা যাবে না।

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক জহুরুল ইসলাম এঘটনার জন্য পুলিশের বাড়াবারিকে দায়ী করে বলেন, আমাদের প্রায় ৩৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে হেলিকপ্টার যোগে একজনকে ঢাকা ও অপর একজনকে রাজশাহী মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে। তাদের অবস্থা আশংকাজন।

সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক জানান, পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ ও বুলেট নিক্ষেপ করে। তিনি জানান, ৪১ রাউন্ড শর্টগানের গুলি ও ৭ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ২৬ নেতাকর্মীকে আটক করে। ওসি দাবি করেন, সংঘর্ষের ঘটনায় নেতাকর্মীদের ছোঁড়া ইট পাটকেলে ৯ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে।

এদিকে সংঘর্ষের পর থেকে শহরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ও টহল জোরদার করা হয়েছে।

(জাস্ট নিউজ/একে/২৩০৬ঘ.)