‘বিচারকরা নিজের ইচ্ছায় রায় দিতে পারে না’

তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রায় দিতে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়: বিচারক মোতাহার

তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রায় দিতে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়: বিচারক মোতাহার

ঢাকা, ১১ অক্টোবর (জাস্ট নিউজ): বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ফাঁসাতে আদালতের রায় পাল্টানোর জন্য বন্দুকের নলের মুখে প্রাণনাশ আর লাশ গুমের হুমকি দেওয়া হয়েছিল ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর সাবেক বিচারক মোতাহার হোসেনকে। এমনকি রায় কি পড়া হবে তাও লিখে দিয়েছিলেন আইন সচিব জহিরুল হক দুলাল।

সম্প্রতি বিদেশি একটি গণমাধ্যমকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে বিচারক মোতাহার হোসেন নিন্ম আদালতে বিচারের রায় দেওয়া প্রসঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে এসব কথা বলেন।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে করা বিদেশে অর্থপাচার সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা করেন বিচারক মোতাহার। কোনো অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় রায়ে তিনি তারেক রহমানকে বেকসুর খালাস দিয়েছিলেন।

আদালতে ন্যায় বিচারের অনুপস্থিতি, যেকোনো রায় চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে সরকার দ্বারা তা লিখে দেওয়া, প্রাণনাশের ভয়ে দেশ থেকে পালিয়ে আসাসহ নানান প্রসঙ্গে কথা বলেন প্রাক্তন এই বিচারক।

অর্থ পাচার মামলায় তারেক রহমানের বিপক্ষে করা অভিযোগের কোনো তত্ত্ব-প্রমাণ ছিলোনা উল্লেখ করে মোতাহার হোসেন বলেন, “রাজনৈতিক একজন ব্যক্তিকে কিভাবে ফাঁসানো যায়, এই কারণেই এই মামলায় তারেক রহমানকে জড়ানো। এই কারণে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে চার্জশিটে যে সমস্ত বক্তব্য এসেছে, জবানবন্দি এসেছে, যে সমস্ত তথ্য এসেছে তাতে তারেক রহমানের নাম ওখানে কোথাও সঠিকভাবে জড়াইতে পারে নাই। তারপরও তাকে আসামির কলামে নাম দিয়ে মামলায় পরবর্তীকালে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দিয়ে তাকে অভিযুক্ত করে এ মামলায় চার্জশিট দাখিল করে।”

তিনি বলেন, “আমার পূর্ববর্তী জজ সাহেব মামলার নথি পর্যালোচনা করে প্রথমে চার্জ গঠন করেন কিন্তু উনি, উনার পরে পরবর্তীকালে আমি স্পেশাল জজ কোর্টে অর্থাৎ ওই আদালতে বিচারক হিসেবে নিযুক্ত হই। আমি বিচারক হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পরে মামলার নথি আমি বিশদভাবে স্টাডি করি। স্টাডি করে দেখি তারেক রহমানের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ, সেই অভিযোগে তার বিরুদ্ধে কোনো সাক্ষ্য প্রমাণ নেই। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মতো পর্যাপ্ত উপাদানই নেই। এরপরও যেহেতু চার্জ গঠিত হয়ে গিয়েছে এই কারণে আমাকে বিচার করতে হবে। আমি বিচার কন্টিনিউ করি। সাক্ষী-সাবদ গ্রহণ করি। আসামির বিরুদ্ধে তো কোনো এভিডেন্স নেই। এভিডেন্স হলো জিরো। একজন সাক্ষীও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে তার নামই উচ্চারণ করে নাই। কোনো অভিযোগ দেয় নাই। সেই মামলা কি করে একজন আসামিকে কিভাবে কনভিকশন দেওয়া যায়? একজন আসামিকে, একজন ব্যক্তিকে, উনি যেই হোন শাস্তি দেয়ার বিধান তো আমাদের দেশের প্রচলিত আইন পারমিট করে না।”

