স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্য মিথ্যাচার

‘খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে টালবাহানা চলছে’

‘খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে টালবাহানা চলছে’

ঢাকা, ১৮ এপ্রিল (জাস্ট নিউজ) : কারাবন্দী দলের চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে সরকার ও কারাকর্তৃপক্ষ টালবাহানা করছে মন্তব্য করে তাকে সুচিকিৎসার জন্য অবিলম্বে ইউনাইটেড হাসপাতালে নেয়ার আবারো দাবি জানিয়েছে বিএনপি। বুধবার নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।

দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমরা দেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা নিয়ে বারবার গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করলেও কারাকর্তৃপক্ষ কোনো উদ্যোগই গ্রহণ করছে না। বরং স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন-বেগম খালেদা জিয়াকে যথাযথ মর্যাদায় চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্য ডাহা মিথ্যাচার। সরকারী মেডিকেল বোর্ড দেশনেত্রীকে অর্থপেডিক বেড দেয়াসহ যেসব চিকিৎসার সুপারিশ করেছিল তা এখনো পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা হয়নি। এছাড়া দেশে অব্যাহত গুম খুনের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে একদিন জবাবদিহি করতেই হবে বলে মন্তব্য করেন রিজভী আহমেদ।

রিজভী বলেন, কারাগারে বেগম খালেদা জিয়ার কোনো চিকিৎসাই হচ্ছে না। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের দ্বারা যেসব চিকিৎসা সেবা পেতেন সে সুযোগ থেকেও তিনি বঞ্চিত হচ্ছেন। মনে হচ্ছে এর পেছনে সরকারী কোনো গভীর চক্রান্ত রয়েছে।

জাল নথি তৈরি করে মিথ্যা ও সাজানো মামলায় সরকারের নির্দেশিত রায়ে বেগম খালেদা জিয়াকে কারাবন্দী করার পর থেকে এখন পর্যন্ত তার সাথে কারাকর্তৃপক্ষ ও সরকার যে ধরনের আচরণ করেছে এবং তার চিকিৎসা নিয়ে যে টালবাহানা করছে তাতে আমরা দেশনেত্রীর জীবন নিয়ে গভীর শঙ্কা প্রকাশ করছি।

রিজভী বলেন, বেগম খালেদা জিয়া হাইকোর্ট থেকে জামিন পেলেও তার জামিন স্থগিত করাও ওই চক্রান্তেরই অংশ। সুতরাং বিশ্বের অন্যান্য দেশের নির্দয় স্বৈরশাসকরা তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের প্রতি নির্মম আচরণের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বর্তমান বাংলাদেশের স্বৈরশাসকও দেশনেত্রীর বিরুদ্ধে নির্দয় আচরণ করে তাকে এক ভয়াবহ পরিণতির দিকে ঠেলতে মারাত্মক চক্রান্তজাল বুনছে।

বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ও অসুস্থতাকে আড়াল করতে সরকারের নানা ফন্দিফিকির বন্ধ করে তার নিজস্ব চিকিৎসকদের দিয়ে চিকিৎসা সেবা প্রদান করার তিনি দাবি জানান।

প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাজ্য সফর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভোটারবিহীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কমনওয়েলথ সম্মেলনে যোগ দিতে বর্তমানে যুক্তরাজ্যে রয়েছেন। সেখানে একটি অনুষ্ঠানে তাকে ব্রিটেনের স্বনামধন্য টিভি চ্যানেল-ফোর এর পক্ষ থেকে বাংলাদেশে বিরোধী দল ও মতের ব্যক্তিদের নিখোঁজ হওয়া নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি প্রশ্নটি এড়িয়ে যান। আসলে এটা যুগে যুগে স্বৈরশাসকদেরই একটা আচরণ।

রিজভী আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের গুম-খুন ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড নিয়ে সাংবাদিকদের এড়িয়ে গেলেও একদিন প্রধানমন্ত্রীকে এর জবাব দিতেই হবে। বিএনপিসহ বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের গুম, খুন, অপহরণ, বিচার বহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন চালিয়ে সরকার পতন ঠেকানো যাবে না।

তার অভিযোগ ২০১৬ সালে গ্রেফতার ও আটক নিয়ে সুপ্রীম কোর্ট পুলিশের ক্ষমতার অপব্যবহার ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উৎপীড়ণের বিরুদ্ধে বিচারককে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দিয়ে রুল জারি করেছিল, কিন্তু সরকারের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনাকে শুধু অগ্রাহ্যই করছে না, বরং ঠান্ডা মাথায় বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আইন বহির্ভূতভাবে গ্রেফতার, পুন:গ্রেফতার, গ্রেফতার না দেখিয়ে আটক করে রাখাসহ অবিরাম নিষ্ঠুর পৈশাচিক নিপীড়ণ-নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে।

