২১ আগস্ট মামলায় তারেক রহমানের নাম জড়ানো চক্রান্তমূলক: রিজভী আহমেদ

২১ আগস্ট মামলায় তারেক রহমানের নাম জড়ানো চক্রান্তমূলক: রিজভী আহমেদ

ঢাকা, ২৪ সেপ্টেম্বর (জাস্ট নিউজ) : আওয়ামী লীগের সুশাসনের বোধ কখনোই ছিল না মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, ২১ আগস্ট বোমা হামলা মামলায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নাম জড়ানো সম্পূর্ণরূপে চক্রান্তমূলক ও সরকারপ্রধানের ক্রোধ ও ঈর্ষার ঝাল মেটানোরই বর্ধিত প্রকাশ। আসলে জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে সরকারপ্রধানের প্রতিদিনই নানা প্রকারের আক্রমণ নব নব রূপে স্ফূরিত হচ্ছে। আর কাহার আকন্দদেরকে দিয়ে সরকার সেই আক্রমণেরই প্রকাশ ঘটাচ্ছে।

সোমবার সকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী আহমেদ এ কথা বলেন।

রিজভী আহমেদ বলেন, এধরনের দলীয় সঙ্কীর্ণতায় ভোগা একজন তদন্তকারী কর্মকর্তাকে দিয়ে ২১ আগস্ট বোমা হামলা মামলার তদন্তের দায়িত্বভার প্রদান করা একেবারেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত। নির্দোষ তারেক রহমানসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদেরকে কাল্পনিক গল্প তৈরি করে ফাঁসানোই হচ্ছে মূল উদ্দেশ্য। কাহার আকন্দ শেখ হাসিনার ইচ্ছাপূরণে সেই কাজটিই নিষ্ঠার সাথে পালন করেছেন।

তিনি বলেন, দেশ এখন আওয়ামী কু-রাজনীতির ঘোঁট পাকানো অবস্থার মধ্যে নিপতিত হয়েছে। এখন সরকারের ইচ্ছা অনিচ্ছা অনুযায়ী আইনী প্রক্রিয়া ও বিচারিক কার্যক্রম চলে। ২১ আগস্টের বোমা হামলা মামলা এটির একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে রিজভী আহমেদ বলেন, আওয়ামী লীগ নানা ফন্দিফিকির করে ক্ষমতায় এসে সন্ত্রাস বিতরণের কেন্দ্রে পরিণত হয়। চাঁদাবাজি, দখল, টেন্ডার সন্ত্রাস, লুটপাট, নির্যাতন-অত্যাচারের কাহিনী প্রতিদিন সংবাদপত্রের পাতায় জায়গা দখল করে থাকে। আওয়ামী রাজনীতি কখনোই দলীয় সংকীর্ণতার বলয় থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। সেজন্য আওয়ামী ক্ষমতাসীনরা ব্যাংক-বীমা, শেয়ার বাজার, বিদ্যৃৎ, জ্বালানী, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেক্টর সবই আত্মসাৎ করেছে।

তিনি বলেন, এখন বেওয়ারিশ লাশ দাফনের সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের উপরেও এদের নেক নজর পড়েছে। যুবলীগের মহানগরীর নেতারা আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের উপরে চড়াও হয়েছে বিপুল অংকের চাঁদা আদায়ের জন্য। এই ঘটনা জনমনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। আর কিছুদিন পর হয়তো আওয়ামী সন্ত্রাসীরা লাশের কাছ থেকেও চাঁদা চাইবে।