দোষ না থাকার পরও বিদেশে অর্থ পাচার মামলার রায়ে যেনো তারেক রহমানকে সাজা দেওয়া হয় সে জন্য আইন সচিব দুলাল বিচারক মোতাহারকে একের পর এক চাপ দিতে থাকেন, তাতে যোগ দেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকও। সে প্রসঙ্গে প্রাক্তন বিচারক মোতাহার বলেন, “আমার কাছ থেকে এই তথ্যটা যখন আইন সচিব দুলাল পেলেন, তখন উনি নানাভাবে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাকে দিয়ে আমার পেছনে লেলিয়ে দিলেন। দফায় দফায় আমাকে, আইন প্রতিমন্ত্রীকে দিয়ে প্রেসার ক্রিয়েট করতে থাকে এবং ডিজিএফআই আমার পেছনে লেলিয়ে দিলো। আইন সচিব দুলাল আমাকে সাথে করে নিয়ে, যেহেতু তার কথায় আমি রাজি হলাম না, তখন আমাকে ধরে নিয়ে যায় ডিজিএফআই কেন্দ্রে। আইন সচিব দুলালও সঙ্গে ছিলো। নিয়ে গেল সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের বাসায়। খায়রুল হক সাহেবকে দিয়ে আমাকে আবার প্রেসার ক্রিয়েট করালো। মামলাটা দ্রুত বিচার করে শাস্তি দেয়ার জন্য। স্টেপ দিতে হবে। আমি বললাম যে, স্যার এটা আমি আইনানুগভাবে দেখছি। আমি যত যতদুর সম্ভব, এটা দ্রুত বিচারই হবে। আমি আইনানুগভাবে বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করছি। কিন্তু উনি আমাকে খুব প্রেসার দিতে থাকে (এবিএম খায়রুল হক, বর্তমান চেয়ারম্যান ল কমিশন)। আমার কাছ থেকে স্পষ্ট কথা খায়রুল হক সাহেবের কাছ থেকে নিতে পারেন। আমি বলেছি আইনানুগভাবে বিচার হবে।”

তিনি আরো বলেন, “এরপর আমাকে ধরে নিয়ে গেল, আইনমন্ত্রী, আইন সচিব দুলাল এবং ডিজিএফআই, ডিজিএফআই চীফের কাছে নিয়ে গেল, নিয়ে গেলো এরপরেই। মেজর জেনারেল আকবর সাহেব আমাকে প্রথমে বললেন, এই মামলায় আমাকে তদারকি করার জন্য প্রাইম মিনিস্টার শেখ হাসিনা দায়িত্ব দিয়েছে। এই মামলা দেখা-শুনার দায়িত্ব কিন্তু আমার। এই মামলা আপনি দেখবেন। এরপর আইন সচিব দুলাল সেখানে ছিলেন, আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ছিলেন। তারা দফায় দফায় কথা একটাই-জনাব তারেক রহমানকে শাস্তি দিতে হবে, পানিশমেন্ট দিতে হবে, খালাস যেন না পায়। এই কথাটাই বার বার উচ্চারিত করতে থাকে। আমি বলেছি তাদেরকে, আমি আইন পর্যালোচনা করে আইনানুসারে বিচার দিবো এবং ন্যায় বিচার পাবেন।”

রায় সরকারের ইচ্ছানুযায়ী দেবার জন্য প্রাণ নাশ এবং লাশ গুম করে দেবার হুমকি প্রসঙ্গে মোতাহার বলেন, “ডিজিএফআই চীফের ওখান থেকে আসার পরে, দু’একদিন পরেই, ঢাকার জেলা জজ আব্দুল মজিদ এবং ঢাকার মেট্রোপলিটন সেশন জাজ জহিরুল ইসলাম- এরা দুজন একদিন আমার চেম্বারে আসে। এসে তারা বলে যে, আইন সচিব দুলাল বলেছে, এই মামলায় আপনি পানিশমেন্ট না দিলে আপনার কিন্তু ভয়াবহ ক্ষতি হবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কি ক্ষতি হবে? তারেক রহমানকে খালাস দিয়ে যদি আপনি আপনার চেম্বার থেকে বের হন, এরপরে আপনাকে কিডনাপ করা হবে, আপনাকে গুম করা হবে, আপনার আত্মীয়-স্বজন পরিবার, কেউ কোনদিন লাশ খুঁজে পাবে না। আমার চেম্বারে এসে তারেক রহমানকে মামলঅয় পানিশমেন্ট দেবার জন্য চাপ প্রয়োগ করার জন্য তারাও চেষ্টা করে। তাদেরকে বা এগুলো পাত্তা দেই নাই।”

