ভোট ডাকাতির ভয়াবহ পরিকল্পনা ফাঁস করেছেন লোটাস কামাল: বিএনপি

ভোট ডাকাতির ভয়াবহ পরিকল্পনা ফাঁস করেছেন লোটাস কামাল: বিএনপি

ঢাকা, ৬ ডিসেম্বর (জাস্ট নিউজ) : ক্ষমতাসীন অবৈধ সরকার নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করে আবারো ক্ষমতায় থাকার জন্য নানা কূটকৌশল ও নীলনকশা তৈরি করেছে মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, নির্বাচন সামনে রেখে দেশব্যাপী গ্রেফতারের মহোৎসব চলছে। মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর থেকে গ্রেফতারের পরিমাণ বেড়ে গেছে। গতকাল পর্যন্ত ২০০০ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকালে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী আহমেদ এসব কথা বলেন।

রিজভী আহমেদ বলেন, প্রহসনের অংশ হিসেবেই বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নির্বাচন থেকে গায়ের জোরে দূরে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। বিপুল জনপ্রিয় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও জনগণকেই সবচেয়ে বেশি ভয় পায় শেখ হাসিনা। তাই আইন-ন্যায় বিচারের তোয়াক্কা না করে সরকার বেগম জিয়াকে কারাগারে আটকে রেখেছে। শেখ হাসিনা বসে বসে কষছেন নির্বাচনে কারচুপির অভিনব মহাফন্দি। তারা জানেন, অন্যায় পথে নির্বাচন অনুষ্ঠান ছাড়া জনসমর্থনশূন্য আওয়ামী লীগের একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ের অন্য কোনো উপায় নেই। তাই নির্বাচনী ব্যবস্থা এবং আজ্ঞাবাহী নির্বাচন কমিশনকে নিয়ন্ত্রণে রেখে আবার ক্ষমতায় যেতে চান তারা। সেজন্য বিরোধী দলের ওপর অত্যাচার নির্যাতন-নিপীড়ন এবং যতো রকম কৌশল আছে সরকার প্রয়োগ করছে। শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ কথাটা তামাদি করে ফেলেছে আওয়ামী সরকারের মদদপুষ্ট নুরুল হুদা কমিশন। সরকারের পক্ষে ইসির নজিরবিহীন পক্ষপাতিত্ব ভোটারদেরকে হতাশ ও ক্ষিপ্ত করে তুলছে।

তিনি বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে দেশব্যাপী গ্রেফতারের মহোৎসব চলছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে চাপিয়ে দেয়া শত শত মামলার বোঝায় নির্বাচনের মাঠ দূরে থাক, ঘরে পর্যন্ত থাকতে পারছেন না ধানের শীষের প্রার্থীসহ নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা। যারা ধানের শীষের মনোনয়ন প্রত্যাশী এবং প্রার্থী হয়ে যারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন এমন ২৭ জন নেতা মিথ্যা মামলায় এখন কারাগারে আটক আছেন। নির্বাচনের মাঠে বিএনপিকে ঘায়েল করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে নামে-বেনামে, গায়েবি মামলায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের বন্দীত্বের লাল দেয়ালের ভেতরে ঘিরে রাখা হয়েছে। মামলা আর পুলিশি হয়রানির কারণে নেতা-কর্মীরা ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এরপরও ক্ষান্ত হচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, পরিবারের অন্য সদস্যদেরও হয়রানি করা হচ্ছে। পুলিশি হেনস্তার ভয়ে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীরা আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্ভয়ে প্রচারণা চালাতে পারবেন কি না সে বিষয়ে আতঙ্কে রয়েছেন তারা।

রিজভী আহমেদ বলেন, সারাদেশে যারা ভোট গ্রহণ করবেন সেই ডিসি, এসপি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড গঠনের নির্দেশনা নির্বাচন কমিশন তো দেয়ইনি; উল্টো তাদেরকে পক্ষপাতিত্বের দিকেই উস্কে দিয়েছে ইসি। ইসিতে দফায় দফায় ডেকে এনে সেমিনার, প্রশিক্ষণ, কর্মশালা, সংলাপের নামে বিএনপি প্রার্থীদের হয়রানি করার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। অধিকাংশ রিটার্নিং অফিসার আওয়ামী অনুমোদিত মনোবৃত্তির দ্বারা প্রণোদিত। আমরা খবর পেয়েছি, আইন মন্ত্রণালয়ে জেলা দায়রা জজদের নিয়ে একটি সভা হয়েছে। সেখানে আইন সচিব নির্দেশ দিয়েছেন যে, নির্বাচনের পূর্বে তারা যেনো বিএনপি’র কাউকে জামিন না দেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গ্রেফতার বাড়াতে মনিটরিং সেলও খোলা হয়েছে। এই পরিস্থিাতিতে স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বদলে আসন্ন নির্বাচন আবর্জনাময় হয়ে উঠতে পারে।