‘গণমাধ্যমের একাংশ আওয়ামী লীগের প্রতি অবিচার করছে’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রিজভী আহমেদ বলেন, আমরা মনে করি অবিচার করছে না, বরং তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর গুন্ডামী ও গোয়েন্দাগিরি সত্ত্বেও গণমাধ্যমের বিরাট অংশ সাহসের সাথে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করছে। তবে ক্ষুদ্র একটি অংশ যে পা চাটছে ও সুবিধার ঝোল খাচ্ছে তা জনগণ দেখছে। সংবাদ মাধ্যমের গলায় দড়ি ঝোলাতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করে ওবায়দুল কাদেরদের তৃপ্তি মিটছে না, তাই এখন গোটা গণমাধ্যমকেই পকেটে ঢোকানোর চেষ্টায় কিছুটা বেগ পাওয়াতে আফসোস করে নানা কথাবার্তা বলছেন।

তিনি বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার প্রতি সরকারের আচরণের ঘটনাগুলো প্রকাশ হওয়ায় দেশবাসীসহ বিশ^বাসী বিমূঢ় বিস্ময়ে হতবাক হয়েছে। দেশের প্রধান বিচারপতিকে যেভাবে সরকার প্রধান থেকে শুরু করে অন্যান্য মন্ত্রীরা হুমকি, গালিগালাজ ও লাঞ্ছিত করেছেন তাতে আওয়ামী রাজনীতির বিকৃত সংস্কৃতি আবারো জনগণের কাছে সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।

রিজভী আহমেদ বলেন, ২০১৭ সালের জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে সংবাদ সম্মেলন করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক প্রধান বিচারপতিকে নোংরা ভাষায় গালিগালাজ করেছেন। তিনি দেশের প্রধান বিচারপতির সমালোচনা করতে গিয়ে অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করেছেন। ১৫ আগস্ট উপলক্ষে একটি জনসভায় স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রীরা দেশের প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে নজীরবিহীন মন্তব্য করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান বিচারপতিকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন যে, তার পদত্যাগ করা উচিৎ। তারপরের আক্রোশের কাহিনী দেশবাসী জানে। কিভাবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আগ্রাসন চালিয়ে প্রধান বিচারপতিকে দেশ থেকে বিতাড়িত করা হয়। মানুষের শেষ আশয়স্থলকেও দখলে নিয়েছেন শেখ হাসিনা বলে জনগণ বিশ্বাস করে।

বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, কাহার আকন্দের দাখিলকৃত চার্জশিটের বর্ণনায় বলা হয়েছে যে, ২১ আগস্টে হামলাকারি আসামীরা উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর বাসা হতে গ্রেনেডগুলো সংগ্রহ করে তা পশ্চিম মেরুল বাড্ডায় মুফতি হান্নানের অফিসে নিয়ে আসে। অতঃপর সেখানে অপারেশনের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে চূড়ান্ত মিটিং করে। পরদিন ২১ আগস্ট ২০০৪ সকালেই তারা অপারেশনস্থলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সভাস্থলে পৌঁছে যায়। কিন্তু দেশী-বিদেশী (এফবিআই) তদন্ত সংস্থা তথা এমন অপরাধ সম্পর্কিত সামরিক বিশেষজ্ঞরাও ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে মন্তব্য করেছিলেন যে, এমন নিখুঁত টাইমিং ও টার্গেট (ট্রাক-মঞ্চ পরিহার করে পরিচালিত) সফল হামলা অবশ্যই এ বিষয়ে প্রফেশনাল লোক তথা যথাযথ পূর্ব রিহার্সেল ছাড়া এককথায় অসম্ভব। সংগত কারণেই যদি বিশেষজ্ঞদের এই মতামত আমলে নেয়া হয় তাহলে বিষয়টা কি দাঁড়ায়?