তিনি বলেন, “শুক্রবারে আমাকে সন্ধ্যায় যেতে বলল, গোয়েন্দাবাহিনী আসল, গোয়েন্দারা, ডিজিএফআই আসলো। ওনারা আমাকে নিয়ে গেলেন জাস্টিস আসিস রঞ্জন সাহেবের বাসায়। দুই-চার মিনিট পরেই দেখি আইন সচিব দুলাল এবং ঢাকার চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দাস, জাস্টিস আসিস রঞ্জনের বাসায় আমরা যেখানে বসেছিলাম সেই রুমে ঢুকলো। ঢুকে তারা চারটা পিস্তলই বাইর করলো। বাহির করে গুলি লোড করতেছে, আর আমাকে দেখাচ্ছে। এই পিস্তল দিয়ে ৮টি গুলি বাইর হয়। একবার যদি ট্রিগার চাপি তাহলে আটটা গুলি, দশটা গুলি আপনার দেহ ছেদ করে বেরিয়ে যাবে। এইবার বলেন তারেক রহমানের মামলার রায় সম্পর্কে কি করবেন? আমি ভীত সন্তস্ত্র হয়ে পড়ি এবং আমার জাস্টিস উনিও ভীত সন্তস্ত্র হয়ে পড়েন। আইন সচিব দুলাল সে বার বার চাপ দেয় এ মামলায় শাস্তি না দিলে, এই মামলায় জেল না দিলে, এই মামলায় তারেক রহমানকে খালাস দিলে কেউ নিস্তার পাবেন না। তখন আমি বললাম (জাস্টিস আসিস রঞ্জন সাহেবকে)- স্যার এই মামলায় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে- নো এভিডেন্স। একজন সাক্ষীও, সরকারপক্ষ ছাড়া, তার বিরুদ্ধে নামও বলে নাই, তার নামই উচ্চারণ করে না, কোনো অভিযোগ দেওয়াতো দূরের কথা। তার নামই নাই এভিডেন্সে। আমি কিভাবে পানিশমেন্ট দেবো? আমি বললাম যে-আমি এ রায় লিখতে পারবো না। তখন আইন সচিব দুলাল জাস্টিস আসিস রঞ্জন বাবুকে বললেন- স্যার কি করা যায়? আমি বললাম, জাস্টিস স্যার আপনি রায় লিখে দেন- আমি দেখবো। জাস্টিস সাহেব বললেন, না। আমি রায় লিখতে পারবোনা। মোতাহার সাহেবের রায় মোতাহার সাহেব লিখবে।”

রায়ে তারেক রহমানের সাজ কি হবে তা লিখে আইন সচিব দুলাল রায়ের কপি সাবেক বিচারক মোতাহারের কাছে পাঠিয়েছিলেন। এ বিষয়ে মোতাহার বলেন, “আমাকে ধরে আবার গোয়েন্দা বাহিনী নিয়ে আমাকে বাসায় রেখে দিলো। এবং আইন সচিব দুলাল সিদ্ধান্ত দিলো- আগামীকালকে এই রায় আমি বাসায় বসে লিখবো। আমাকে কম্পিউটার টাইপিস্ট দিবে। সারাদিন লেখে সন্ধ্যার আগে অর্থাৎ শনিবার (১৬ নভেম্বর) জাস্টিস সাহেবের বাসায় আসতে হবে। তারেক রহমানকে কনভিকশন দিয়ে সেই লেখা কমপ্লিট করে জাস্টিস সাহেবের বাসায় পরেরদিন অর্থাৎ শনিবার সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজের আগে হাজির হতে হবে। আইন সচিব দুলাল এই নির্দেশ দিলেন।---তখন আমার কাছ থেকে রায়টা গোয়েন্দাবাহিনী আইন সচিব দুলালের কাছে নিয়ে যায়। পরের দিন হলো রবিবার, রায় দেয়া হবে। পরের দিন সকাল বেলা গোয়েন্দা বাহিনী একটি রায়, আইন সচিব দুলালের নিজের হাতে লেখা, তারেক রহমানকে পানিশমেন্ট দিয়ে একটি রায় লিখে আমার কাছে পাঠিয়েছেন। আমি বললাম যে, কনভিকশন উনি শুধু দিয়েছেন। কিন্তু কনভিকশন উনি কেন দিয়েছেন, এভিডেন্স পর্যালোচনা নাই, তার বিরুদ্ধে কে সাক্ষি, কোনো সাক্ষ্য দিয়েছেন কিনা, কোনো সাক্ষ্য প্রমাণ ছাড়া কনভিকশন দেবে, এটাতো হতে পারে না। রায়টা নিয়ে গোয়েন্দা বাহিনী আমাকে বাসা থেকে কার্টে নিয়ে গেলো, রায় দেয়ার জন্য।”

