প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি

নির্বাচনকালীন সরকার গঠনে সংলাপের উদ্যোগ নিন : বিএনপি

নির্বাচনকালীন সরকার গঠনে সংলাপের উদ্যোগ নিন : বিএনপি

ঢাকা, ১৩ জানুয়ারি (জাস্ট নিউজ) : সংবিধানে নির্বাচনকালীন সরকারের কোনো বিধান না থাকায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ‘নির্বাচনকালীন সরকার গঠনে’ রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপের উদ্যোগ নিতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহবান জানিয়েছে বিএনপি।

সরকারের চারবছর পূর্তি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ আহবান জানান।

গুলশানের কার্যালয়ে বিকালে এই সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

মির্জা আলমগীর বলেন, সংবিধান নির্বাচনকালীন সরকার সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো বিধান নেই। বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী যদি সংসদ বহাল রেখে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে সেই নির্বাচন কখনো সুষ্ঠু হবে না। কারণ সংসদ বহাল থাকা অবস্থায় নির্বাচনকালীন সরকারও হবে বিদ্যমান সরকারেরই অনুরূপ।

তিনি বলেন, সংবিধান ও গণতন্ত্র সবসময় সমার্থক বা সমান্তরাল হয় না। তাই যদি হতো তা হলে হিটলার ও মুসোলিনির শাসনকেও গণতান্ত্রিক বলা যেত। কারণ তাদের শাসনও সংবিধান অনুযায়ীই ছিল।

প্রধানমন্ত্রীর প্রতি তিনি আহবান জানিয়ে বলেন, আত্মভরিতা বাদ দিয়ে বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে জনগণের শান্তি ও স্বস্তির জন্য সব বিরোধী দলের সাথে আলোচনা করে নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ গ্রহণ করুন। বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার এটাই একমাত্র পথ। আসুন আমরা সবাই দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেই।

মির্জা আলমগীর বলেন, প্রধানমন্ত্রী যদি আন্তরিকভাবে নির্বাচনকালীন সরকার সম্পর্কে নতুন কিছু ভেবে থাকেন তাহলে তার উচিৎ হবে এ নিয়ে সব স্টেক-হোল্ডারদের সাথে সংলাপের উদ্যোগ নেয়া। আমরা মনে করি, একটি আন্তরিক ও হৃদ্যতাপূর্ণ সংলাপের মাধ্যমে ২০১৮ সালের নির্বাচন সম্পর্কে অর্থবহ সমাধানে আসা সম্ভব। দীর্ঘদিন ধরে সব বিরোধী দল ও সুশীল সমাজ সব দলের অংশগ্রহণের জন্য আলাপ আলোচনার মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পদ্ধতি নির্ধারণের দাবি জানাচ্ছে।

নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা কেমন হতে পারে তা নিয়ে বিএনপির একটি রূপরেখা ‘যথা সময়ে’ উপস্থাপন করা হবে বলে জানান তিনি।

বর্তমান সরকার জনগণের ম্যান্ডেটে ক্ষমতায় বসেনি উল্লেখ করে মির্জা আলমগীর বলেন, প্রধানমন্ত্রী আবার সেই নির্বাচন ব্যবস্থাতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা জনগনের আশা-আকাঙ্খাকে পদদলিত করা ছাড়া আর কিছু নয়। সমগ্র জাতির সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনে অংশ নিতে চায়।

প্রধানমন্ত্রীর জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে বিদ্যমান সংকট উত্তরণে স্পষ্ট কোনো রূপরেখা নেই উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আগামী নির্বাচন সম্পর্কে তিনি যা বলেছেন, তা খুবই অস্পষ্ট, ধোঁয়াশাপূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর। তার ভাষণ জাতিকে হতাশ, বিস্ময়-বিমূঢ় ও উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে সংকট আরো ঘনীভুত হয়েছে।

তিনি অভিযোগ করেন, পাকিস্তানের স্বৈর সামরিক শাসক ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান তার শাসনামলের ১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে জাঁকজমকপূর্ণভাবে উন্নয়ন দশক পালন করেছিলেন। গণতন্ত্রহীন তথাকথিত উন্নয়ন জনগণ গ্রহণ করেনি। পরিণতিতে তার মতো লৌহমানবকে গণঅভ্যুত্থানের মুখে বিদায় নিতে হয়েছে। বর্তমান সরকারও উন্নয়ন মেলা করছে। ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস পাকিস্তানি আমলের স্বৈশাসক ক্ষমতা আঁকড়ে রাখার জন্য যে ধরণের চমকের আশ্রয় নিয়েছিলেন, বাংলাদেশের বর্তমান সরকারও সেই একই পথে হাঁটছে। এদেশের জনগণ সব কিছু জানে ও বুঝে।

জিডিপির প্রবৃদ্ধি হার নিয়ে সরকারের দাবির সাথে বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অর্থনীতিবিদের ভিন্নতা তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, বেকারত্ব, কর্মসংস্থান সৃষ্টির শ্লথ গতি, মূল্যস্ফীতি, সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা, আর্থিকখাতে লুটপাট ও দুর্নীতি, মেগা প্রকল্পে ব্যয়ভার বৃদ্ধি, খেলাপী ঋণ পরিস্থিতি, আয় বৈষম্য, খাদ্য উৎপাদনে ঘাটতি, দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি, দারিদ্র্য হার, বিনিয়োগ পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী যেসব পরিসংখ্যান তুলে ধরেন সে সম্পর্কে বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে তার শাসনামলে উন্নয়নের এক চোখ ধাঁধানো বয়ান পেশ করেছেন। যার সাথে বাস্তবতার কোনো মিল নেই।

(জাস্ট নিউজ/একে/১৯২০ঘ.)