রিজভী আহমেদ বলেন, এর মানে হচ্ছে যে, সভাস্থলের নিরাপত্তা বিধানকারী পুলিশ না জানলেও পূর্ব রিহার্সেল করার মতো পর্যাপ্ত সময় আগে থেকেই হামলাকারীরা জানতো যে, মিটিংটা মুক্তাঙ্গণে নয়, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ পার্টি অফিসের সামনেই হবে। সেইভাবেই তারা নিখুঁত প্রস্তুতি, অতঃপর কার্য সম্পন্ন করে। ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পর শেখ হাসিনার স্থান ত্যাগ এবং তৎপরবর্তী প্রায় ঘন্টাকালব্যাপী হতাহতদের উদ্ধারপূর্বক হাসপাতালে প্রেরণ- এসময়কালে একমাত্র গ্রেনেড হামলা ছাড়া কোনো গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে, এমন কিছু সে সময়ের তদন্তে, জরুরি সরকারের আমলে তদন্তে, এমনকি ‘রঙতুলি দিয়ে সাজানো-রাঙানো’ এই কাহারীও তদন্তেও কোনো কর্মকর্তা দেখতে পাননি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে- শেখ হাসিনার প্রাক্তন দেহরক্ষী প্রাক্তন সেনা হাবিলদার মাহবুব কার গুলিতে মারা গেলেন? সেটা নিরূপণে এসপি কাহারের কোনো আগ্রহ কিংবা তৎপরতা পরিলক্ষিত হয়নি কেনো?

তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ কর্মী ও সমর্থক তদন্তকারী কর্মকর্তা কাহার আকন্দের পরিচয় ইতোমধ্যে খানিকটা দেয়া হয়েছে। তিনি ‘চার্জশিট মহাকাব্য’ রচনায় সিদ্ধহস্ত বলেই তাকে ২১ আগস্ট বোমা হামলা মামলার দায়িত্ব যে দেয়া হয়েছে, সে বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। তিনি রঙধনুর রঙ মিশিয়ে কাল্পনিক রিপোর্ট তৈরি করতে দক্ষ, এর প্রমাণও সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। পিলখানা হত্যা মামলার মতো গুরুত্বপূর্ণ মামলাতে পক্ষপাতমূলক তদন্ত করার অভিযোগে আবুল কাহার আকন্দের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার আদেশ দিয়েছিলেন আদালত। বর্তমান আইনমন্ত্রী ও সেসময়ের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলী আনিসুল হক এবং মোশাররফ হোসেন কাজল আদালতকে অসহযোগিতা করেছেন বলেও আদালত অভিযোগ করেন।

রিজভী আহমেদ বলেন, আদালতের আদেশে বলা হয়, অবসরপ্রাপ্ত সুবেদার তোরাব আলী বিডিআর বিদ্রোহের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি বিদ্রোহে মদদও দিয়েছেন। তোরাব আলীকে জিজ্ঞাসা করে তদন্তকারী কর্মকর্তা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী আদায় করা ছাড়া আর কোনো তথ্য বের করতে পারেনি। আদালতে জেরার জবাবে কাহার আকন্দ বলেন, তোরাব আলীর বিরুদ্ধে আর কেউ সাক্ষ্য প্রদান করেনি। আদালত রায়ে প্রশ্ন করেন, কেউ সাক্ষ্য না দিলে কিসের ভিত্তিতে তদন্তকারী কর্মকর্তা তোরাব আলীকে পক্ষভুক্ত করলেন এবং তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিলেন। আদালত মনে করেন- কাহার আকন্দ পক্ষপাতদুষ্ট হয়েই তোরাব আলীর বিরুদ্ধে কোনো সাক্ষ্য রেকর্ড করেননি। মূল ঘটনা হচ্ছে তোরাব আলী ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা। তাকে বাঁচাতেই কাহার আকন্দের এই প্রচেষ্টা। সুতরাং এধরনের দলীয় সঙ্কীর্ণতায় ভোগা একজন তদন্তকারী কর্মকর্তাকে দিয়ে ২১ আগস্ট বোমা হামলা মামলার তদন্তের দায়িত্বভার প্রদান করা একেবারেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত।

এসময় উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, মুহাম্মদ আবদুল আউয়াল খান, মো: মুনির হোসেন প্রমুখ।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১৭০৫ঘ.)