তিনি বলেন, “এজলাসে উঠে যা সত্য ও সঠিক, আমার ২৯ বছরের চাকরি জীবনে কখনই, কোনোক্রমে যেটা আমি করি নাই, সেটা হলো-উইদাউট বেসিস, উইদাউট এভিডেন্স, সাক্ষ্য ছাড়া, ভিত্তি ছাড়া, সে যেই হোক তাকে তো পানিশমেন্ট দেয়া যাবে না। তাই আমি আমার বিবেক, নীতিবোধ, আমি এভিডেন্স পর্যালোচনা করে, আইন পর্যালোচনা করে, উনি (তারেক রহমান) ছিলেন সম্পূর্ণ নির্দোষ। তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ ছিল না। তাই তাকে নির্দোষ সার্বস্ত করা হয়। তারপর সেখান থেকে ৪ দিন আগেই ছুটি নিয়ে আত্মগোপনে চলে যাই। যেহেতু চারদিকে আমাকে থ্রেট, আমাকে গুম করবে, আমাকে খুন করবে। হাজার হাজার পুলিশ এর ভিতরেই আমি ওখান থেকে গোপনে পালিয়ে আসি।”

আইন মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করে বিচারক মোতাহার হোসেনকে অবসরের দিনটিতে অপহরণ করার পরিকল্পনা করা হয়েছিলো-এ প্রসঙ্গ তোলে ধরে তিনি বলেন, “একটা সংবাদপত্র, একটা পত্রিকা- রায়ে কেন খালাস হয়েছে, কেন পানিশমেন্ট হয়নি এই নিউজটা একটা পত্রিকায় পাবলিশ হলে সোমবারের পর থেকে এ রায় নিয়ে সব মানুষ নিরব হয়ে যায়। নিরব হওয়ার পরে তখন আমি ঢাকার পরিবেশ অভজার্ব করি। তখন আমি ৪ দিন পরে ঢাকায় ফিরে আসি। ১৩ দিন পরে আমার রিটায়ামেন্টের ডেট ছিল। এই ডেটে-যে দিন আমি রিটায়ারমেন্টে যাব, সেই তারিখে আমাকে কোর্ট থেকে রিটায়ারমেন্টের কাগজপত্র দস্তখত করে বাসায় যাওয়ার পথে তারা কিডনাপ করবে। এই ষড়যন্ত্র করে তিন বার মিটিং করে আইন মন্ত্রণালয়ে। আইন মন্ত্রণালয়ের লোক মারফত আমি এ তথ্যটা পাই। এটা পাওয়ার পরে, যেদিন আমার রিটায়ারমেন্টে যাবার ডেট তারা ফিক্সড করে, সেই ডেটের আগের রাতে আমি অফিস, বাসা রেখে, আমি পালিয়ে চলে যাই, আবার আত্মগোপনে যাই, তাদের ভয়ে।”

দেশের নিন্ম এবং উচ্চ, কোনো আদালতের বিচারকই স্বাধীন নয়, রায় দিতে হয় সরকারের ইচ্ছানুযায়ী এমন মন্তব্য করে মোতাহার হোসেন বলেন, “তারেক রহমানকে কনভিকশন দেয়ার রায় আইন সচিব দুলাল লিখে দিয়েছিল। সেটা আমি সাহসের সাথে মোকাবেলা করে তার রায় আমি প্রকাশ করি নাই। আমি দেশ থেকে পালাতে বাধ্য হয়েছি। কিন্তু বর্তমান বিচারক! এই ভুলটুকু আইন সচিব দুলাল করবেনা। রায়টা আগে লিখে, সই করে, ওই রায়ের কপি থাকবে ডিজিএফআইয়ে’র কাছে, সশস্ত্র বাহিনীর কাছে। ঐ রায় প্রকাশ করার জন্য তা হাতে দিয়ে এজলাসে উঠিয়ে দিবে যে তুমি এই রায়টা পড়ে দিয়ে আসো। এছাড়া ঐ বিচারকের ক্ষমতা নাই এই মামলায় তার নিজ আইন-গুণে, সাক্ষী-সাবোধ পর্যালোচনা করে রায় দেয়ার। শুধু এই জজ নয়। রাজনৈতিক সংশ্লিষ্ট কোনো মামলায়, শুধু নিন্ম আদালত নয়, হাইকোর্টে কোনো জজের কোনো ক্ষমতা নেই তারা বিচার বিভাগ দিয়ে, আইন দিয়ে ন্যায় বিচার করার। আপনি খোঁজ নিয়ে দেখেন, সে গোয়েন্দাবাহিনী দ্বারা একেবারে ঘেরাও হয়ে আছে। তার বাসা ঘেরাও হয়ে আছে। রায় বিচারক লিখলেও সে রায় আগে আইন সচিবকে দিয়ে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেখিয়ে, কনর্ফাম করে, তারপর উনি রায় সই করতে বলেন। এ ছাড়া বিচারকের ক্ষমতা নাই ওই রায় উনি নিজে জ্ঞান-বিবেচনা, আইন, সাক্ষী-সাবদ পর্যালোচনা করে রায় দেবে, এ ক্ষমতা তার নাই। কোনো বিচারকের হাতে নাই।”

