কাদের সাহেব আয়নায় ভালো করে নিজেদের চেহারাটা দেখুন: রিজভী

কাদের সাহেব আয়নায় ভালো করে নিজেদের চেহারাটা দেখুন: রিজভী

ঢাকা, ১৭ জুলাই (জাস্ট নিউজ) : আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে আয়নায় ভালো করে নিজেদের চেহারাটা দেখার অনুরোধ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগের নেতারা মূঢ় অহংকারের কারণে বিস্মৃতপ্রবণ।

বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন রিজভী আহমেদ।

রিজভী আহমেদ বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও তাকে কেন ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে না আজ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, খালেদা জিয়া নতুন কোনো রোগে আক্রান্ত হননি, তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আর সরকারি ব্যবস্থাপনার বাইরে বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব নয়।

সুতরাং আমাদের কথাই সত্যি হলো। তারা বিএনপি চেয়ারপারসনকে নিয়ে দুরভিসন্ধিমূলক এক গভীর চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে। লোক মুখে যে কথা প্রচারিত তাই সত্য হচ্ছে, রাজনীতি থেকে বেগম খালেদা জিয়াকে চিরতরে সরিয়ে দেওয়ার জন্যই তার জীবনকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে। দেশের মহান স্বাধীনতার ঘোষকের সহধর্মিনী তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতাকে চরম অবনতির দিকে ঠেলে দিতেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও তার সরকার এক নোংরা খেলায় মেতে উঠেছে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব প্রশ্ন করে বলেন, কোন ব্যবস্থাপনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কারাবন্দি থাকা অবস্থায় স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলেন? কোন ব্যবস্থাপনায় অন্যান্য আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের চিকিৎসা হয়েছিল রাজধানীর ল্যাব এইড বা বারডেমে। সুতরাং বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা না দিয়ে তিলে তিলে নিঃশেষ করে দেওয়াই যে সরকারের উদ্দেশ্য তা আবারও সুস্পষ্ট হলো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের মধ্য দিয়ে।

রিজভী আহমেদ বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘দেশে কোনো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুমের ঘটনা ঘটছে না। প্রেমে ব্যর্থ হয়ে অথবা দুটি মনের মিলনে উড়াল দিচ্ছে আর বলা হচ্ছে গুম।’ জবাবদিহিহীন ভোটারবিহীন সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীই কেবল এই ধরনের উদ্ভট, ভারসাম্যহীন, অসত্য কথা বলে নির্যাতিত নিপীড়িত জনগণের সাথে এমন নিষ্ঠুর রসিকতা করতে পারে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ রাখতে এমন বানোয়াট ও অসত্য বক্তব্য প্রদান ছাড়া তার কোনো উপায় নেই।

রিজভী আহমেদ বলেন, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন-দেশে গণতন্ত্র আছে বলেই বিএনপি দলীয় কার্যালয়ে বিএনপি প্রেস কনফারেন্স করতে পারে, আর প্রধানমন্ত্রীকে সমালোচনা করে বক্তব্য দিতে পারে।

আওয়ামী লীগের নেতারা মূঢ় অহংকারের কারণে বিস্মৃতপ্রবণ। আওয়ামী নেতারা কী ভুলে গেছেন সরকারের সমালোচনা করার কারণে গভীর রাতে দলীয় কার্যালয় ভেঙে তছনছ করে গ্রেপ্তারের কথা, ভুলে গেছেন ২০১৩ সালে পুলিশ ঢুকিয়ে সারা কার্যালয় তছনছ করে বিএনপি মহাসচিব ও সিনিয়র নেতৃবৃন্দসহ ১৫৪ জন বিএনপি নেতাকর্মীদের আটক করে নিয়ে যাওয়ার কথা। তাহলে তখন কি আপনাদের তথাকথিত গণতন্ত্র ছিল না? কয়েকদিন আগে একতরফা জাতীয় সংসদের ভেতরে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া সম্পর্কে যে উদ্ভট, অলীক, অসংসদীয়, অশ্রাব্য কটূবাক্য প্রধানমন্ত্রী ব্যবহার করেছেন সেটি কোন গণতান্ত্রিক রীতিতে পড়ে? বিএনপিসহ বিরোধী দলের সভা-সমাবেশের অনুমতি না দেওয়া কোন গণতান্ত্রিক রীতিতে পড়ে? বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে ছাত্রলীগ ও পুলিশের হামলা, নির্যাতন-নিপীড়ন কোন গণতান্ত্রিক রীতি? বন্দুকের জোরে দেশের প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগে বাধ্য করে দেশ থেকে বিতাড়ণ কোন গণতান্ত্রিক রীতিতে পড়ে? মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী করা কোন গণতান্ত্রিক রীতি? ধমক দিয়ে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করা কোন গণতান্ত্রিক রীতি? আমি আওয়ামী সাধারণ সম্পাদক সাহেবকে অনুরোধ করব- নিজেরা আয়নায় ভালো করে নিজেদের চেহারাটা দেখুন।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সেখানে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসী তাণ্ডব চরম আকার ধারণ করেছে। আজ (মঙ্গলবার) নগরীর সাগরপাড়ায় জেলা ছাত্রদলের গণসংযোগ কর্মসূচি বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু উদ্বোধনকালে আওয়ামী দুষ্কৃতিকারীরা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। সন্ত্রাসীদের দ্বারা নিক্ষিপ্ত ককটেল বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব, বিএনপির কর্মী স্বপন কর্মকার, বাংলাভিশনের ব্যুরো প্রধান পরিতোষ চৌধুরী আদিত্যসহ কয়েকজন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছিলেন যে, তিনটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন খুলনা ও গাজীপুরের মতো হবে। এখন তার বক্তব্যের সেই আলামত ফুটে উঠতে শুরু করেছে। রাজশাহীতে ধানের শীষের প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণায় ককটেল হামলা নির্বাচনী নতুন মডেলের আরেকটি প্রাথমিক পদক্ষেপ। আতঙ্কিত পরিবেশ তৈরি করে ভোটারশূন্য নির্বাচন করতেই এই হামলা। ভোটাররা জানেন না, আওয়ামী লীগ সামনের দিনগুলোতে আরো কী পরিস্থিতি তৈরি করে। আমি দলের পক্ষ থেকে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের এই ন্যক্কারজনক ককটেল হামলার তীব্র ধিক্কার, নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবিলম্বে দুস্কৃতকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি করছি। আহতদের আশু সুস্থতা কামনা করছি।

(জাস্ট নিউজ/একে/২০০৬ঘ.)