মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে বিএনপির বর্ণাঢ্য র‌্যালি

ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় সবাইকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান মির্জা আলমগীরের

ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় সবাইকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান মির্জা আলমগীরের

ঢাকা, ১৭ ডিসেম্বর (জাস্ট নিউজ): বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়াকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করার জন্য তিনি সবাইকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। রবিবার বিকালে বিজয় দিবসের র‌্যালি শুরুর আগে পিকআপ ভ্যানের ওপর অস্থায়ী মঞ্চে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ মন্তব্য করেন। এরপর বেলা ৩টায় তিনি বিজয় র‌্যালির উদ্বোধন করেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজ শান্তিপূর্ণভাবে বিজয় র‌্যালি করার মাধ্যমে গণতন্ত্রের যে দাবি, সেই দাবিকে সোচ্চার করতে হবে। ষড়যন্ত্র করে আজ বেগম খালেদা জিয়াকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আসুন, আমরা রুখে দাঁড়াই। আমরা সব মানুষকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হই। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষকে কখনোই পদদলিত করে রাখা যাবে না। বাংলাদেশের মানুষকে কখনো দাবিয়ে রাখা যাবে না। বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতার জন্য অতীতে যেমন প্রাণ দিয়েছে, তেমনি আবারো তারা প্রাণ দিয়ে হলেও গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করবে।

মির্জা আলমগীর বলেন, আমরা একটি স্বাধীন, সমৃদ্ধ ও শান্তির বাংলাদেশ চাই। আমরা চাই আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একটি সুন্দর, শান্তিময় গণতান্ত্রিক পরিবেশে বসবাস করুক। আমরা চাই, আমাদের দেশের জনগণ কথা বলতে পারুক। সাংবাদিকেরা মুক্তভাবে লিখতে পারুক। একটি মুক্ত বাংলাদেশ আমরা চাই। তিনি বলেন, কিন্তু দুর্ভাগ্যের কথা, এই আওয়ামী লীগ সরকার-এই ফ্যাসিস্ট সরকার শুধু একদলীয় সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করার জন্য, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সব গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়ে বিএনপিকে পদদলিত করতে চায়।

স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়নি দাবি করে মির্জা আলমগীর বলেন, আমরা যে স্বপ্ন দেখে স্বাধীনতাযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়নি। আজকে ৪৭ বছর পরেও আমাদের দুর্ভাগ্যের সঙ্গে আমাদের মা-বোনদের হাহাকার শুনতে হয়। আমাদের ছেলেরা আজকে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করতে গিয়ে প্রাণ বিসর্জন দেয়, গুম হয়ে যায়- আত্মত্যাগ করে। তিনি বলেন, আজ বিএনপির হাজার হাজার নেতা-কর্মী কারাগারে। এই কারাগার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে হবে। সেই কারাগার ভাঙতে হবে এবং কারাগার ভেঙে গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে হবে।

মির্জা আলমগীর আরো বলেন, আজকের এই দিনে আমরা জাতীয় ঐক্যের আহ্বান করছি। আজকের এই দিনে আমরা একটি সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচনের জন্য নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানাচ্ছি।

সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, স্বাধীনতা-উত্তর যারা ক্ষমতায় এসেছিল, তারা মনে করে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে আওয়ামী লীগের জন্য। এই দেশ স্বাধীন হয়েছে শুধু একটি পরিবারের জন্য। তারা জনগণের অধিকার কেড়ে নিয়ে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। এদেরই প্রেতাত্মা আবারো ক্ষমতায় এসেছে। তারা আবারো নতুনভাবে বাকশাল গঠন করেছে। বাকস্বাধীনতা হত্যা করে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে হত্যা করেছে। আর এসব করতে গিয়ে তারা বিচারবহির্ভূত হত্যা করছে, গুম-খুন করছে।

সংক্ষিপ্ত সমাবেশের পর দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর র‌্যালিতে অংশগ্রহণ করেন। এ সময় পিকআপ ভ্যানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ও প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী অ্যানি মহাসচিবের সঙ্গে ছিলেন।

জাতীয়তাবাদী মহিলা দল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলসহ বিএনপির অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা র‌্যালিতে অংশগ্রহণ করেন। র‌্যালিতে রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের নেতা-কর্মীরা অংশগ্রহণ করেন। র‌্যালিটি নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে শুরু হলেও আগত নেতা-কর্মীদের মিছিল শান্তিনগর মোড় পেরিয়ে যায়। র‌্যালিটি মালিবাগ মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।

র‌্যালিতে অংশ নেওয়া বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উদ্দীপনা লক্ষ করা গেছে। ব্যান্ড পার্টির বাজনার তালে তালে নেতা-কর্মীরা নাচছিলেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) শিল্পীরা একটি পিকআপের ওপর গান গাইছিলেন। র‌্যালিতে দুজন কর্মীকে দেখা গেল দুটি বিশালাকৃতির ঘোড়া নিয়ে হাজির হতে। তারা এক হাতে ঘোড়ার দড়ি ও অন্য হাতে একটি বড় আকৃতির জাতীয় পতাকা ধরে ছিলেন।

বিজয় র‌্যালিতে অংশ নেওয়া নেতা-কর্মীদের মধ্যে নারীদের পরনে ছিল লাল-সবুজ রঙের শাড়ি। এ ছাড়া পুরুষ কর্মীদের মাথায় বিএনপির দলীয় পতাকার রঙের টুপি ও মাথায় জাতীয় পতাকা বেঁধে উল্লাস করতে দেখা গেছে। র‌্যালির সময় কাকরাইল, শান্তিনগর মোড় ও নয়াপল্টন এলাকায় গাড়ি চলাচল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ ছিল।

এ ছাড়া বিএনপির বিজয় র‌্যালিকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক অবস্থান লক্ষ করা গেছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের উল্টো দিকে দাঙ্গা পুলিশের একটি বড় দল সতর্ক অবস্থানে ছিল। নয়াপল্টন মোড়ে পুলিশের একটি সাঁজোয়া যান (এপিসি) ও একটি জল কামানের গাড়ি জমা করে রাখা হয়েছিল। কাকরাইল মোড়ে দাঙ্গা পুলিশের অপর একটি দলের সতর্ক অবস্থান দেখা গেছে। র‌্যালিকে ঘিরে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সদস্যদেরও সতর্ক অবস্থান দেখা গেছে।

র‌্যালিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান আমানউল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব-উন নবী খান সোহেল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

(জাস্ট নিউজ/একে/২১০৯ঘ.)