আন্দোলনের প্রস্তুতি বিএনপির

আন্দোলনের প্রস্তুতি বিএনপির

ঢাকা, ২৬ আগস্ট (জাস্ট নিউজ) : রাজধানীতে আগামী ১ সেপ্টেম্বর দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বড় ধরনের শোডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। ওই দিন নয়াপল্টনে অথবা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে দলটি ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়েছে।

এ সমাবেশে ব্যাপক লোকসমাগম ঘটিয়ে দলের চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে চলমান আন্দোলনের ‘নতুন পর্বে’ পা দিতে চায় বিএনপি।

সমাবেশ থেকে জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট কিছু কর্মসূচি ঘোষণারও পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সংলাপ-সমঝোতায় সরকারের আগ্রহ না থাকলে আন্দোলনের পথেই বিএনপি লক্ষ্যে পৌঁছানোর কথা ভাবছে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেছেন, সমাবেশের অনুমতি বিষয়ে এখনো ঢাকা মহানগর পুলিশ কিছুই জানায়নি। আমরা ৩১ আগস্ট পর্যন্ত অপেক্ষা করব। আশা করছি, আমাদের সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া হবে।

তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এ সমাবেশ থেকে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, গণতন্ত্রের মুক্তি ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি তারা বলিষ্ঠভাবে তুলে ধরতে চান।

জানা গেছে, একাদশ সংসদ নির্বাচন কাছাকাছি চলে আসায় বিএনপি এখন তাদের কর্মসূচিতে পরিবর্তন আনতে চাইছে। সেই কর্মসূচির ধরন কেমন হবে, তা নিয়ে শীর্ষ নেতারা ইতোমধ্যে একাধিকবার পরামর্শ করেছেন। ইতিমধ্যে কারাগারে দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করেছেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এই সাক্ষাতে তিনি একাই উপস্থিত ছিলেন। মির্জা ফখরুলের এই সাক্ষাৎকে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে ভাবা হচ্ছে।

বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আইনি প্রক্রিয়ার গতিপথ, আগামী দিনে দলের করণীয়, বৃহত্তর নির্বাচনী মোর্চা গঠনসহ অনেক বিষয় বিএনপির সামনে ঝুলন্ত থাকায় মির্জা ফখরুলের এই সাক্ষাৎ বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।

বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে থাকায় তার মুক্তিই এখন দলটির প্রধান এজেন্ডা। দ্বিতীয় এজেন্ডা নির্বাচন। বেগম খালেদা জিয়ার বন্দিত্ব ঘোচাতে বিএনপির আইনজীবীরা আদালতের বারান্দায় ছয় মাস ধরে হন্যে হয়ে দৌড়াচ্ছেন। কিন্তু তারা শেষ সীমা খুঁজে পাচ্ছেন না। একটি মামলায় জামিন হলে, অন্য মামলা মুক্তির পথে বাদ সাধছে। একটি-দুটি বাদে সব মামলায় ইতোমধ্যে জামিন পেয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। তার পরও তিনি শিগগিরই মুক্তি পাবেন কি না নিশ্চিত নয়।

কেউ কেউ মনে করছেন, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছাড়া বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব নয়। বিএনপির নেতাদের অভিযোগ যে মামলায় বেগম জিয়া কারাভোগ করছেন, সেই মামলায় তিনি জামিন পাওয়া সত্ত্বেও কেবল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে একের পর এক মামলা দেখিয়ে তার মুক্তি ঠেকানো হচ্ছে। তাকে আগামী নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখতেই সরকার এই পথ বেছে নিয়েছে।

জানা গেছে, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুষ্ঠু নির্বাচন এই যুগপৎ দাবিতে নতুন করে আন্দোলন শুরু করতে চায় বিএনপি। প্রথম দিকে তারা নানামুখী কর্মসূচির মাধ্যমে আলোচনা ও সমঝোতার পথে সরকারকে টেনে আনতে চান এবং শেষ দিকে রাজপথের কর্মসূচি বেছে নেয়া হতে পারে। নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের আগে ও পরে রাজপথে কঠোর কর্মসূচি থাকতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, নিরপেক্ষ একটি ব্যবস্থা ছাড়া তারা নির্বাচনে যাবেন না। এখন সরকার আপসে এ ব্যপারে রাজি হলে বেশি কিছু করতে হবে না। নির্বাচনকালীন সরকারের ধরন কেমন হবে তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে, সমঝোতা হতে পারে। এ নিয়ে শুধু বিএনপি নয়, সরকার অন্যান্য দলের সঙ্গেও আলোচনায় বসতে পারে। যদি সরকার আলোচনার পথে না আসে তখন আমরা বাধ্য হবো আন্দোলনের জন্য। যদি আমরা নির্বাচনে অংশ নিতে না পারি, তাহলে ২০১৪ সালের উদাহরণ আছে। এ ঝুঁকি বাংলাদেশ আবার নিবে কি না সেটা হচ্ছে বিষয়।

বিএনপির অভ্যন্তরে এই মুহূর্তে একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রশ্নে নানা ভাবনা কাজ করছে। দলটির নেতারা বলেছেন, পরিস্থিতির আলোকেই সব সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে খুব একটা মাথাব্যথা নেই দলটির। নেতারা বলছেন, বিএনপিতে প্রার্থীর কোনো প্রভাব নেই। নির্বাচনে অংশ নিলে ‘ডু অর ডাই’ ধরে নিয়ে সাংগঠনিক সব সমস্যাও সমাধান হয়ে যাবে। নেতাকর্মীরা সব ভেদাভেদ ভুলে এক কাতারে এসে দল মনোনীত প্রার্থীকেই বিজয়ী করার জন্য কাজ করবে। সুত্র: নয়াদিগন্ত।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/০৯২১ঘ.)