কোনো সাক্ষী বলেননি খালেদা জিয়া জড়িত: আইনজীবী

কোনো সাক্ষী বলেননি খালেদা জিয়া জড়িত: আইনজীবী

ঢাকা, ২৭ ডিসেম্বর (জাস্ট নিউজ) : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে তার আইনজীবীরা তৃতীয় দিনের মতো যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছেন। আইনজীবী আবদুর রেজ্জাক খান মঙ্গলবার তা আদালতে উপস্থাপন করেন। যুক্তিতর্ক শেষ না হওয়ায় আজ বুধবার পরবর্তী দিন ধার্য করেছে আদালত।

মঙ্গলবার রাজধানীর বকশীবাজারের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামানের আদালত যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে এ আদেশ দেন। যুক্তিতর্ক শুনানিতে আবদুর রেজ্জাক খান বলেন, এই মামলার সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়ার মানসম্মান জড়িত। এ মামলায় কিছুই নেই। কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ দিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি দুদক।

আইনজীবী রেজ্জাক খানের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের পর খালেদা জিয়ার পক্ষে তাঁর আরো তিন আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, এ জে মোহাম্মদ আলী ও ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকারের যুক্তি উপস্থাপন করার কথা রয়েছে। এ সময় খালেদা জিয়ার পক্ষে আদালতের ভিতরে দেড় শতাধিক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।

তৃতীয় দিনের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে আদালত চত্বরে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, এটি একটি রাজনৈতিক মামলা। বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন, এটা দুদকের ৩২ জন সাক্ষীর একজনও আদালতে বলেননি। তাঁকে হয়রানির জন্যই এ মামলা করা হয়েছে। অতএব আমরা আশা করছি, এ মামলায় খালাস পাবেন বেগম খালেদা জিয়া।

শুনানিতে অ্যাডভোকেট আবদুর রেজ্জাক খান আরো বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার অভিযোগ গঠন আইন মেনে করা হয়নি। যেহেতু বেগম খালেদা জিয়া একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী, তাই সব আসামির সঙ্গে একত্রে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করার সুযোগ নেই। দুদক এর ১৩তম সাক্ষীর সাক্ষ্য খণ্ডানোর যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অর্থ লেনদেনের অনিয়ম হয়েছে বলে কোনো তথ্য দেয়নি। এ সময় তিনি সোনালী ব্যাংকের কোনো ডকুমেন্ট আদালতে প্রদর্শিত হয়নি জানিয়ে কোনো সাক্ষী মূল ডকুমেন্টগুলো দেখেছেন এমন কোনো সাক্ষ্য কেউ দেননি মর্মে আদালতকে অবহিত করেন।

রেজ্জাক খান বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে এ মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে। অথচ কোনো সাক্ষী তাঁদের সাক্ষ্যে বলেননি, এ ঘটনার সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততা ছিল। এ ছাড়া জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্তকালে এই টাকার উৎস সম্পর্কে সঠিক কোনো তথ্য উদঘাটন করতে পারেননি। এ ছাড়া স্বচ্ছ ও পরিষ্কারভাবে তদন্তও করেননি। তদন্ত কর্মকর্তা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার টাকা কোথা থেকে এসেছে তা খুঁজে বের করতেও ব্যর্থ হয়েছেন।

অন্যদিকে, আদালতের কার্যক্রম শেষে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল সাংবাদিকদের বলেন, এই মামলায় দুদক সাক্ষ্য-প্রমাণ দিয়ে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। আমরা বেগম খালেদা জিয়ার সর্বোচ্চ সাজা চেয়েছি আদালতে।

দুদকের পক্ষে মঙ্গলবার অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল ছাড়াও মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আবু, অ্যাডভোকেট মীর আবদুস সালাম, অ্যাডভোকেট আমিন উদ্দিন মানিক আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকাল পৌনে ৪টা পর্যন্ত টানা সোয়া চার ঘণ্টা সময় ধরে এই যুক্তিতর্ক চলে। মাঝখানে শুধু ঘণ্টাখানেক সময় নামাজ ও মধ্যাহ্নভোজের বিরতি দেওয়া হয়। বিশেষ জজ আদালতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুল সদস্য মোতায়েন করা হয়। শুনানি চলাকালে আদালতের সামনের রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। তাছাড়া আশপাশের রাস্তার দোকানপাটও বন্ধ রাখা হয়। এ ছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও হাই কোর্ট এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানের মোড়ে বেগম খালেদা জিয়ার আদালতে যাওয়া উপলক্ষে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতা-কর্মী তাঁকে যাওয়া ও আসার সময় মিছিলসহ অভ্যর্থনা জানান।

সকালে আদালতে যাওয়ার সময় হাই কোর্ট এলাকা থেকে কমপক্ষে আটজন নেতা-কর্মীকে পুলিশ আটক করে নিয়ে যায় বলে উপস্থিত নেতারা জানান।

আদালতে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, বিএনপি নেতা নাজীমউদ্দিন আলম, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, মহিলা দল নেত্রী আফরোজা আব্বাস প্রমুখ।

(জাস্ট নিউজ/ওটি/১০৪২ঘ.)