খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দিলে তফসিল গ্রহণযোগ্য হবে না: মির্জা আলমগীর

খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দিলে তফসিল গ্রহণযোগ্য হবে না: মির্জা আলমগীর

ঢাকা, ৯ নভেম্বর (জাস্ট নিউজ) : কারান্তরীণ বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল নেতাকর্মীর মুক্তি দাবি করে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমাদের কথা পরিষ্কার- নির্বাচনের মাঠ সমান করতে হবে। সব দলকে সমান অধিকার দিতে হবে। মিথ্য মামলায় গ্রেপ্তার নেতা-কর্মীদের মুক্তি দিতে হবে। অন্যথায় এই তফসিল গ্রহণযোগ্য হবে না।

শুক্রবার বিকালে রাজশাহীর কেন্দ্রীয় মাদ্রাসা মাঠে আয়োজিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিভাগীয় সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা আলমগীর বলেন, রাজশাহীর মানুষের কাছে আমাদের আবেদন। আপনারা সংগ্রামী মানুষ, লড়াকু মানুষ। আমাদের মনে আছে, রাজনৈতিক আন্দোলনে রাজশাহীর কত মানুষের প্রাণ দিয়েছে। গণতন্ত্রকে রক্ষা করার এই আন্দোলনকে প্রাণ দিয়ে হলেও আমরা সফল করবই। জনগণের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারের পতন হবে।

উপস্থিত জনতার উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে তিনি বলেন, আপনাদের কাছে আমার প্রশ্ন- আপনারা কি বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চান? তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে চান? তাহলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দাবি আদায় করতে হবে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, সময় খুব সংকীর্ণ, সংকট আরো কঠিন। আজকে প্রশ্ন আমাদের স্বাধীনতা থাকবে কি থাকবে না। আমাদের সংগঠন করার অধিকার থাকবে কি থাকবে না সেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এর আগে এই মাঠে রোডমার্চে এসেছিলাম। তখন দেশনেত্রী সঙ্গে ছিলেন। তিনি আজ কারাগারে। তিনি প্রচন্ড অসুস্থ। তার জন্য কারাগারে ছোট একটি ঘরের মধ্যে বিচারালয় স্থাপন করা হয়েছে। তাকে কারাগারের অন্ধকারে তিলে তিলে হত্যা করা হচ্ছে। যা বৃটিশ আমলে হয়নি, পাকিস্তান আমলে হয়নি। অথচ এখন তাই হচ্ছে। মাত্র ১০ বাই ২০ ফুটের একটি রুমে তার জন্য আদালত স্থাপন করেছে সরকার।

তিনি বলেন, দেশনেত্রী আজ অসুস্থ। চরম অসুস্থ। তাকে চিকিৎসা না দিয়ে হাসপাতাল থেকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তারা পুলিশ দিয়ে জনগনের অধিকারকে ধ্বংস করতে চায়।

নানা বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে রাজশাহীতে ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে হাজির হন লাখো নেতাকর্মী। তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না আলিয়া মাদরাসা মাঠে। পুরো এলাকা যেনো জনসমুদ্র। মাদ্রাসায় জেডিসি পরীক্ষা চলায় আগে থেকে সমাবেশস্থলে যেতে পারেননি সমাবেশে আসা লোকজন। তাই সকাল থেকেই শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে জড়ো হন তারা। পরীক্ষা শেষ হলে মিছিল নিয়ে যোগ দেয় জনসভায়। রাজশাহী ও আশপাশের জেলায় পরিবহন বন্ধ থাকায় নেতাকর্মীদের আসতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। তবে সব প্রতিবন্ধকতা এড়িয়ে ট্রেন, মাইক্রো এবং নৌকা যোগে চলে আসেন রাজশাহীতে। অনেকে দুই তিনদিন আগেই সমাবেশে যোগ দেয়ার উদ্দেশ্যে শহরে এসে অবস্থান করেন।

বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রধাননেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠে আলিয়া মাদরাসা মাঠে লাখো জনতার জনসমুদ্র। মুহুর্মুহু স্লোগান দিতে থাকে ‘মুক্তি চাই, দিতে হবে।’ সেই সাথে উচ্চারিত হয় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মজলুম জননেতা তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা ও রায় বাতিলের দাবি।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিভাগীয় সমন্বয়কারী মিজানুর রহমান মিনুর সভাপতিত্বে জেএসডি সভাপতি আ.স.ম আব্দুর রব, কর্নেল অব অলি আহমদ বীর বিক্রম, বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, মির্জা আব্বাস, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী ও গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু বক্তব্য দেন।

সংসদ ভেঙে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারে অধীনে নির্বাচন, বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, ইভিএম বাতিল, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, গ্রেপ্তার বন্ধ করা, নির্বাচনে ম্যাজিট্রেসি পাওয়ার দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েনসহ ৭ দফা দাবিতে ঐক্যফ্রন্টের এ সমাবেশ।

নতুন এ রাজনৈতিক জোট আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিভাগীয় শহরগুলোতে জনসভা করছে। সিলেট, চট্টগ্রাম, ঢাকার পর চতুর্থ জনসভাটি হয়েছে আজ রাজশাহীতে। দুপুর ২টায় রাজশাহী মহানগরীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানে এই সমাবেশ শুরু হয়।

(জাস্ট নিউজ/একে/২০৪৮ঘ.)