‘পুলিশ আমাদেরকে বলছে আন্দোলনের মাঠে থাকতে, সেনাবাহিনী হাসিনার কথা শুনছে না’

‘পুলিশ আমাদেরকে বলছে আন্দোলনের মাঠে থাকতে, সেনাবাহিনী হাসিনার কথা শুনছে না’

ঢাকা, ২৪ নভেম্বর (জাস্ট নিউজ) : গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, ‘দেশের পরিস্থিতি ক্রমেই পাল্টে যাচ্ছে। এই পরিবর্তন আরো হবে। কেননা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা তার সেনাবাহিনী এখন আর শুনছে না। পুলিশ এখন আমাদেরকে বলছে আন্দোলনের মাঠে অবস্থান করতে। বোঝাই যাচ্ছে, সরকারের ভিত নড়ে গেছে।’

শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত ’৭১’র মুক্তিযুদ্ধ ও আজকের বাংলাদেশ, আসন্ন নির্বাচনে রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রত্যাশা এবং করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘যাদেরকে এত ভয় করেন পুলিশ ও র‌্যাবের ডিজি তারা এখন যোগাযোগ করছে বিভিন্ন জায়গায়। তাই আপনারা আর ভয় পাবেন না। তারা সর্বোচ্চ কি করতে পারে- ধরে নিয়ে যাবে, সর্বোচ্চ মেরে ফেলবে। ১৯৭১ সালে আমাদের মরে যাওয়ার কথা ছিল। গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা করতেই আমরা এখনও বেঁচে আছি।’

জাফরুল্লাহ বলেন, ‘নির্বাচনের সময় আমি কোনো মুক্তিযোদ্ধার মুখে শুনতে চাই না যে মাঠে পুলিশ আছে বলে আমরা যেতে পারছি না। কত লাখ পুলিশ এখানে আছে? আমাদের পক্ষে জনগণ আছে ১৮ কোটি। আমরা যেসব সমাবেশ করেছি সব জায়গায় পুলিশ রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছিল। তবুও হেঁটে গিয়ে মানুষ সমাবেশে অংশগ্রহণ করেছে। এ ধরনের ঘটনা দেখা গেছে সত্তরের দশকে মাওলানা ভাসানীর ডাকে মানুষ যখন আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিল।’

তিনি বলেন, ‘ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে আমার প্রত্যাশা- এবারের জাতীয় সংসদে কমপক্ষে ১৫ জন মুক্তিযোদ্ধা নেতা থাকবে। তবেই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠা হবে। তারা ১৯৭১ সালে যেভাবে যুদ্ধ করেছিল দেশের গণতন্ত্র রক্ষায় সংসদেও সেভাবেই অবস্থান নেবেন।’

জাফরুল্লাহ বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। যেন সাধারণ মানুষ স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারে বা তার মত প্রকাশ করতে পারে। সরকার যখন স্বৈরাচারী হয়ে যায় তখন সে তার অতীত ভুলে যায়। আমরা চাই সেই অতীতকে মনে করিয়ে দিতে। একাত্তরে যুদ্ধ করে আমরা যেমন স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিলাম এখনো সেভাবেই জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই।’

তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে আমরা দ্বিতীয় যে কথাটি দিয়েছিলাম সেটি হল ন্যায়বিচার। আমি কখনো বলিনি বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্ত করতে হবে। আমি বলেছি তার ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে হবে। সুবিচার পেলেই তিনি আজ কারাগারের বাইরে থাকতেন। আমরা কি টানা দুবার ক্ষমতায় থাকলে শেখ হাসিনার নামে ১৯২টা মামলা দিয়ে দিতাম?’

সরকারের ভিত নড়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতি দেখে বোঝা যাচ্ছে সরকারের ভিত নড়ে গেছে। যখন বেনজির-আসাদুজ্জামানের মত লোকজন যোগাযোগ শুরু করে তখন বোঝা যায় ১ কোটি লোককে গ্রেফতার করা যায় না।’

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, ‘আমরা বৈষম্য দূর করতে চাই। আজকে আমরা দেখছি কেউ কেউ কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে যাচ্ছে। আর কেউ দরিদ্র থেকে যাচ্ছে। এ বৈষম্য আমরা দেখতে চাই না। বৈষম্যের কারণে মানুষের দুরবস্থা কি রকম হয় সেটা যদি দেখতে চান তাহলে ধানমন্ডিতে আমার হাসপাতালে আসতে পারেন। সেখানে মানুষ ডায়ালাইসিসের জন্য ৫০০ টাকা দিতে পারে না।’

