ভোট কেন্দ্র পাহারা দিতে হবে যাতে আওয়ামী লীগ চুরি করতে না পারে: মির্জা আলমগীর

ভোট কেন্দ্র পাহারা দিতে হবে যাতে আওয়ামী লীগ চুরি করতে না পারে: মির্জা আলমগীর

রংপুর, ১৮ ডিসেম্বর (জাস্ট নিউজ) : কেমন আছেন বাহে। মুই কিন্তু তোমরাই ছাওয়াল। মোর বাড়ি ঠাকুরগাঁও। মোর সাথে তোমার আত্মার সম্পর্ক' দাবি করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদি দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ চোরের দল। ভোট চোরের দল। ভোটের দিন আপনারা ভোট কেন্দ্র পাহারা দিবেন। যাতে তারা ভোট চুরি করতে না পারে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। এই নির্বাচন দিয়ে হয়তো সরকার পরিবর্তন হবে না। কিন্তু এই নির্বাচন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারকে একটি বাণী দিতে পারবে যে জনগণ আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে।

সোমবার দুপুরে রংপুর মহানগরীর সিও বাজারে বিএনপির মেয়র প্রার্থী কাওছার জামান বাবলার পক্ষে প্রচারণায় সভায় এসব কথা বলেন। এসময় তার সাথে ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক হুইপ জয়নাল আবেদীন ফারুক, নির্বাচন পরিচালনা কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সচিব সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য আমিনুল ইসলাম, আব্দুল খালেক, প্রার্থী কাওছার জামান বাবলা, মহানগর সভাপতি মোজাফফর হোসেন, সেক্রেটারী শহিদুল ইসলাম মিজু, জেলা সভাপতি সাইফুল ইসলাম, সেক্রেটারী রইচ আহম্মেদ, সাবেক এমপি মহিলা সভাপতি শাহিদার রহমান জোসনা, জাসাস নেত্রী রেজেকা সুলতানা ফেন্সি, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল আহবায়ক আব্দুস সালাম, যুবদল জেলা সভাপতি নাজমুল আলম নাজু, সেক্রেটারী সামসুল হক ঝন্টু, যুবদল মহানগর সভাপতি মাহফুজ উন নবী ডন, সেক্রেটারী লিটন পারভেজ, জেলা ছাত্রদল সভাপতি মনিুরজ্জামান হিজবুল, সেক্রেটারী শরীফ নেওয়াজ জোহা, মহানগর ছাত্রদল সভাপতি নুর হাসান সুমন, সেক্রেটারী জাকারিয়া জিমসহ বিপুল পরিমান নেতাকর্মী।

জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের অন্যতম নীতি নির্ধারক মির্জা আলমগীর বলেন, রংপুরের মানুষ সারা জীবন লড়াই করেছে। নুরল দিন লড়াই করেছেন। কৃষক আন্দোলন হয়েছে। এবারের এই রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনও রংপুরবাসীর জন্য অধিকার আদায়ের লড়াই। ধানের শীষ প্রতীককে বিজয়ী করার মাধ্যমে সেই লড়াইয়ে বিজয়ী হবে রংপুরবাসী। তিনি বলেন, মাঠে লড়াই করার জন্যই আমরা আছি। নির্বাচন কমিশন সঠিক আচরণ করছেন না। তবুও আমরা মাঠে আছি। মাঠে থেকেই আমরা বাবলাকে বিজয়ী করবো।

দেশের মানুষ আর বাকশালে ফিরে যেতে চান না উল্লেখ করে মির্জা আলমগীর বলেন, রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন শুধু বাবলার নির্বাচন নয়, এটি হচ্ছে আমাদের অধিকার আদায়ের নির্বাচন। আমরা যে স্বপ্ন নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিলাম। আমরা যে বস্ত্র, অন্ন, চিকিৎসাসহ মৌলিক অধিকার রক্ষার জন্য জীবন বিলিয়ে দিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছিলাম। আজ বিজয়ের মাসে আমরা দেখতে পাচ্ছি সেই স্বপ্ন আর অধিকার বঞ্চিত হয়েছি আমরা। এই সরকার সব কিছু কেড়ে নিয়েছে। ঘুষ না দিলে এই দেশে আর কিছুই হয় না। রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মানুষ ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দিয়ে বাবলাকে নির্বাচিত করে অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আরও একধাপ এগিয়ে যাবে।