আইন সচিব দুলাল স্বাধীন বিচাওে হস্তক্ষেপ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “প্রতিটি জজ এখন তটস্থ। কিন্তু বিচারক ন্যায় বিচারের কোনো চিন্তা করে না, কোনো আইনের চিন্তা করে না। আইন সচিব দুলাল কি নির্দেশ দিচ্ছে- সেটাই তাদেরকে রায় দিতে হচ্ছে, রিমান্ডে দিতে হচ্ছে, বিনা অপরাধে মানুষ রিমা-ে গিয়ে নির্যাতিত হচ্ছে। সর্বত্র অন্যায়ের বিচার, আইনের কোনো বিচার নাই, ন্যায় বিচার নাই, নিরপেক্ষ আদালত নাই, আইনের শাসন নাই। বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি যখন বিচার পায় নাই, আমি নিন্ম আদালতের একজন জেলা জজ পর্যায়ের বিচারক ছিলাম আমি ন্যায় বিচার পাই নাই। তাহলে বিরোধী দলের নেতাকর্মী বা অন্য কেউ ন্যায় বিচার পাবে বর্তমান এ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে, এটা জাতি বিশ্বাস করে না।”

নিজের বিরুদ্ধে করা দুর্নীতির অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে মোতাহার হোসেন বলেন, “দুর্নীতি দমন কমিশন নাকি অনুসন্ধান করেছে। পত্রিকায় দেখেছি, মিডিয়াতে দেখেছি, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ লন্ডনে আমার বিরাট একটা প্রাসাদসম বাড়ি আছে, বউ আছে, বাচ্চা-কাচ্চা আছে। এ দেশে কোটি কোটি টাকার ধন সম্পদ করেছি। এ সমস্ত পত্রিকায় দেখেছি। তবে দুদক অনুসন্ধান করে, দুদুকের সচিব যিনি, উনি একটি পত্রিকায় সাংবাদিকদেও সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বলেছেন, জনাব মোতাহার হোসেনের বিরুদ্ধে তদন্ত করে এ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোনো প্রকার দুর্নীতির অভিযোগের প্রমাণ আমরা পাইনি।”

বিচারের দায়িত্ব পালনকালে আইনের শাসন আর ন্যায় বিচার চিন্তা করে কাজ করেছেন মন্তব্য করে মোতাহার হোসেন বলেন, “আমি আমার ন্যায় বিচার, আমার বিবেক দিয়ে, আমি একজন মুসলিম পরিবারের সন্তান, আমি আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রেখে বলছি, আমি ন্যায় বিচারে কারো হস্তক্ষেপ বা থ্রেট মানিনি। আমি সংগ্রাম করে আসছি। আমিতো জীবন বাজি রেখে এ মামলার রায় দিয়ে আসছি। তারেক রহমান, বিএনপি, রাজনীতি, আমি কোনো কিছু মানিনি। আমি দেখেছি আইন, আমি দেখেছি ন্যায় বিচার, আমার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা প্রমাণ করেছে কিনা, সত্য কিনা। আমি সত্য অভিযোগ না পেলে কোনো আসামিকে কনভিকশন কেন দেবো? এটা কোনো ন্যায়বান মানুষ করতে পারেন না। আমিও করি নাই।”

 

(জাস্ট নিউজ/একে/জিএস/২১১৫ঘ)