তার মতে, সম্প্রতি এর হাড়হিম করা ঘটনা হলো কোটা সংস্কার আন্দোলনের তিন নেতাকে চোখ বেঁধে মাইক্রোবাসে তুলে ডিবি অফিসে নিয়ে যাওয়া। সুপ্রীম কোর্টের রায় অনুযায়ী বিদ্যমান আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তবে এসব বিষয়ে সরকার নিশ্চল, নিশ্চুপ এবং দুস্কর্মের সহায়তাকারী। সুতরাং এই ঘটনা আইনের শাসনের চোখেই কালো কাপড় বাঁধার শামিল।

কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রসঙ্গে রিজভী আহমেদ বলেন, আমরা ইতোপূর্বেই বলেছিলাম-ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের মুখে রাগান্বিত ও ক্ষুদ্ধ প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক চাকরিতে সম্পূর্ণ কোটা প্রত্যাহার করে নেওয়া এক ভয়ঙ্কর দুরভিসন্ধির অংশ। এখন এই দুরভিসন্ধির বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে আন্দোলনকারী ছাত্রদের ওপর সরকারের বিপজ্জনক আক্রমণের ছোবলের মধ্য দিয়ে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সমগ্র শিক্ষাঙ্গনে আতঙ্কের ছায়া বিস্তারলাভ করেছে। আন্দোলনকারী ছাত্র-ছাত্রীরা অজানা আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। কাকে কখন অদৃশ্য করা হবে এই ভয়ে তারা দিশেহারা। সরকারের আগ্রাসী বাহিনীর বিষাক্ত থাবা এখন ক্যাম্পাসগুলোর ওপর ঝাপটা মারতে শুরু করেছে। তবে অবৈধ সরকারের অনাচারে বিশ্বাসী আইনশৃঙ্খলার নানা বাহিনীর আগ্রাসী ছোবল সত্ত্বেও তারুণ্যদীপ্ত ছাত্ররা অতীত ঐতিহ্যের অহংকারে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে, ন্যায্য দাবির পক্ষে আপোসহীন পতাকাবাহী হয়ে এগিয়ে চলবে।

তিনি বলেন, ছাত্ররাই সকল স্বৈরাচারের নির্মম শৃঙ্খলের ব্যারিকেড ভাঙ্গার অগ্রদূত। এরা ৫২ থেকে এখন পর্যন্ত কুৎসিত, কদর্য একনায়কতন্ত্রের হুমকির মুখেও বুক চিতিয়ে বুলেট বরণ করতে প্রস্তুত। এরা হতমানে অপমানে নয়, সুখ-সম্মানে বাঁচবার/অধিকার কাড়তে দাস্যের নির্মোক ছাড়তে অগণিত/ছাত্রদের প্রাণপন যুদ্ধ চলবেই চলবেই/তাদের সংগ্রাম চলবেই।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের স্বৈরশাসকদের যেভাবে পতন হয়েছে, বাংলাদেশের বর্তমান স্বৈরশাসকের পতনও হবে একইভাবে। যা অত্যাসন্ন।

রিজভী আহমেদ বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি মশিউর রহমান কেন্দ্র ঘোষিত কর্মীসভার কর্মসূচি পালন করতে গেলে পুলিশ কোনো কারণ ছাড়াই কর্মসূচি করতে দেয়নি। উল্টো পুলিশ তাকে তার বাসায় অবরুদ্ধ করে রাখে। এটা আওয়ামী শাসনের চিরপরিচিত নমুনা।

দুর্বৃত্তদের শাসন যতদিন অব্যাহত থাকবে ততদিনই গণতন্ত্রের চোখে তারা কালো কাপড় বেঁধে রাখবে। আমি উক্ত ন্যাক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এছাড়া আজ দিনাজপুরে বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত কর্মীসভা করতে দিচ্ছে না পুলিশ। পুলিশ দিনাজপুর বিএনপি অফিসে তালা লাগিয়ে দিয়েছে। আমি পুলিশের এই ন্যাক্কারজনক ঘটনায় তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানাই।

তিনি জানান, গতরাত ১০টায় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ঢাকা কলেজ শাখার সিনিয়র সহ-সভাপতি এইচ এম রাশেদকে ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বংশাল থানা বিএনপি নেতা তাজ উদ্দিন তাইজুকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার করা হয়েছে। আমি তাদেরকে গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে তাদের নি:শর্ত মুক্তি দাব করছি।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১৩১৫ঘ.)