ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে ফাটল !

মোদির দাওয়াতে ট্রাম্পের না

মোদির দাওয়াতে ট্রাম্পের না

বিশেষ সংবাদদাতা, ওয়াশিংটন, অক্টোবর ২৯ (জাস্ট নিউজ): নয়াদিল্লি আর ওয়াশিংটনের সম্পর্কে এখন টানা-পোড়েন চলছে। বিষয়টা নিয়ে মুখ ফুটে কিছু না বললেও আচরণ বলে দিচ্ছে-'ডাল মে কুচ কালা হ্যায়'। এ তিক্ততার সাম্প্রতিক পরিণতি হলো- ভারতের প্রজাতন্ত দিবসে প্রধান অতিথি হবার আমন্ত্রণ প্রত্যাখান করে না বলে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

ঠিক কি কারণে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে হঠাৎ করেই ফাটল দেখা দিলো সেটা নিয়ে সরাসরি কোনো কথা বা বিবৃতি না আসলেও আন্তর্জাতিক বোদ্ধা এবং বিশ্লেষকরা বলছেন ইরান থেকে তেল আমদানি আর অতি সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ভারত সফরের সময় রাশিয়ার সঙ্গে ক্ষেপণাস্ত্র চুক্তির কারণেই রেগেছে যুক্তরাষ্ট্র।

ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো বলছে, ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষে প্রধান অতিথির আসন অলংকৃত করার জন্য কয়েক সপ্তাহ আগেই ট্রাম্পকে আর্জি জানিয়েছিলো নরেন্দ্র মোদির সরকার। সে দাওয়াত প্রত্যাখান করা হয়েছে অনেকটা কৌশল অবলম্বন করে! ভারতের প্রভাবশালী সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভি যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে- একের পর এক কাজের চাপ থাকায় ভারতের দাওয়াতে আসতে পারছেন না প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

আগস্টের শুরুর দিকেই ভারত সফরের জন্য ট্রাম্পকে আমন্ত্রণ পাঠানো হয়েছিলো বলে জানিয়েছেন হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র সারাহ সেন্ডার্স। কেন এ সফর বাতিল হলো এ নিয়ে সরাসরি কোনো কথা বলেনি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, তবে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত দেশটির দূতাবাস মিশন বলছে- এ নিয়ে কেবল হোয়াউট হাউস মন্তব্য করতে পারে।

জানুয়ারি মাসে ট্রাম্পের ভারত যাওয়া হচ্ছেনা এমন আভাস গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই দিয়ে যাচ্ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা।

অফিসিয়ালি যাই বলা হোক অন্দরমহলে যে কিছু একটা ঘটেছে সেটা দিনের আলোর মতোই স্পষ্ট। রাশিয়ার সঙ্গে ভারত যেন এস-৪০০ মিসাইল চুক্তি না করে সে জন্য জোর তৎপরতা চালিয়ে আসছিলো যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু এ মাসের শুরুর দিকে অনেকটা হাঁকডাক করেই পুতিনের সঙ্গে অস্ত্রচুক্তি করলেন মোদি। এছাড়া চির বৈরি ইরানের কাছ থেকে যেন ভারত তেল রপ্তানি না করে সে ব্যাপারটিতেও আপত্তি ছিলো যুক্তরাষ্ট্রের। ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন না হলে অবরোধ আরোপ করার হুমকিও ছিল ট্রাম্প প্রশাসনের। ভারতের সংবাদ মাধ্যম ইন্ডিয়ান টুডে বলছে- মূলত এই দুই কারণেই নয়াদিল্লির প্রতি নাখোশ ওয়াশিংটন, আর বাতিল করা হয়েছে ট্রাম্পের সফর।

এ বছরের ৬ সেপ্টেম্বর ভারত সফরে গিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস। এসময় বৈঠক করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ আর প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সিতারমনের সঙ্গে। বৈঠকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টসূত্রগুলো জানিয়েছিলো- এসব বৈঠক শুধুমাত্র নিয়মরক্ষা আর যথারীতি নিরাপত্তা ইস্যু কেন্দ্রিক ছিলোনা। এর বাইরে আঞ্চলিক, প্রতিবেশি রাষ্ট্রসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হয়। অনেকটাই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের দরকষাকষি বলা যেতে পারে। পম্পেও সফরের রেশ কাটতে না কাটতেই ওয়াশিংটনে উড়াল দিয়েছিলেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল।

যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের পক্ষ থেকে ট্রাম্পের না আসতে পারার কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে জানুয়ারিতে স্টেট অব দ্য ইউনিয়নের ভাষণ, আর এ কারণেই তিনি শিডিউল মেলাতে পারছেননা। কিন্তু অতীত বলে ভিন্ন কথা। এর আগে ২০১৫ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারকা ওবামাও ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের আমন্ত্রণে উপস্থিত হয়েছিলেন। আর সে সময় সফর কারণে পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিলো স্টেট অব দ্য ইউনিয়নের সূচি। সূত্র বলছে যুক্তরাষ্ট্রের এ কর্মসূচির তারিখটি নির্ধারিত কোনো দিনেই করতে হবে এমন বাধ্যবাধকতা নেই, তবে এটা জানুয়ারির ২২ তারিখ থেকে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে করে নেবার একটা রেওয়াজ আছে।

ট্রাম্প সফরে রাজি না হওয়ায় অনেকটা মনোক্ষুন্ন নয়াদিল্লি। তাদের দৃষ্টি এখন অন্য রাষ্ট্রপ্রধানদের দিকে। বিশ্লেষকদের ধারণা ট্রাম্পের সফর বাতিল করার মারপ্যাঁচে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র কেও সে আমন্ত্রণ গ্রহণ করে দেশটির বিরাগভাজন হতে যাবেননা স্বাভাবিকভাবেই। বিষয়টি এখন ভারতের ইমেজ রক্ষার লড়াই হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রজাতন্ত্র দিবসের সফরে কে আসবেন সেটা সময়েই দেখা যাবে। তবে দিল্লি-ওয়াশিংটনের সম্পর্কের গাঢ় ফাটলটা ক্রমেই স্পষ্টতর হচ্ছে।

(জাস্ট নিউজ/জিএস/১৯৪০ঘ)