আপিলেও খালেদা জিয়ার প্রার্থিতা বাতিল

আপিলেও খালেদা জিয়ার প্রার্থিতা বাতিল

ঢাকা, ৮ ডিসেম্বর (জাস্ট নিউজ) : কারান্তরীণ বাংলাদেশের গণতন্ত্রের প্রধান নেত্রী, বিএনপি চেয়ারপারসন ও তিন বারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিলে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্ত বহাল রেখেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তিনটি আসনেই তার প্রার্থিতা অবৈধ ঘোষণা করেছে তারা।

শনিবার আপিল আবেদনের তৃতীয় দিনের শুনানিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ কমিশনারদের ভোটের ভিত্তিতে বেগম খালেদা জিয়ার আপিল নামঞ্জুর করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা।

নির্বাচন কমিশনারদের মধ্যে শুধু মাহবুব তালুকদার বেগম খালেদা জিয়ার মনোনয়ন বাতিলের বিপক্ষে রায় দেন। কিন্তু অন্য তিন কমিশনার রফিকুল ইসলাম, শাহাদাত হোসেন ও কবিতা খানম মনোনয়ন বাতিলের পক্ষে রায় দেন। সিইসি সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন।

এর আগে সকালে আপিল শুনানি শুরু হলে, বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন তার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। তিনি প্রায় ২০ মিনিট সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর মনোনয়নপত্র বাতিলের বিরুদ্ধে যুক্তি তুলে ধরেন। কিন্তু তখন শুনানি স্থগিত রাখা হয় বিকাল পর্যন্ত। পরে বিকাল ৬টায় এই ফলাফল জানানো হয়।

বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে ফেনী-১, বগুড়া-৬ ও বগুড়া-৭ আসনে মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়া হয়। দুটি মামলায় তিনি দণ্ডিত হওয়ায় রিটার্নিং কর্মকর্তারা তার মনোনয়নপত্র বাতিল বলে ঘোষণা করেন। এরপর গত ৫ ডিসেম্বর বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা তার পক্ষে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইসিতে আপিল আবেদন করেন।

শনিবার খালেদা জিয়ার পক্ষে আপিলের শুনানি করেন তার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। এ সময় সেখানে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন, সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ অন্য আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।

শুনানি শেষে বেরিয়ে তখন অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, ‘নির্বাচনকালীন আচরণবিধি বা অপরাধের যে ধারায় বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ বেআইনি। কারান্তরীণ বেগম খালেদা জিয়া কীভাবে বিধি লঙ্ঘন করবেন তার বিরুদ্ধে যুক্তি দেওয়া হয়েছে। ইসি বিকাল ৫টায় এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানাবে। আমরা আশাবাদী। আশা করি, এ ব্যাপারে ন্যায়বিচার পাব।’

গত বৃহস্পতিবার থেকে ইসিতে আপিল শুনানি শুরু হয়। এর মধ্যে প্রথম দিন ১৬০টি আবেদনের ওপর শুনানি করে ৮০ জনের প্রার্থিতাকে বৈধ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। আর শুক্রবার ১৫০টি আবেদনের ওপর শুনানি হয়। এর মধ্যে ৭৮ জন তাদের প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। পাশাপাশি এদিন ৬৫ জনের প্রার্থিতা বাতিল এবং সাতজনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখে নির্বাচন কমিশন। দুদিনে মোট ১৫৮ জন তাদের মনোনয়ন ফিরে পান। এতে ভোটের মাঠে তাদের লড়াইয়ের আর কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকল না।

মনোনয়নপত্র বাছাইকালে দুই হাজার ২৭৯টি মনোনয়নপত্র বৈধ ও ৭৮৬টি অবৈধ বলে ঘোষণা করেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা। এগুলোর মধ্যে বিএনপির ১৪১টি, আওয়ামী লীগের তিনটি এবং জাতীয় পার্টির ৩৮টি মনোনয়নপত্র রয়েছে। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে ৩৮৪টি। এর মধ্যে আপিলের আবেদন এসেছে ৫৪৩টি।

৩৯টি দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মিলে এবার ৩০০ সংসদীয় আসনে তিন হাজার ৬৫টি মনোনয়নপত্র জমা দেয়। এর মধ্যে দলীয় মনোনয়নপত্র জমা পড়ে মোট দুই হাজার ৫৬৭টি, আর স্বতন্ত্র ছিল ৪৯৮টি।

আগামী ৯ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময়। ১০ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ। আর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ৩০ ডিসেম্বর।

(জাস্ট নিউজ/একে/১৮২৭ঘ.)