মেডিক্যাল বোর্ডে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অন্তর্ভূক্ত করতে হবে : বিএনপি

মেডিক্যাল বোর্ডে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অন্তর্ভূক্ত করতে হবে : বিএনপি

ঢাকা, ১৪ সেপ্টেম্বর (জাস্ট নিউজ) : বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডে তার ব্যক্তিগত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের রাখা হয়নি। এটা বিদ্বেষপ্রসূত মনোভাবেরই বহিঃপ্রকাশ।

তিনি শুক্রবার নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, কারাকর্তৃপক্ষের কথা অনুযায়ী মেডিকেল বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বেগম জিয়ার ব্যক্তিগত ৫ জন চিকিৎসকের নাম দলের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তাদেরকে বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত না করায় বিএনপি শুধু উদ্বিগ্নই নয়, বরং দেশনেত্রীকে চিকিৎসা না দিয়ে তাকে গুরুতর শারীরিক ক্ষতির দিকে ঠেলে দেয়ার জন্য এটি সরকারের অশুভ পরিকল্পনারই অংশ বলে দল মনে করে। তিনি বলেন, দেশনেত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের মেডিকেল বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

বাংলাদেশে এখন তুঘলকি শাসন চলছে মন্তব্য করে রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মী সমর্থকদের ছাঁকনি দিয়ে ধরা হচ্ছে। যে জনগণকে পুলিশের নিরাপত্তা দেয়ার কথা অথচ নিত্যদিনের পুলিশের আগ্রাসী অভিযানে দেশের মানুষের জানমাল নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ছে। তবে যেকোনো সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে জনবিস্ফোরণ ঠেকানো যাবে না।

রিজভী আহমেদ বলেন, অসাংবিধানিকভাবে কারাগারে আদালত বসিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার মামলার রায় চায় রাষ্ট্রপক্ষ। আদালতের কার্যক্রম শেষ করতে লিখিত আবেদনও দিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। আসলে রাষ্ট্রের অবৈধ কর্তৃপক্ষ আওয়ামী সরকার চক্রান্তমূলকভাবেই দেশনেত্রীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে তাকে সাজা দিয়েছে সেটি আবারো প্রমাণ করলেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা।

তিনি বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে গুরুতর অসুস্থ। তিনি হাত-পা নাড়াতে পারেন না, হাঁটা চলা করতে তার মারাত্মক অসুবিধা হয়। চিকিৎসকরা বলেছেন-তার বাম হাত ও পা প্রায় অবশ হয়ে পড়েছে। গুরুতর অসুস্থতার কারণে আদালতে যেতে পারবেন না, বেগম জিয়া সে কথাটিই বলেছেন। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ জোর করে আদালতকে ব্যবহার করে বিচারকার্য ছাড়াই রায় দেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। এটি সম্পূর্ণরুপে ন্যায় বিচারের পরিপন্থী, অমানবিক ও মানবাধিকার লঙ্ঘন।

রিজভী আহমেদ বলেন, দেশে এখন মানুষ নিজের ছায়াকেও ভয় পাচ্ছে। মনে হয় দেশের প্রতিটি মানুষকে কেউ না কেউ অনুসরণ করছে, গতিবিধি লক্ষ্য করা হচ্ছে। বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মী সমর্থকদের ছাঁকনি দিয়ে ধরা হচ্ছে। বিদেশী মিশনের কূটনীতিকদেরও নিরাপত্তা নেই। বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের উপরও হামলা হয়েছে। পরোয়ানা, গ্রেফতার, হাজতবাস, নিষ্ঠুর বিচার এখন মানুষের নিয়তি। শুধু বিরোধী দল নয়, গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষকে এই সরকার অপরাধী বানাচ্ছে। বিএনপির শীর্ষ এই নেতা জানান, কোনো কারণ ছাড়াই বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রাপ্ত তথ্য মতে গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ঢাকাসহ সারাদেশে গায়েবী মামলা দায়ের করা হয়েছে ৩ হাজারের অধিক। আসামী করা হয়েছে নামে-বেনামে প্রায় ৩ লাখ নেতাকর্মীকে। গ্রেফতার করা হয়েছে ৩৫০০ এর অধিক নেতাকর্মীকে। গত ২৪ ঘন্টায় আরো শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করার সংবাদ পাওয়া গেছে।

