বিএনপি ও শরিকদের নির্বাচনের বাইরে রাখার পরামর্শ

সাধারণ মানুষের ভোট দেয়ার ব্যাপক আগ্রহে বেকায়দায় সরকার

সাধারণ মানুষের ভোট দেয়ার ব্যাপক আগ্রহে বেকায়দায় সরকার

ঢাকা, ২৪ নভেম্বর (জাস্ট নিউজ) : বিএনপি সমর্থিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২৩ দলীয় জোটের শরিকেরা আসন্ন সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দেয়ার পর বেকায়দায় পড়েছে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি কথিত জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলকারীরা। এ মুহূর্তে নির্বাচনমুখী সাধারণ মানুষ অবাধে ভোটদানের সুযোগ পেলে কী হতে পারে তা বোঝার চেষ্টা করছে বর্তমান শেখ হাসিনার বিতর্কিত সরকার। তিন স্তরে প্রশাসন ও পুলিশের নেতৃত্ব সাজানোর পরও তারা নিজেদের বিজয় সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারছে না। সর্বশেষ মাঠ জরিপে যেকোনোভাবে বিএনপি ও শরিকদের নির্বাচনের বাইরে রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে একটি সুত্র জানিয়েছে।

কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, একসাথে সারা দেশে ভোট গ্রহণ করা হলে প্রতি কেন্দ্রে পুলিশের যে জনবল থাকবে ভোটারদের ব্যাপক উপস্থিতি হলে সেখানে ইচ্ছেমতো কিছু করা সম্ভব হবে না। গত দশ বছরে পুলিশের অনৈতিক ও অপেশাদারী কার্যকলাপে মানুষজন অতিষ্ঠ। তাদের প্রতি যে ক্ষোভ রয়েছে, তাতে ব্যাপক জন-উপস্থিতি পুলিশের নৈতিক মনোবল ভেঙে দিতে পারে। তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হয়ে পড়বে। সে কারণে শুরুতেই কেন্দ্রে ব্যাপক ভোটার উপস্থিতি ঠেকানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, সরকারি দল শুরু থেকেই নির্বাচনে বিএনপি যাতে না আসতে পারে সে চেষ্টা চালিয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে বিএনপিও কিছুটা দ্বিধান্বিত ছিল; কিন্তু সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবং তার জোট শরিকেরা নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়। এতে হঠাৎ করেই আওয়ামী লীগ দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। ফের ক্ষমতায় ফেরার যে অগ্রিম বার্তা দেয়া হচ্ছিল তাতে ছেদ পড়ে।

সূত্র জানিয়েছে, দলকানা প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও পুলিশের বাছাই করা লোকদের নিয়ে গত ছয় মাসে মাঠ প্রশাসন সাজানো হয়। সরকারি দল ধরেই নিয়েছিল নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করলে এসব দলবাজ কর্মকর্তার বিষয়ে আপত্তি উঠবে। আর যদি সে ক্ষেত্রে প্রশাসনে কোনো পরিবর্তন আনতেই হয় তবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তরের কর্মকর্তাদেরও তৈরি রাখা হবে। যাতে করে পরিবর্তনেও কোনো বিরূপ প্রভাব না পড়ে। একজন সাবেক প্রবীণ আমলার নেতৃত্বেই প্রশাসনের এ সেটআপ তৈরি করা হয়। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কয়েক দফা ভেরিফিকেশন করা হয়। সামান্য সন্দেহযুক্ত কাউকেই নির্বাচনকালীন এ মাঠ প্রশাসনে সংশ্লিষ্ট রাখা হয়নি। পুলিশ প্রশাসনের সব কর্মকর্তার নির্বাচনের সময়ে দায়িত্ব পালনের সুযোগ রাখা হয়নি। যেসব কর্মকর্তা বর্তমান সরকারের সময়ে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নামে একাধিক মামলার বাদি ছিলেন বেছে বেছে তাদেরকেই দায়িত্ব প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়। বিরোধী দলের প্রতি সহানুভূতিশীল কিংবা আইনের প্রতি অনুগত এমন কর্মকর্তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড দেখে বাছাই করা হয়।

জানা গেছে, বর্তমান সরকারের ১০ বছরে নির্বাচনে ভোট প্রদানের সুযোগ সীমিত হয়ে যাওয়ায় তৃণমূলপর্যায়ে সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ। তারা যেকোনো মূল্যে কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে চান। ১০ বছরে রাষ্ট্রীয় ও পুলিশি জুলুমে গ্রামপর্যায়ের ভোটাররাও ক্ষতিগ্রস্ত। একটি বিভক্ত সমাজে বসবাস করার মতো মানসিক কষ্ট নিয়ে তারা অপেক্ষা করছেন। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সত্ত্বেও তারা ভোট প্রদানকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিচ্ছেন। আর এ বিষয়টিই সরকারের দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, সময় ঘনিয়ে আসার প্রেক্ষাপটে সরকার এখন প্রশাসনিক ক্ষমতার প্রয়োগ করে বিরোধীপক্ষকে নির্বাচনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ করে তুলতে চাইছে, যাতে তারা বিরক্ত হয়ে নির্বাচন বয়কটের দিকে পা বাড়ায়। একই সাথে মাঠে-ময়দানে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টিরও কৌশল নেয়া হচ্ছে। এ জন্য সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী ধরপাকড়ের গতি কমিয়ে দিয়ে নতুন কৌশলে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা চলছে। আগের মতো ঢালাও নাশকতার মামলা না দিয়ে মাদক মামলার মতো পুরনো কোনো মামলায় গ্রেফতার দেখানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এ দিকে বিএনপি ও শরিক দলগুলো পরিস্থিতি বুঝে সতর্কতার সাথে এগোচ্ছে। তারা মনে করছে, নৈতিক মনোবল দুর্বল হয়ে পড়ায় সরকার সমর্থকেরা মারমুখী অবস্থান নিয়েছে। নির্বাচনের মাঠে তারা যতই আক্রমণাত্মক ভূমিকা গ্রহণ করবে ততই সাধারণ ভোটারদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। আর এটিকেই তারা কাজে লাগানোর চেষ্টা করবে। তবে এ মুহূর্তে ভীতির পরিবেশ কাটিয়ে ওঠাকেই তারা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছে।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/০৯১৫ঘ.)