প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর কোন পথে যাবে আন্দোলন?

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর কোন পথে যাবে আন্দোলন?

ঢাকা, ১১ এপ্রিল (জাস্ট নিউজ) : সরকারের প্রতিশ্রুতির পর আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা এলেও দুই মন্ত্রীর সমন্বয়হীন বক্তব্য আন্দোলনকারীদের মধ্যে অবিশ্বাস ও সন্দেহের সৃষ্টি করে৷ নতুন করে শুরু হয় আন্দোলন৷ তবে নতুন মোড় নিয়েছে সংসদে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য৷

সরকারি চাকরির কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে সরকারের একটি প্রতিনিধি দল সোমবার বৈঠক করেন৷ সেই বেঠকে জানানো হয়, সরকার এক মাসের মধ্যে (৭ মে) পরীক্ষা- নিরীক্ষা করে কোটা সংস্কারে ব্যবস্থা নেবে৷ সাধারণ ছাত্র অধিকার আন্দোলন পরিষদের নেতারা তাই আন্দোলন এক মাসের জন্য স্থগিতের ঘোষণা দেন৷ তবে একাংশ তা প্রত্যাক্ষাণ করে আন্দোলন অব্যাহত রাখে৷

কিন্তু সোমবার রাতেই কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারের আলোচনায় কোটা সংস্কার নিয়ে বলেন, “পরিষ্কার বলতে চাই, মুক্তিযুদ্ধ চলছে, চলবে৷ রাজাকারের বাচ্চাদের আমরা দেখে নেবো৷ তবে ছাত্রদের প্রতি আমাদের কোনো রাগ নেই৷ মতলববাজ, জামায়াত-শিবির, তাদের এজেন্টদের বিরুদ্ধে সামান্য শৈথিল্য দেখানো হবে না “

পরদিন, অর্থাৎ মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত সচিবালয়ে বলেন,“সরকারি চাকরিতে কোটা অবশ্যই থাকবে, তবে এটি সংস্কার করা উচিত৷ কোটা সংস্কারের বিষয়টি আমার মন্ত্রণালয়ের কাজ নয়৷ তারপরেও আমি প্রধামন্ত্রীকে পরামর্শ দিয়েছি এটিকে সংস্কার করার জন্যে৷ বাজেটের পর ৫৬ শতাংশর কোটা অবশ্যই সংস্কার করা হবে৷ কারণ, কোটায় প্রার্থী পাওয়া যায় না৷”

প্রধানত এই দুই মন্ত্রীর বক্তব্য কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের মধ্যে সন্দেহ সৃষ্টি করে এবং আন্দোলনকারীরা ক্ষুব্ধ হন৷ তারা এক মাসের সময় নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়েন এবং সরকারের সঙ্গে সমঝোতার বিষয় নিয়ে তাঁদের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি হয়৷ মঙ্গলবার সকালে মতিয়া চৌধুরীকে তার বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান৷ এরমধ্যে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের ব্যাখ্যাও আশা করেন তাঁরা৷

তাদের বেধে দেয়া সময়ে তারা কোনো জবাব না পেয়ে মঙ্গলবার আবার ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে নেমে যান৷ তারা জানান, প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট ঘোষণা ছাড়া আন্দেলন চালিয়ে যাবেন৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা গবেষণা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, “আন্দোলনকারী ছাত্রদের সঙ্গে আমার নিয়মিত যোগাযোগ আছে৷ সোমবার সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠকের পর তারা আশ্বস্ত হয়েছিল৷ তারা সরকারের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করে যে, সরকার কোটা সংস্কারে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেবে৷ কিন্তু অর্থমন্ত্রীর কথায় তারা বিভ্রান্ত হয়৷ তারা সরকারের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলে৷ সরকারের আসলে নীতি কী, তা তারা বুঝতে ব্যর্থ হয়৷ আর মতিয়া চৌধুরীর কথায় তারা অপমান বোধ করে৷ তারা মনে করে, তাদের ভিন্নভাবে চিহ্নিত করা হচ্ছে৷” তিনি বলেন, “এই আন্দোলন একটি সুষ্ঠু সমাধানের পথ খুঁজে পাওয়ার পরও মন্ত্রীদের এই দায়িত্বহীন বক্তব্য পরিস্থিতি জটিল করেছে৷”