তিনি আরো জানান, ঢাকার হাইকোর্ট অঙ্গণ থেকে শুরু করে পুরান ঢাকার জজ কোর্ট, মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টসহ সারাদেশের জেলা পর্যায়ের আদালতগুলোর আঙ্গিণায় ‘ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই’ অবস্থা। কোথাও ধানের শীষের প্রার্থীরা জামিনের আবেদন নিয়ে হাজির হচ্ছেন; কোথাও কর্মীরা জামিন চেয়ে আবেদন করছেন; কোথাও গ্রেফতার ঠেকাতে আগাম জামিনের আবেদন, কোথাও স্বামী-স্ত্রী-পুত্র-কন্যাদের পুলিশি গ্রেফতার ঠেকাতে আদালতের শরণাপন্ন হতে হচ্ছে। কোর্ট-কাচারীগুলোয় হাজার হাজার বিএনপি নেতা-কর্মী বিচারপ্রার্থীর উপস্থিাতির নজিরবিহীন এমন দৃশ্য অতীতে কোনো ভোটের সময় দেখা যায়নি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের উদ্ধৃতি দিয়ে বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের অবৈধ মন্ত্রী লোটাস কামালের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। সেখানে তিনি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের ভোট ডাকাতির ভয়াবহ পরিকল্পনা ফাঁস করেছেন। প্রকাশ্যে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের এলাকা ছাড়া করার হুমকি দিয়ে শেয়ারবাজার ও ব্যাংক লুটেরাদের অন্যতম আ হ ম মোস্তফা কামাল ওরফে লোটাস কামাল বলছেন-‘একটা একটা করে খুঁজবেন, ২৮ তারিখের আগে যদি এলাকা ছেড়ে না যায় তাহলে আর ছাড় নাই। তাদের চৌদ্দগোষ্ঠী পর্যন্ত উৎখাত করবো’।

লোটাস কামালের উদ্দেশ্যে রিজভী আহমেদ বলেন, এইসব হুমকি-ধামকি ভয়ভীতি দেখিয়ে এবার আর লাভ হবে না। যখন জনগণ ভোটের মাঠে নেমে আসবে তখন কোনো ফন্দি কাজে দিবেনা। কাঁচের মতো সব কিছু চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে। অপেক্ষা করুন, যারা দুঃশাসনের বিরোধী সেই জনগণের বিজয়ের দিন খুবই নিকটবর্তী। সরকারের অবরোধী কৌশলে জনগণ আত্মসমর্পণ করবে না।

তিনি বলেন, ‘সিইসি’ শব্দটি উচ্চারণ করলেই চোখের সামনে ভেসে উঠে সাবেক সিইসি কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদের নাম। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনে তার ভূমিকা দেশ-বিদেশে নিন্দিত-কলঙ্কিত। ক্ষমতাসীনদের ‘নাচের পুতুল’ ওই কাজী রকিব এখন ইতিহাসের পাতায় ১৭৫৭ সালের বিশ্বাসঘাতক মীর জাফর আলী খাঁর সাথে তালিকাভুক্ত। জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করে কাজী রকিব যে পথে হেঁটেছেন বর্তমান সিইসি কে এম নূরুল হুদাও যেন সে পথেই চলতে শুরু করেছেন। শুধু তাই নয়, সেটাকে এক ডিগ্রি বৃদ্ধি করে নৈতিকতার মাথা খেয়ে নিজের ভাগিনাকে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী করেছেন। তার সাথে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে বসে বৈঠকও করছেন।

রিজভী আহমেদ বলেন, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে প্রশাসনের সচিব, বিভাগীয় কমিশনার, ডিসি, এসপি এমন ৯২ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে তাদের বদলি ও প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের রাজনৈতিক পরিচিতি ও কর্মকান্ডের তথ্যও দেয়া হয় নির্বাচন কমিশনে। এদের মধ্যে মাত্র একজন এসপি (নারায়ণগঞ্জ) বদলি করে সেখানে আরো কট্টর আওয়ামীপন্থী ও বিতর্কিত এসপি হারুনকে পদায়ন করা হয়। আমি আবারো বলছি অবিলম্বে পক্ষপাতদুষ্ট ৯২ জনকে বদলী করুন। না হয় নির্বাচনে কোনো গ্রহণযোগ্যতা আসবে না। গণতন্ত্রকে জিম্মি করে রাখা হয়েছে। সাংবিধানিক অধিকার যেমন সঙ্কুচিত তেমনি ক্ষমতায় থেকে লুটপাটকারীদের অর্থের দৌরাত্ম্য কালো থাবার মতো বিস্তার লাভ করেছে। এই অবস্থা থেকে জনগণকে মুক্ত করতে গণতন্ত্র রক্ষার যুদ্ধে নেমেছে বিএনপি, ২০দল এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১৪১৮ঘ.)