ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে সরকারকে পরাজিত করা হবে: মির্জা আলমগীর

ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে সরকারকে পরাজিত করা হবে: মির্জা আলমগীর

ঢাকা, ১ নভেম্বর (জাস্ট নিউজ) : ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে পরাজিত হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারকে পরাজিত করব। আমরা মাথা নত করব না।’

বৃহস্পতিবার দুপুরে মহানগর নাট্যমঞ্চে গণঅনশনে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে সকাল ১০টায় থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধির প্রতিবাদে গণঅনশন কর্মসূচির আয়োজন করে বিএনপি।

এদিকে সকাল থেকেই গণঅনশনে ছিল নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতি।

মির্জা আলমগীর বলেন, ‘বন্ধুগণ আমরা মাথা নত করব না। আন্দোলন ও লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের অধিকার আদায় করব। আমাদের বেঁচে থাকার অধিকার, ১৯৭১ সালের যে চেতনা নিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিলাম সেই অধিকার আমরা প্রতিষ্ঠা করবই করব।’

রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘সরকারের নিয়ন্ত্রণে এখন বিচার ব্যবস্থা চলছে। তার প্রমাণ গত দুই দিনে বেগম খালেদা জিয়ার মামলার রায়ে হয়ে গেছে। সরকার প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে। দেশের বিচার ও প্রশাসন ব্যবস্থাকেও ধ্বংস করে দিয়েছে। আজকে দেশ আর গণতান্ত্রিক দেশ নেই, স্বৈরাতান্ত্রিক দেশে পরিণত হয়েছে।’

গণতন্ত্রের সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়া ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছেন বলে দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘গণতন্ত্র মানেই বেগম খালেদা জিয়া। তাই আজকে তার মুক্তির দাবিতে অনশন করছি। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে যখন বলা হলো– আপনার সাজা বৃদ্ধি পেয়েছে, তখন তিনি বলেছিলেন, তারা যত সাজা দিতে চায় দিক, আমি মাথা নত করব না।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে। এই সাজা দেশের মানুষ মানে না। এসকে সিনহা বলেছেন, যেখানে প্রধান বিচারপতি নিরাপদ নয়, সেখানে সাধারণ মানুষ বিচার পাবে না। বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত না করা হলে নির্বাচন হবে না।’

দেশের জনগণের দাবি, সকল দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হতে হবে উল্লেখ করে মোশাররফ বলেন, ‘এটা শুধু জনগণের নয়, বন্ধুরাষ্ট্রগুলো একযোগে বলেছে সকল দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হতে হবে। এর জন্য আমরা ১১ দফা দাবি দিয়েছি। প্রথম দফা দাবিতে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির কথা বলেছি। বেগম খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচন হবে না, হতে দেওয়া হবে না।’

তিনি আরো বলেন, ‘সংলাপে সাত দফা দাবির বাস্তবায়ন ছাড়া আমরা নির্বাচনে যাব না।’ সংলাপে রাজনৈতিক সংকটের সমাধান না হলে রাজপথে আন্দোলনের হুমকিও দেন বিএনপির এই নেতা।

আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। এই ঐক্যের পক্ষে সারা দেশের মানুষ আজ একত্র হয়েছে। বিরাট আশা নিয়ে ঐক্যফ্রন্ট এগিয়ে যাচ্ছে। আশা একটাই, আগামী নির্বাচন একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হবে। একই সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে।’

একদিকে সংলাপ আর অন্যদিকে বেগম খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধি– এগুলো খুব ভালো আলামত নয় উল্লেখ করে মওদুদ বলেন, ‘নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য যে সংলাপের আয়োজন করা হয়েছে তা সরকার নষ্ট করে দিয়েছে বেগম খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধি ও গণহারে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে। আমাদের আন্দোলন চলবেই, যতদিন পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও দেশে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের নিশ্চয়তা না পাব।’

বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে মির্জা আলমগীরকে পানি খাইয়ে অনশন ভাঙান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এমাজউদ্দিন আহমেদ।

এদিকে বিএনপির অনশন কর্মসূচিকে ঘিরে পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। এর বাইরে সাদা পোশাকের গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদেরও উপস্থিতি দেখা গেছে।

অনশনে বক্তব্য রাখেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, এজেডএম জাহিদ হোসেন, আবদুল আউয়াল মিন্টু, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আহমদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, জয়নুল আবদিন ফারুক, আতাউর রহমান ঢালী, যুগ্ম মহাসচিব বরকতউল্লাহ বুলু, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি। এছাড়া বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা কর্মসূচিতে অংশ নেন।

এদিকে বিএনপির অনশন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন। এছাড়া ২০ দলীয় জোটের নেতারাও অংশ নেন।

(জাস্ট নিউজ/একে/১৯০০ঘ.)