ফের অসুস্থ হয়ে নির্বাচনে যাওয়ার পথে এরশাদ

ফের অসুস্থ হয়ে নির্বাচনে যাওয়ার পথে এরশাদ

ঢাকা, ৪ মার্চ (জাস্ট নিউজ) : ২০১৪ সালে সরকারি দল এবং তৎকালীন তথাকথিত বিরোধী দল জাতীয় পার্টির পাল্টাপাল্টি পদত্যাগ নিয়ে নানা নাটকীয়তার পর তাদের কোনো ঘোষণাই টেকেনি। তখন জাতীয় পার্টি ভেঙ্গে যাওয়ার পর দলটির একাংশের চেয়ারম্যান হন এরশাদ। এরপর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে শুয়ে ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহিন নজীরবিহীন ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন এরশাদ। ১১তম সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এবারও ঠিক একই কৌশলে এগোচ্ছে জাতীয় পার্টি। এছাড়া দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নির্বাচনে অংশ নেয়া নিয়ে জাতীয় পার্টির নেতাদের বক্তব্যও অনেকটা তারই ইঙ্গিত দেয়।

গত শুক্রবার এরশাদ বলেছেন, শিগগিরই তার দলের মন্ত্রীরা পদত্যাগ করবেন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ এর মুখে পদত্যাগের এমন ঘোষণার পরে এমনটাই মনে করছেন সবাই।

জাতীয় পার্টির একটি সূত্র জানিয়েছে, এ পর্যন্ত দলের তিন মন্ত্রীর পদত্যাগের বিষয়ে দলীয়ভাবে কোনো আলোচনা হয়নি। আলোচনার কোনো লক্ষণও নেই। এছাড়া এ নিয়ে অতীতে কয়েকবার আলোচনা হলেও মন্ত্রীরা ওই আলোচনাকে গুরুত্ব দেননি।

দলীয় সূত্র বলছে, এরশাদ পদত্যাগের ঘোষণা দিলেও খুব শিগগিরই তারা পদত্যাগ করছেন না। পরিস্থিতি দেখেই এরশাদ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। আসন্ন নির্বাচন কেমন হবে, ওই নির্বাচনে সব দল অংশ নিলে কি পরিস্থিতি হয় তার একটা আগাম বার্তা পেলেই তিনি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।

দেশের রাজনীতিতে বিরল এক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে দলটি। পার্টির কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ হন বিরোধী দলের নেতা। একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের দায়িত্ব নেন পার্টি চেয়ারম্যান এরশাদ। দলের তিন নেতা দায়িত্ব নেন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর।

সরকার ও বিরোধী দলে অবস্থান নিয়ে দেশে-বিদেশে সমালোচনার মুখে পড়লেও গত চার বছরে অনেকটা নির্বিকার ছিল দলটি। কিন্তু জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে হঠাৎ সরব হয়েছেন নেতারা। তারা এবার পদত্যাগের সুর তুলেছেন। সংসদের বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ নিজেই প্রশ্ন তুলেছেন, তারা সরকারে আছেন না বিরোধী দলে? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবেদন জানিয়েছেন, জাতীয় মন্ত্রীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়ার।

শুক্রবার (২ মার্চ) রংপুরে পার্টি চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ ঘোষণা দিয়েছেন কিছু দিনের মধ্যেই তিনিসহ দলের মন্ত্রীরা পদত্যাগ করবেন। তবে দলের নেতারা মন্ত্রীদের পদত্যাগের বিষয়ে কোনো তথ্যই জানেন না। এ নিয়ে দলীয় ফোরামেও এখন পর্যন্ত কোনো আলোচনা হয়নি।

এদিকে ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর সরকার ও বিরোধী দলের অবস্থান নেয়া নিয়ে দলেই অস্বস্তি দেখা দেয়। দলীয় বিভিন্ন সভা-সমাবেশে নেতারা এ নিয়ে প্রকাশ্যে উষ্মা প্রকাশ করেন। সমালোচনার মুখে পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ কয়েক দফা পদত্যাগের ঘোষণা দেন। যদিও কোনোবারই দলীয় মন্ত্রীদের পদত্যাগের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি পার্টি ফোরামে। সরকার গঠনের বছরেই একটি টেলিভিশনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে জাপার মন্ত্রীদের পদত্যাগের কথা জানান এরশাদ।

তার এ ঘোষণার পর গণমাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন জাতীয় পার্টির তিন মন্ত্রী। তাদের কেউ কেউ উল্টো মন্ত্রী মর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের দায়িত্বে থাকা এরশাদের পদত্যাগ দাবি করেন। পরে অবশ্য কিছুদিন এরশাদ এ নিয়ে আর কথা বলেননি।

২০১৫ সালে রংপুরে এক অনুষ্ঠানে ফের এ নিয়ে কথা বলেন এরশাদ। জাতীয় পার্টিকে প্রকৃত বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে দলের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের পদত্যাগ করতে বলেন তিনি। পরের বছর জানুয়ারিতে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্যদের নিয়ে বৈঠকের পর এরশাদ বলেছিলেন, শিগগিরই তিনি পার্টির মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের পদত্যাগ করতে বলবেন।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১০০৫ঘ.)