গত বৃহস্পতিবার দিন-রাতে পুলিশ মামলা হামলার বন্যা বইয়ে দিয়েছে জানিয়ে রিজভী আহমেদ বলেন, মতিঝিল থানায় সিনিয়র নেতা মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ব্যারিস্টার আমিনুল হক, রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, সানাউল্লাহ মিয়া এবং পল্টন থানার একটি মামলায় আব্দুস সালামসহ অসংখ্য নেতৃবৃন্দের নামে মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দায়ের করা হয়েছে। উত্তরা থানায় অধ্যাপক ড. তাজমেরী এসএ ইসলাম ও ড. মোর্শেদ হাসান খানের বিরুদ্ধেও মিথ্যা মামলা হয়েছে। আমি দলের পক্ষ থেকে এই অসত্য ও বানোয়াট মামলা দায়েরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহারের দাবি করছি। এছাড়া স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, নিতাই রায় চৌধুরী, এম এ মালেক, উজ্জল, হেলাল খান, সুলতানা আহম্মেদসহ বহু নেতৃবৃন্দের বাসায় পুলিশ হানা দেয় এবং তল্লাশীর নামে ব্যাপক তান্ডব চালায়। এই ন্যাক্কারজনক তান্ডবেরও নিন্দা জানান রিজভী আহমেদ।

তিনি বলেন, আওয়ামী সরকার ভীরু ও কাপুরুষ, তাদের কোনো সাহস নেই। আছে শুধু ভয় ও আশঙ্কা। যদি সাহস থাকতো তবে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করে অবাধ ও সুষ্ঠূ নির্বাচনের পথ সুগম করতেন। কিন্তু জনবিচ্ছিন্ন সরকার পুলিশের ওপর নির্ভর করে মামলা হামলা ও গ্রেফতারের শৃঙ্খলে জনগণকে বন্দী করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। তবে জনগণের ঘুর্ণিঝড় রুদ্ররুপ ধারণ করবে তা থামানো যাবে না।

রিজভী আহমেদ আরো বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিএসএমএমইউ গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডে বিএসএমএমইউ’র চিকিৎসকরাই রয়েছেন। বেগম জিয়ার ব্যক্তিগত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সেখানে রাখা হয়নি। বিএনপি যেসব চিকিৎসকের নাম সুপারিশ করেছিল তারা চিকিৎসা শাস্ত্রের স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রথিতযশা, অভিজ্ঞ। দীর্ঘদিন থেকে চিকিৎসা দেয়ায় তারা বেগম জিয়ার যে শারীরিক অসুস্থতা সে সম্পর্কে অবগত রয়েছেন।

তিনি বলেন, সরকার গঠিত মেডিকেল বোর্ডের অন্যতম সদস্য আবু জাফর চৌধুরী নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। অপর সদস্য হারিসুল হক আওয়ামী লীগ সমর্থিত চিকিৎসক সংগঠন স্বাচিপ বিএসএমএমইউ’র ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক। এছাড়াও তারেক রেজা আলী আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য। সুতরাং সরকারের গঠিত বোর্ডে মনোনীত চিকিৎসকগণকে বাছাইয়ের ক্ষেত্রে পেশাগত দক্ষতার চেয়ে সরকারদলীয় আনুগত্যের ক্ষেত্রকেই অধিক গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। তারা সরকারের নির্দেশেই কাজ করবে।

তিনি আরো বলেন, গুরুতর অসুস্থ দেশনেত্রীকে চিকিৎসা দেয়ার জন্য বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে দেখা করে ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের অন্তর্ভুক্ত করে মেডিকেল বোর্ডের মাধ্যমে তার সুচিকিৎসা এবং বিশেষায়িত ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তির জন্য অনুরোধ জানান। যদিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন। কার্যত: সেটির প্রতিফলন ঘটেনি। আসলে সরকার বেগম জিয়াকে সুচিকিৎসা না দিয়ে তিলে তিলে নিঃশেষ করতে চায়। এটি সরকারের অশুভ পরিকল্পনারই ইঙ্গিতবাহী। কর্তৃপক্ষের অবহেলায় যদি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কোনো ক্ষতি হয়, সেজন্য এর সম্পূর্ণ দায় বর্তাবে সরকারের ওপর।

(জাস্ট নিউজ/একে/২১৫০ঘ.)