ছাত্রলীগের মারধর, প্রাণবাঁচাতে থানায় আশ্রয় নিলেন অধ্যক্ষ

ছাত্রলীগের মারধর, প্রাণবাঁচাতে থানায় আশ্রয় নিলেন অধ্যক্ষ

ঢাকা, ৮ জুলাই (জাস্ট নিউজ) : ঢাকা জেলাধীন দোহার-নবাবগঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষ মো. আনোয়ার হোসেনকে টেনেহিঁচড়ে তার কক্ষ থেকে বের করে পিটিয়ে আহত করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় প্রাণবাঁচাতে দৌড়ে পাশেই নবাবগঞ্জ থানায় গিয়ে আশ্রয় নেন অধ্যক্ষ। পরে তাকে পুলিশি পাহারায় হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি অসুস্থ অবস্থায় বাসায় বিশ্রামে রয়েছেন।

রবিবার রাত ৮টায় এ প্রতিবেদকের পক্ষ থেকে মোবাইল ফোনে আহত কলেজ অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ওই কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। একই সঙ্গে অধ্যক্ষের কক্ষে ভাঙচুর করে ওই কলেজের ছাত্রলীগ নেতারা।

হামলা ও মারধরের ঘটনায় ওই দিনই নবাবগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন নির্যাতনের শিকার অধ্যক্ষ আনোয়ার হোসেন। তবে রবিবার রাত ৮টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুলিশ কাউকে আটক বা কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি।

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার কলেজের গভর্নিং বডির সভা ছিল। সভায় উপস্থিত ছিলেন গভর্নিং বডির সভাপতি ও ঢাকা-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম, আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য আব্দুল বাতেন মিয়া, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাসির উদ্দিন ঝিলু, এমপি সালমা ইসলামের রাজনৈতিক উপদেষ্টা একে আবদুল হালিমসহ কমিটির অন্য সদস্যরা। সভায় উপস্থিত সবার সম্মতিক্রমে আগামী কলেজ ছাত্রসংসদ নির্বাচন সাময়িকভাবে স্থগিত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

সভা শেষে সভাপতিসহ অনেকেই চলে যান। পর অধ্যক্ষ মো. আনোয়ার হোসেন তার অফিসকক্ষে প্রবেশ করেন। সেখানে কমিটির সদস্য একে আবদুল হালিমও উপস্থিত ছিলেন। এ সময় অতর্কিতভাবে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুল আলম নাদিম ও সিনিয়র সহসভাপতির নেতৃত্বে ছাত্রলীগের ২০ থেকে ২৫ জন নেতাকর্মী কক্ষে ঢুকে অধ্যক্ষকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে এবং কক্ষে ভাঙচুর চালায়। একপর্যায়ে অধ্যক্ষকে ভবনের দ্বিতীয় তলার অধ্যক্ষের কক্ষ থেকে তাকে টেনে হিঁছড়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে মাঠের গাছতলায় নেওয়া হয়। সেখানে মারধরের পর ক্যাম্পাস থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করে রাস্তায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তিনি দৌড়ে পাশেই নবাবগঞ্জ থানায় গিয়ে আত্মরক্ষা করেন। এরপর পুলিশ প্রহরায় তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করা হয়।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে ওই দিন সন্ধ্যায় বাসায় ফেরেন আহত মো. আনোয়ার হোসেন। সেই থেকে বাসায় আছেন।

রবিবার রাতে তিনি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘কলেজে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের বিষয়ে আমার কোনো ভূমিকা নেই। অথচ সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে বারবার ছাত্রসংসদ নির্বাচন না দেওয়ার জন্য আমাকে চাপ দেওয়া হচ্ছিল। তাছাড়া সামনে জাতীয় নির্বাচন ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা সভায় আলোচনার পর নির্বাচন আপাতত না করার সিদ্ধান্ত নেয় গভর্নিং বডি।’

তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘ওরা আমার ছাত্র হয়ে আমাকে মারল। এর চেয়ে আমার জীবনে কষ্টের আর কী হতে পারে।’

অধ্যক্ষের ওপর হামলাকারীদের মধ্যে কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুল আলম নাদিম ছাড়াও আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য ও কলেজ গভর্নিং বডির সদস্য আব্দুল বাতেন মিয়ার ছেলে আশ্রাবও জড়িত বলে জানা গেছে।

ঘটনার দিন নববাগঞ্জ থানায় জিডি করার কথা জানিয়েছেন অধ্যক্ষ আনোয়ার হোসেন।

তবে রবিবার রাতে এ প্রতিবেদককে নবাবগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মোস্তফা কামাল বলেছেন, ‘জিডি নয়, অধ্যক্ষে মারধরের ঘটনায় নিয়মিত মামলা হয়েছে। আসামিরা সবাই পলাতক। তাই কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। মামলার তদন্ত চলছে। সূত্র : শীর্ষনিউজ

(জাস্ট নিউজ/একে/২৩৪৫ঘ.)