আন্দোলনেই জোর দিচ্ছে বিএনপি

আন্দোলনেই জোর দিচ্ছে বিএনপি

ঢাকা, ২৫ এপ্রিল (জাস্ট নিউজ) : হাইকোর্টের দেওয়া বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন ও রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের ওপর শুনানি হবে আগামী ৮ মে। শুনানি শেষে জামিনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে। ওই দিনকে সামনে রেখে সরকারকে ‘চাপে’ রাখতে আন্দোলনের গতি বাড়িয়েছে বিএনপি। এরই মধ্যে টানা ৩দিন রাজধানীতে বিক্ষোভ হয়েছে। জামিন না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি আসবে বলে দলের নীতিনির্ধারকরা জানিয়েছেন।

বিএনপি নেতারা মনে করেন, বেগম খালেদা জিয়া ‘প্রচণ্ড’ অসুস্থ হওয়ায় তাকে মুক্তি দিতে সরকারের ওপর এমনিতেই চাপ বাড়ছে। এ চাপ আরো বাড়াতে কর্মসূচিও বাড়িয়েছে দল। এবার প্রথম ধাপে ১ মে পর্যন্ত আট দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এর পর আরো কর্মসূচি আসবে, যা রমজানেও থাকবে। এভাবে আগামী প্রায় এক মাস এ দাবিতে কর্মসূচি থাকবে বলে দলের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের নেত্রীর মুক্তির দাবিতে আন্দোলন চলছে। মুক্তি না হলে আন্দোলন আরো জোরদার করা হবে। তার মুক্তির বিষয়টি শুধু আমাদের নয়, সারাদেশের জনগণের দাবি।

কর্মসূচির অংশ হিসেবে চলতি সপ্তাহে টানা দুদিন (২২ ও ২৩ এপ্রিল) রাজধানীর বাড্ডা ও বায়তুল মোকাররমে বিক্ষোভ মিছিল হয়। বুধবার দলের কার্যালয়ের সামনে এবং ২৬, ২৮ ও ২৯ এপ্রিল ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল বিক্ষোভ করবে। শুক্রবার দলীয় নেত্রীর রোগমুক্তি কামনায় মসজিদে মসজিদে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।

এর পরের ধাপে, ১ মে’র পর নতুন কর্মসূচি দেবে বিএনপি, যার প্রত্যেকটিতে বড় ধরনের শোডাউন হবে। অর্থাৎ আগামী মাসে যে কর্মসূচি দেওয়া হবে, তার মূল লক্ষ্য হলো শোডাউন করা।

দলীয় সূত্র জানায়, টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত মানবপ্রাচীর, ঢাকার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত মানববন্ধন করা হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে আবারো সমাবেশের অনুমতি চাইবে দল। এতে ব্যাপক শোডাউনের পরিকল্পনা রয়েছে। এর মাধ্যমে বিএনপি সরকারকে মেসেজ দিতে চায় যে, জনগণ সরকারের সঙ্গে নেই।

বিএনপি নেতারা মনে করছেন, খালেদা জিয়ার মামলাটি এমনিতেই ‘মিথ্যা’। তার জামিন পাওয়ার মতো যথেষ্ট গ্রাউন্ড রয়েছে। আর এখন তো তিনি অসুস্থ।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিমকোর্ট বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবদিন বলেন, আমরা প্রত্যাশা করি ৮ মে আদালত স্বাধীনভাবে কার্য পরিচালনা করবেন। আইনি বিধান অনুযায়ী চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক দিক বিবেচনায় তাকে জামিন দেবেন।

বিএনপির অন্তত তিন নেতার সঙ্গে আলাপকালে তারা বলেন, জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে চূড়ান্ত আন্দোলনে যাওয়ার পরিকল্পনা তাদের নেই। তবে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে তারা কর্মসূচি বাড়াবেন। জুলাইয়ে আন্দোলনের গতি আরো পাবে। এর মাসখানেক পর হয়তো বিএনপি চূড়ান্ত আন্দোলনের দিকে যেতে আন্দোলনের তীব্রতা বাড়াতে পারে।

জানা গেছে, কঠোর আন্দোলনে গেলে এখন দলের শক্তি ক্ষয় হবে, এতে সরকারের শেষ পর্যায়ে আন্দোলনের সামর্থ্য হারানোর আশঙ্কা থাকবে। তবে হঠাৎ বিশেষ কারণে আন্দোলনে নামার মতো প্রস্তুতিও রাখছেন নেতাকর্মীরা।

একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতারা নিয়মিত কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। পশ্চিমা কিংবা পার্শ্ববর্তী দেশের চেয়ে পূর্বদিকের কূটনীতির দিকে নজর বেশি দিচ্ছে দলটি। খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার পর বেশ কয়েকটি বৈঠকও হয়েছে। এদিকে আন্দোলন চলাকালীন বিএনপির ৮ নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধানের বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ দলটি।

তারা মনে করেন, বেগম খালেদা জিয়ার আন্দোলনে সক্রিয় নেতাদের চাপে রাখতে দুদককে ব্যবহার করা হচ্ছে। এরই মধ্যে সোমবার দলের ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহানকে ৭ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক।

এ বিষয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দুর্নীতি করে আওয়ামী লীগ, তলব করা হয় বিএনপিকে। দেশে তো এখন আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কেউ দুর্নীতি করতে পারে না। হয়রানি ও নির্যাতন করতেই এ পন্থা নেওয়া হয়েছে।

অবশ্য এ মুহূর্তে বিএনপির নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার কথা ছিল। খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানোর কিছুদিন আগ পর্যন্ত দলের ভেতর কিছুটা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল, যা এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে যাওয়ার কথা। এখন সেই প্রস্তুতি বাদ দিয়ে দলটি আন্দোলনের মাঠে সক্রিয়। এমনকি বেগম জিয়া ছাড়া নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়টিও দলটি ভাবছে না।

এ বিষয়ে স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আগামী নির্বাচন একমাত্র শর্ত হতে পারে। তা হলো নিরপেক্ষ সরকার। ওই সরকার এলে বেগম জিয়া ও তারেক রহমান ন্যায়বিচার পাবেন। তাদের নেতৃত্বেই আমরা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেব। এর বাইরে আমাদের কোনো ভাবনা নেই।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১১১০ঘ.)