দুদক এখন বিরোধী দল দমনের প্রধান হাতিয়ার : রিজভী আহমেদ

দুদক এখন বিরোধী দল দমনের প্রধান হাতিয়ার :  রিজভী আহমেদ

ঢাকা, ১৬ মার্চ (জাস্ট নিউজ) : দুদক সরকারের প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার হাতিয়ার মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, দুদক এখন বিরোধী দল দমনের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।

শুক্রবার সকালে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।

তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করে তারা আবারো প্রমাণ করল তারা সরকারের প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার হাতিয়ার। বাংলাদেশ ব্যাংক লুট হলো, সরকারী ব্যাংক লুট হয়ে ব্যাংকিং ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেলো, অথচ দুদক এক্ষেত্রে উটপাখীর মতো বালিতে মাথা গুঁজে রেখেছে। মামলা করা তো দুরে থাক এদের বিরুদ্ধে একটা শব্দও মুখ থেকে বের হয় না।

এদিকে বেগম খালেদা জিয়ার নি:শর্ত মুক্তির দাবিতে আগামী ২৪ মার্চ বরিশালে বিভাগীয় সমাবেশের তারিখ পরিবর্তন করে তা আগামী ৭ এপ্রিল করা হয়েছে।

রিজভী আহমেদ বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন ঠেকাতে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করেছে দুদক। গতকাল দুদকের পক্ষ থেকে লিভ টু আপিল করা হয়েছে। এর আগে এটর্নি জেনারেলের আবেদনের প্রেক্ষিতে আগে উচ্চ আদালত বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন রবিবার পর্যন্ত স্থগিত রেখেছেন। এটর্নি জেনারেল অন্যকে কষ্ট দিয়ে নিজে আনন্দলাভ করেন।

তিনি বলেন, যেভাবে সাবেক প্রধান বিচারপতিকে বন্দুকের জোরে জিম্মি করে পদত্যাগ পত্রে স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে যেভাবে নিম্ন আদালতে সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে সেখানে ন্যায় বিচার পাওয়ার আশা খুবই ক্ষীণ হয়ে পড়ছে বেগম খালেদা জিয়ার মামলায় সেটিরই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।

তিনি আরো বলে, বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জামিন বিষয়ে সরকারি চক্রান্ত লক্ষ্য করছে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ। শুধুমাত্র ব্যক্তিগতভাবে বিএনপি চেয়ারপার্সন ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় মিথ্যা মামলায় সাজা দেয়া হয়েছে। সরকার প্রধান অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে সম্পূর্ণ নির্দোষ বেগম জিয়াকে কারাবন্দি করেছে।

রিজভী আহমেদ বলেন, রাষ্ট্রায়াত্ত বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মূলধন পর্যন্ত খেয়ে ফেলা হয়েছে। আজও পত্রিকার হেড লাইন রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতির পরিমাণ ২০ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে খেলাপি ঋণ। এর উল্লম্ফন গতির লাগাম কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১২ হাজার কোটি টাকা। সব মিলিয়ে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৭৪ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। প্রকৃত টাকার অংক আরও অনেক বেশী। এই খেলাপী ঋণের টাকা সব ক্ষমতাসীনদের পকেটে ঢুকেছে। লুট করে শেয়ার বাজার শেষ করে দেওয়া হয়েছে।

এসব লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে দুদক ব্যবস্থা নিয়েছে এমন কথাতো শুনিনি। কারণ তারা সরকারি দলের লোকদের আত্মীয়স্বজন, সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিদেরও আত্মীয়স্বজন। এই লুটপাটের বিরুদ্ধে যাতে কোনো আওয়াজ না ওঠে সেজন্য গণতন্ত্রকে আইসিইউ-তে পাঠিয়ে গণমাধ্যমের কন্ঠরোধ করা হয়েছে এবং সোচ্চার বিরোধী দলকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

সরকারের অনাচারের বিরুদ্ধে জাতিকে নির্বাক করার জন্যই সকল সময়ের গণতন্ত্র পূণ:প্রতিষ্ঠার অসীম সাহসী বিপুল জনপ্রিয় নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাবন্দী করা হয়েছে। অন্তহীন ক্ষমতালিপ্সার কারণে প্রধানমন্ত্রী হিতাহিত বিবেচনাহীন, তিনি যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন। আর তাঁর ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে প্রস্তুত থাকে দুদক এর মতো দপ্তরগুলো।

দুদক প্রধানমন্ত্রীর চাহিদা মেটাতে বিএনপি-কে নিজ দেশেই পরাধীনতার সৃদৃঢ় বন্ধনে বন্দী করতে বেপরোয়াভাবে কাজ করছে। বেপরোয়া দখল আর দুর্নীতিই আওয়ামী লীগের বৈশিষ্ট্য। কিন্তু বন্ধুরা, ব্যথিত-বঞ্চিত ও অপমানিত জনগণ এই সরকারের অন্যায় উৎপীড়ণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, প্রতিরোধের সকল প্রস্তুতি নিচ্ছে।

জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবুকে পল্টন থানার দু’টি মামলায় ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করায় নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, এই রিমান্ড মঞ্জুর এক অজানা আতঙ্ক সৃষ্টি করে দেশের মানুষের মধ্যে। কারণ ইতোমধ্যে রিমান্ডে নির্যাতনে মৃতপ্রায় ছাত্রদল নেতা জাকির হোসেন মিলনকে কারাগারে পাঠিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে।

পুলিশের আইজিপি যেই বিবৃতি দেন না কেনো, সারা জাতি জানে রিমান্ডে নির্যাতনের কারণেই তরতাজা তরুণ ছাত্রনেতা জাকির হোসেন মিলনের মৃত্যু ঘটেছে। জাকির হোসেন মিলন হাসপাতালে নয় বরং নির্যাতনের পর কারাগারেই বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করেছে।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, আপনারা আজকের পত্রিকায় দেখেছে কীভাবে ডিবি পুলিশ ডিবিসি’র ক্যামেরাপার্সন সুমন হাসানকে হাতকড়া লাগিয়ে পৈশাচিক কায়দায় নির্যাতন করা হয়েছে। এই ঘটনায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই পুণরুজ্জীবিত ও বহুব্যাপী সন্ত্রাস এক বিপজ্জনক মাত্রা দৃশ্যমান হলো। কাজেই আইজিপি’র বিবৃতি সত্যের অপলাপ।

শফিউল বারী বাবুকে আবারো রিমান্ডে নেয়া এবং ডিবিসি’র ক্যামেরাপার্সন সুমন হাসানকে ডিবি পুলিশ কর্তৃক ব্যাপক নির্যাতনের ঘটনায় আমি দলের পক্ষ থেকে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি, অবিলম্বে শফিউল বারী বাবুসহ যেসব নেতাকর্মী রিমান্ডে আছেন তাদের মিথ্যা ও কাল্পনিক মামলা প্রত্যাহার করে নি:শর্ত মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি, সুমন হাসানকে নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করছি।

(জাস্ট নিউজ/ডেস্ক/এমআই/১২৩৫ঘ.)