ড. ইউনুসকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা

`আমাকে গ্রেপ্তার কারা করিয়েছিল জানি, হিসাব পরে নেবো'

`আমাকে গ্রেপ্তার কারা করিয়েছিল জানি, হিসাব পরে নেবো'

ঢাকা, ২৭ মার্চ (জাস্ট নিউজ) : এক এগারোর সরকারের সময় গ্রেপ্তারের পেছনে কারা ছিল সেই তথ্য জানা গেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, তাদের বিষয়ে হিসাব পরে নেয়া হবে। মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আজ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত সভায় তিনি স্বাধীনতার পর থেকে দেশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের বিষয় উল্লেখ করে এক এগারোর সরকারের সময় তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করা, স্বাধীনতার চেতনা নষ্ট করা আর ইতিহাসকে বিকৃত করার চেষ্টা করেছিলো বিএনপি। বাংলাদেশকে একটা সন্ত্রাসের দেশ হিসেবে পরিনত করেছিলো। ক্ষমতায় থেকে তখন অত্যাচার নির্যাতন করেছে বিএনপি সরকার। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসার পর প্রথম গ্রেপ্তার করা হলো আমাকে। আমি তো তখন ক্ষমতায় ছিলাম না। কারা করিয়েছে সেটা আমরা অন্তত এখন জানি। ওই হিসাব পরে নেবো আমরা।’ নোবেল বিজয়ী ড. ইউনুসকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, একটা ভদ্রলোক, বিশ্বে অনেক নাম করেও তার মন ভরে নাই। একটি ক্ষুদ্র ব্যাংকের এমডি পদ ছাড়ার লোভ সামাল দিতে পারেনি। সেই এমডি পদের লোভে পড়ে পদ্মা সেতু বন্ধ করার জন্য আমেরিকায় লবিং করে। পরে সেতুর টাকা দেয়া ওয়ার্ল্ড ব্যাংক বন্ধ করে দেয়। জাতির পিতা তো বলেছেন, কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না। আমরা বাঙ্গালী আর আমি বঙ্গবন্ধুর কন্যা। কাজেই আমি সেটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম। দুর্নীতির অভিযোগ আনতে চেয়েছিলো। বহু চেষ্টা করেছে। বিএনপি ক্ষমতায় এসে বিশেষ এজেন্সি হায়ার করে আমার বিরুদ্ধে, আমার বোনের বিরুদ্ধে, আমার ছেলে-মেয়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতি পায় কি না। পায়নি। আবার সেই এমডি সাহেবও আমেরিকাকে দিয়ে তদন্ত করিয়েছেন। না পেরে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের টাকা বন্ধ করে আমাকে দোষারোপ করতে চেষ্টা করেছিলেন। চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম প্রমাণ করো। প্রমাণ করতে পারেনি। আমেরিকার ফেডারেল কোর্টে মামলা হয়েছিলো। তারা বলে দিয়েছিলো সমস্ত অভিযোগ ভূয়া। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, একটা জিনিস মনে রাখবেন,বিএনপি ক্ষমতায় এসে বাংলাদেমকে ৫বার দুর্ণীতিতে চ্যাম্পিয়ন করেছে। আজ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে দেখিয়েছে আমরা যে দুর্নীতি করি নাই তা আজ শুধু মুখে বলার না, তা আজ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। আজ বাংলাদেশের মানুষের মুখ উজ্জল হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ উন্নত জীবন পাক সেটাই আমাদের একমাত্র চাওয়া। জাতির পিতা স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। আমরা বলেছি, স্বাধনিতার সুফল আমরা বাংলার মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেব।

তিনি বলেন, অর্থ-সম্পদ চিরদিন থাকে না। অর্থ-সম্পদ কেউ কখনও কবরে নিয়েও যেতে পারে না। সম্পদের জন্য মারামারি-কাটাকাটি করে। মরে গেলে সব রেখেই কবরে যেতে হয়। এটাই বাস্তবতা। কিন্তু মানুষের জন্য কাজ করে যাওয়া একজন রাজনীতিবিদের সেটাই কর্তব্য। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সেটাই করে গেছেন। তার কণ্যা হিসেবে সেটাই আমার দায়িত্ব মনে করি। আমাদের লক্ষ্য তৃণমুল থেকে জনগণের উন্নয়ন করা। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর দেশের উন্নয়ন করলেও ষড়যন্ত্রের কারণে ২০০১ সালের নির্বাচনে জয়ী হতে পারেননি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০১ সালে ষড়যন্ত্র হলো। ভোট বেশি পেয়েও ক্ষমতায় আসতে পারিনি। ওই সময় বিএনপি-জামায়ত জোট ক্ষমতায় এসে শুরু করলো জুলুম-অত্যাচার। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মতো তারা গ্রামের পর গ্রাম নির্যাতন চালিয়েছে। মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে, মানুষের চোখ তুলে নিয়েছে, হাত-পা ভেঙে দিয়েছে, ক্ষেতের ফসল নষ্ট করেছে, ঘর পুড়িয়ে দিয়েছে, পুকুর কেটে দিয়েছে, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ মেরেছে। ভোট দেয়ার অপরাধে এমন কোনও অত্যাচার নেই, তারা করেনি। ছয় বছরের শিশুকে পর্যন্ত ধর্ষণ করেছে। প্রতিহিংসার বশে তারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পদাঙ্ক অনুসরণ করে এসব করেছে। পাঁচ পাঁচটি বছর দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করেছে বাংলাদেশকে।

আলোচনা সভায় দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর হারুন উর রশিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাদেকা হালিম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

(জাস্ট নিউজ/একে/২১২০ঘ.)