সরকারের কঠোর সমালোচনা করে মির্জা আলমগীর বলেন, এই সরকার দেশের কোমড় ভেঙ্গে দিয়েছে। মানুষের জীবন দুর্বিসহ করে তুলেছে। যেখানেই যাবেন শুধু ঘুষ আর দুর্নীতি। ১০ টাকা কেজির প্রতিশ্রুতির চাল এখন ৬০ টাকা। পেয়াজের দাম ১০০ টাকার উপরে। বিদ্যুৎ তেল, ডিজেল, কেরোসিন সব কিছুর দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। সারের দাম তিনগুণ চারগুণ হয়েছে। গ্যাসের দাম বেড়েছে। প্রতিদিন কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কলকারখানায় বিদ্যুৎ গ্যাসের লাইন দেয়া হচ্ছে না। এই সরকার মানুষের ওপর অবৈধভাবে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসে আছে।

খুন খুন, গুম, হত্যা, ধর্ষণ ছাড়া এই সরকার জাতীকে আর কিছুই দিতে পারেনি দাবি করে মির্জা আলমগীর বলেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে খুন করা হচ্ছে। গুম করা হচ্ছে। ঢাকা পশ্চিমের ডিসি বিপ্লব সরকার গুমের বিষয়টি নিজেই স্বীকার করে বলেছেন, আমরা গুম করি কিন্তু বলতে পারি না। আজ দেশে অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে গুম করা হয়। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় ফরহাদ মজহারের মতো পণ্ডিতকে গুম করা হয়েছিল। সাবেক রাষ্ট্রদূতকে গুম করা হয়েছে। আসিফ নজরুলের নামে ২৬টি মামলা, ডেইলি স্টারের সম্পাদকের নামে ১২৫ টিরও বেশি মামলা দেয়া হয়েছে। মাহমুদুর রহমানের মতো একজন সম্পাদককে অন্যায়ভাবে ৫ বছর জেলে রাখা হয়েছে। এরা সবাই অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছিল। এটাই হলো আওয়ামী লীগ।

তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর বাজেট বাড়িয়ে করা হয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকা। এখন বলা হচ্ছে, পানির নিচে থই পাওয়া যাচ্ছে না। তাই কাজ করা যাচ্ছে না। সব কিছু করা হয়েছে লুটপাটের জন্য। এই সরকার শুধুই শোষণ করছে। নির্যাতন করছে। প্রধান বিচারপতি ভিন্নমত অবলম্বন করায়, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষার কথা বলেছিলেন। সে কারণে তাকে জোড় করে বিদেশে পাঠিয়ে দিয়ে তাকে কিভাবে অপসরাণ করা হয়েছে এটা আপনারা জানেন। আমরা এই বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন করেছিলাম। কিন্তু তারা বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে খর্ব করেছে।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রসঙ্গে মির্জা আলমগীর বলেন, আপনাদের ছাওয়াল কিছুই করেননি। তিনি বিরোধী দলে থাকার কথা বলে আওয়ামী লীগের সাথে গাটছড়া বেঁধেছেন। জোট করেছে। তিনি আর আমি আজ একসাথে একই বিমানে এসেছি। তিনি এই সরকারের পতাকা নিয়ে এসেছেন। যারা গুম, খুনের নায়কদের সাথে আঁতাত করে তাদের সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই।

মির্জা আলমগীর বলেন, এই সরকারের কাছে কোনো ধর্মের লোক নিরাপদ নয়। আমাদের মুসলমানদের ইসলাম ধর্ম নিরাপদ নয়। ইমান আকিদা নষ্ট করে দেয়া হচ্ছে। হিন্দুদের ধর্ম নিরাপদ নয়। নিরাপদ নয় খ্রিস্টানরা। আমরা সবাই নিরাপত্তাহীনতায়। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্যই রংপুরের মানুষ ধানের শীষকে বিজয়ী করবে।

আগামী ২১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে এই ভোট। এখানে মেয়র পদে ৭ জন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৬৫ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২১১ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ১৯৩ টি ভোট কেন্দ্রের ১ হাজার ১২২টি বুথে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে চলবে এই ভোট।

(জাস্ট নিউজ/ওটি/১৫৫৫ঘ.)