সাংস্কৃতিক কর্মী সুমন জাহিদ বলেন, অর্থমন্ত্রী যা বলেছেন, তা সরকারের সিদ্ধান্তের বিপরীত৷ ফলে, স্বাভাবিক কারণেই আন্দোলনকারীরা ক্ষুব্ধ হয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন৷”

গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার বলেন, “শুধু এবার না, এর আগেও বিভিন্ন ঘটনায় আমরা দেখেছি মন্ত্রীরা বেফাঁস মন্তব্য করে পরিস্থিতি জটিল করেছেন৷ কোটা সংস্কার আন্দোলন একটা যৌক্তিক আন্দোলন৷ সরকার সেটা শেষ পর্যন্ত স্বীকার করে সংস্কারের জন্য এক মাস সময়ও নিয়েছে, তারপর দুই মন্ত্রী দায়িত্বহীন কথা বলে আবার ছাত্রদের মাঠে নামতে বাধ্য করেছেন৷”

ইমরান এইচ সরকার নিজেও তার ফেসবুক পোস্টে রবিবার রাতে একজন আন্দোলনকারীর মৃত্যুর ভুয়া খবর দিয়েছিলেন৷ সে ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি একটি টেলিভিশন চ্যানেলের খবর দেখে ওই পোস্ট দিয়েছিলাম৷ সেখানে লাইভ অনুষ্ঠানে আন্দেলনের আহ্বায়ক মামুন ওই মৃত্যুর কথা বলেন৷ পরে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত না হওয়ায় আমি পোস্ট সরিয়ে ফেলি৷”

কোটাই থাকবেনা, কোটার দরকার নাই : প্রধানমন্ত্রী

মন্ত্রীদের বক্তব্যে কোটা সংস্কারের আন্দোলন নতুন করে শুরু করার পর এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের অপেক্ষায় ছিলেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা৷ বুধবার সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদে এ বিষয়ে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানকের প্রশ্নের জবাবে দেয়া বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি বলেন, “কোটা নিয়ে যখন এতকিছু, তখন কোটাই থাকবে না৷ কোনো কোটারই দরকার নেই৷” তিনি আরো বলেন, “কোটা থাকলেই সংস্কারের প্রশ্ন আসবে৷ এখন সংস্কার করলে আগামীতে আরেক দল আবারো সংস্কারের কথা বলবে৷ কোটা থাকলেই ঝামেলা৷ সুতরাং কোনো কোটারই দরকার নেই৷ কোটা ব্যবস্থা বাদ, এটাই আমার পরিষ্কার কথা৷”

এভাবে কোটা বাদ দেয়ার ঘোষণা দিলেও প্রতিবন্ধী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা যাতে অধিকার বঞ্চিত না হয় সেদিকে দৃষ্টি দেবেন বলেও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী৷ এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “প্রতিবন্ধী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য আমরা আলাদাভাবে চাকরির ব্যবস্থা করবো৷”

প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে সাধারণ ছাত্র অধিকার আন্দোলন পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক ফারুক হাসান ডয়চে ভেলেক বলেন, “আমরা কাল (বৃহস্পতিবার) আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাবো৷ রাতে আমাদের অবরোধ থাকবে না।” তিনি আরো বলেন,“সংসদে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্য রাতে আমরা ভালোভাবে শুনবো, বিচার-বিশ্লেষণ করবো৷ তার বক্তব্য কতটুকু গ্রহণযোগ্য, সেটা বিশ্লেষণ করে আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত জানাবো। “

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর কোটা সংস্কার আন্দোলন কোন পথে যায় সেটাই এখন দেখার বিষয়৷ সূত্র: ডয়চে ভেলে

(জাস্ট নিউজ/একে/২১২০ঘ.)