নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন

আ’লীগের সিদ্ধান্তেই ছাত্রলীগ-যুবলীগ বর্বোরোচিত হামলা চালিয়েছে: মির্জা আলমগীর

আ’লীগের সিদ্ধান্তেই ছাত্রলীগ-যুবলীগ বর্বোরোচিত হামলা চালিয়েছে: মির্জা আলমগীর

ঢাকা, ১০ আগস্ট (জাস্ট নিউজ) : আওয়ামী লীগ নেতাদের বিএনপি আতঙ্ক রোগ আছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতাদের বিএনপি ভীতি আছে। বিএনপি ফোবিয়া আছে। একটা বিশেষ প্রাণীর পানি দেখলে জলাতঙ্ক রোগ হয়। আর উনাদের হয় বিএনপি আতঙ্ক রোগ।

শুক্রবার সকালে নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

মির্জা আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ যা কিছু দেখে তাতে বিএনপিকে দেখতে পায়। রাতে ঘুমাতে পারেনা মনে হয়। তা না হলে এই ধরনের কথাবার্তা কি জন্যে বলে তা তো আমার মাথায় আসে না। কোনো পাগলেও বিশ্বাস করবে না ধানমন্ডিতে বিএনপি-জামায়াতের লোক গিয়ে শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের উপর হামলা করেছে।

মির্জা আলমগীর বলেন, শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনের প্রতি বিএনপি নৈতিক সমর্থন জানিয়েছে। এই আন্দোলনের প্রতি সারা দেশের মানুষের নৈতিক সমর্থন ছিল। সেই আন্দোলন যে পদ্ধতিতে সরকার দমন করেছে, সেটা সার্বজনীনভাবে ধিকৃত হয়েছে। আওয়ামী লীগ নিরিহ ছাত্রদের উপর এই ধরনের নির্যাতন চালিয়ে আরো গণবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে প্রতিদিন সড়ক দূর্ঘটনায় প্রাণহানী ও পঙ্গুত্ব বরণের অব্যাহত ঘটনার এক পর্যায়ে গত ২ রা আগষ্ট লাইসেন্স বিহীন বাস চালকের বেপরোয়া ড্রাইভিং এর ফলশ্রুতিতে ঢাকায় ২ জন স্কুল ছাত্র-ছাত্রীর অকাল ও নৃশংস হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। এরই প্রেক্ষিতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের যে অভূতপূর্ব ঐক্যবদ্ধ এবং সুশৃংখল প্রতিরোধের ঘটনা বাংলাদেশের রাজনীতি ও আন্দোলনের ইতিহাসে এক নতুন মাত্রা সৃষ্টি করেছে। সতীর্থ ভাই-বোনদের নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে গড়ে উঠা শিশু কিশোরদের এই যুগান্তকারী আন্দোলন শান্তিপূর্ণ, গাড়ীর কাগজপত্র চেক করার মত গঠনমূলক এবং উপযুক্ত কাগজপত্র না থাকায় মন্ত্রী, বিচারপতি, পুলিশ কর্মকর্তা, সরকারী কর্মকর্তা ও সাধারণ মানুষের প্রতি তাদের সম আচরণ ছিল দৃষ্টান্তমূলক ও শিক্ষানীয়।

তাদের দাবি ছিল নিরাপদ সড়কের এবং তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই তারা গাড়ির কাগজপত্র পরীক্ষা করাটাকে একটা অন্যতম প্রাথমিক কাজ হিসাবে গ্রহণ করেছিল। তারা কারো সাথে দুর্ব্যবহার কিংবা বেয়াদবী করেনি বরং সচেতন ও দায়িত্বশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। রিক্সা গুলোকে এক লাইনে চলার এবং এম্বুলেন্স ও ফায়ার বিগ্রেডের গাড়ীর জন্য নির্দিষ্ট লাইন ফাঁকা রাখার মত আইনী ও আধুনিক ব্যবস্থা যে করা সম্ভব তা প্রমাণ করে দেখিয়েছে। বাংলাদেশের সকল শ্রেণী পেশার মানুষ, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংঠগন এমনকি দেশের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীগণ ও পুলিশ কর্মকর্তা পর্যন্ত এই শিশু কিশোরদের ৯ দফা দাবি আন্দোলন ও কার্যক্রমের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। আমরাও বিএনপি’র পক্ষ থেকে এবং ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে তাদের দাবি দাওয়ার প্রতি নৈতিক সমর্থন জানিয়েছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে জনগণের জানমাল রক্ষায় ক্রমাগত ব্যর্থ ও অযোগ্য সরকার প্রথম দিন থেকেই এই আন্দোলনে ষড়যন্ত্র ও উষ্কানী আবিস্কারের অপচেষ্টা চালাতে শুরু করে।

কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু করে জনগণের সব ন্যায্য আন্দোলনেই এই সরকার একই কাজ করেছে এবং এই সুযোগে বিরোধী দলের ও মতের নেতা-কর্মী ও আন্দোলনে সক্রিয়দের বিরুদ্ধে হায়েনার মত আক্রমন চালিয়েছে। তাদের আক্রমনে নিরীহ ছাত্র-ছাত্রীরা গুম হয়েছে, আহত হয়েছে, মিথ্যা মামলায় হয়রানী হয়েছে।

প্রবীন রাজনীতিবিদ ও দেশবরেণ্য ব্যক্তিত্ব ড. অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও ড. কামাল হোসেন এবং অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিও তাদের কটুক্তি থেকে রেহাই পাচ্ছেনা। শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলনকে পেশী শক্তি দিয়ে দমন করার অপকৌশল হিসাবে বিএনপিসহ আন্দোলনকে সমর্থনকারী রাজনৈতিক, সামাজিক প্রতিষ্ঠান এমনকি সচেতন ব্যক্তিবর্গ যেমন শহিদুল আলম, বিশিষ্ট আলোকচিত্র শিল্পী ও সাংবাদিক টার্গেট করে ফ্যাসিষ্ট কায়দায় নিপীড়ন চালিয়েছে। তারা বিএনপি’র মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির সদস্য জনাব আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব জনাব রুহুল কবির রিজভীসহ সারা দেশে বিএনপি ও বিশেষ করে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। গ্রেপ্তার করে নিপীড়ন করেছে বহু নেতাকর্মীকে। নিরীহ অরাজনৈতিক শিক্ষার্থীরাও নির্যাতন ও মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই পায়নি।

সরকারী দলের সিদ্ধান্তেই সরকারী দল ও ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগের নেতা-কর্মীরা পুলিশের ছত্রছায়ায় হেলমেট ও মুখোস পরে অগ্নেয়াস্ত্র, লাঠি, কিরিচ, রামদা ইত্যাদি নিয়ে আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের উপর অমানবিক ও বর্বোরোচিত হামলা চালিয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভিতরে ঢুকে ছাত্র-ছাত্রীদের মারপিট করেছে। দলবদ্ধভাবে বিভিন্ন হোস্টেলে ও আবাসস্থলে গিয়ে ছাত্রদের মারপিট করে পুলিশে হস্তান্তর করেছে। এ সব কিছুই ঘটেছে পুলিশের চোখের সামনে এবং তাদের সহযোগীতায়।

তিনি বলেন, আক্রমনকারীরা ছাত্রলীগ-যুবলীগ কর্মী ছিল এটা আহত সব সাংবাদিক এবং ছাত্র-ছাত্রীরা বলার পরেও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাদের বিচার করার জন্য নাম চান। এমন বাজে রসিকতায় তিনি আনন্দ পেতে পারেন কিন্তু দেশবাসী লজ্জিত হয়।

তিনি আরো বলেন, পত্রিকায় আক্রমনকারীদের অনেকেরই ছবি ছাপা হয়েছে, কোন কোন ইলেকট্রনিক মিডিয়া, অনলাইন পত্রিকা এবং সোসাল মিডিয়ায় আক্রমনকারীদের ছবির ছড়াছড়ি থাকার পরেও অপরাধীদের গ্রেপ্তারের জন্য ওবায়দুল কাদের সাহেব কেন ছবি ও নাম চান? কেন তথ্যমন্ত্রীকে সাংবাদিকদের উপর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি পাঠাতে হয়। কি বিচিত্র এই দেশ। আর বিচিত্র বলেই তারা অপরাধ করে তার দায় চাপানোর চেষ্টা করছে আমাদের উপর।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, চেয়ার পারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-দপ্তর সম্পাদক মুনির হোসেন প্রমুখ।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১২০৭ঘ.)