সামাজিক অবস্থান ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ব্যাপক অবক্ষয় হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমাদের জনগণের কাছে দিয়ে বলতে হবে কেন আমাদের পক্ষ নেবেন। কারণ আমরা জনগণের স্বপ্নপূরণ করতে চাই। মানুষ চিকিৎসা পাবে কৃষক তার পণ্যের মূল্য পাবে। আমরা প্রয়োজনে মানুষকে তার প্রয়োজনীয় রেশনও দিতে চাই। কর্মসংস্থানের অভাব দূর করতে চাই। আমরা ক্ষমতায় এলে শুরুতেই ৫ লাখ বেকার শিক্ষিত যুবক চাকরি পাবে বলে অঙ্গীকার করছি।’

ডিজিটাল আইন সংশোধন করা হবে উল্লেখ করে আলোচনা সভার প্রধান অতিথি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের চেয়ারম্যান কর্নেল (অবঃ) ড. অলি আহমেদ বলেন, ‘বর্তমানে সংবাদকর্মীদের গলা চেপে রাখা হয়েছে ডিজিটাল আইনের মাধ্যমে। আমরা ক্ষমতায় গেলে এই ডিজিটাল আইন সংশোধন করা হবে। সরকারি কর্মকর্তাদের কোনও নির্যাতন করা হবে না। কারণ তারা বাধ্যগত কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি করেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘ব্যাংক দেউলিয়া, কিছু সংখ্যক লোক ব্যংকের টাকা লুটপাট করে নিয়ে বিদেশে নাগরিকত্ব নিয়ে চলে গেছে। আবার জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের কোন মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী একমাত্র একাত্তরের শহীদদের মুক্তিযোদ্ধা মনে করেন। যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি পাওয়া যায় না। দলীয় আনুগত্য প্রকাশ করলেই চাকরি পাওয়া যায়। তাই অনেকে বাঁচার তাগিদে দলীয় আনুগত্য স্বীকার করেছে। সব মিলিয়ে এখন দেশকে মুক্ত করার তাগিদে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’

কর্নেল অলি বলেন, ‘আমরা মানুষের হারানো অধিকার ফিরিয়ে দিতে চাই। আমরা বৈষম্য দূর করতে চাই। এ কারণে এখন থেকে আমাদের নিজ নিজ এলাকায় অধিক প্রচারণা চালাতে হবে। কারণ আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমাদেরকে বিপুল ভোটে জয়ী হতে হবে।’

আলোচনা সভায় নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘একজন বিএনপি নেতা মূল্যায়নের সাক্ষৎত্কারে অংশগ্রহণ করার জন্য ঢাকায় এসেছিল। সে আটক হওয়ার পর বিভিন্ন জনকে মেসেজে জানিয়েছিল সে বিপদে আছেন এবং তার মৃত্যু হতে পারে। সেটা সরকার জেনেও কোনও প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। নির্বাচনের আগে এরকম ন্যাক্কারজনক ঘটনা গ্রহণযোগ্য নয়। এদিকে আমরা বর্তমান সরকারের এই স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে কোনও অবস্থান তৈরি করতে পারিনি। এটা একটি নিরেট সত্য কথা। কিন্তু আমাদের এই অতীতের দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না। আমাদের বর্তমানকে গ্রহণ করে সেই পথে হাঁটতে হবে।’

মান্না আরো বলেন, ‘আমরা নির্বাচনে অংশ নেব একই আন্দোলন বা লড়াইয়ের অংশ হিসেবে। এই অবস্থায় নির্বাচন হতে পারে না সেটা সত্য বা বেগম জিয়াকে কারাগারে রেখে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তবুও আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে। ৩ মাস আগে ও মানুষ মনে করত শেখ হাসিনাকে তাঁর ক্ষমতা থেকে সরানো সম্ভব না। এই তিন মাসের ব্যবধানে সে ধারণা মিথ্যে হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘মানুষ এখন আশা করছে এবারে একটা ভালো পরিবর্তন হতে পারে। মানুষের এই আশাটাকে বাস্তবে পরিণত করতে আমাদের মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিদের আরো বেশি কাজ করতে হবে।’

নির্বাচন কমিশনকে সরকারের দালাল উল্লেখ করে মান্না বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে গিয়ে যখন আমরা বলছি এই কাঠামোতে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না তখন তারা বলছে- ‘দেখছি কি করা যায়’। কিন্তু আবার পরের দিন সংবাদ সম্মেলন করে বলে আমাদের প্রস্তাব তাদের মেনে নেয়া সম্ভব না।’

দলটির সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ জুলফাতের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অবঃ) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অবঃ) সৈয়দ মুহম্মদ ইব্রাহিম, নাগরিক ঐক্যের নঈম জাহাঙ্গীর, কর্নেল (অবঃ) মনির দেওয়ান প্রমুখ।

(জাস্ট নিউজ/একে/২০৪৬ঘ.)