২০০ বছরের কূটনৈতিক বন্ধনে যুক্তরাষ্ট্র ও সুইডেন

আমি দ্বন্দ্ব পছন্দ করি: হোয়াইট হাউসের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব প্রসঙ্গে ট্রাম্প

আমি দ্বন্দ্ব পছন্দ করি: হোয়াইট হাউসের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব প্রসঙ্গে ট্রাম্প

হোয়াইট হাউস থেকে মুশফিকুল ফজল আনসারী, মার্চ ৭ (জাস্ট নিউজ): যুক্তরাষ্ট্র ও সুইডেনের কূটনৈতিক বন্ধুত্বের দুই’শ বছর পূর্তি উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন “সুইডেন আমাদের খুবি পুরনো এবং ঘনিষ্ট মিত্র। বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সুইডেনই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে খাঁটি বন্ধুত্বের নজির স্থাপন করেছে। যার উদাহরণ ১৭৮৩ সালে করা দুই দেশের মধ্যকার চুক্তি।”

মঙ্গলবার দুপুরে হোয়াইট হাউসের ইস্ট রুমে আয়োজিত যুক্তরাষ্ট্র সফররত সুইডিশ প্রধানমন্ত্রী স্টেফান লোফভেনকে সাথে নিয়ে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প এসব কথা বলেন।

জবাবে দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কের অটুট বন্ধুত্বের দিকটি ইঙ্গিত করে সুইডিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন “ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে যুক্তরাষ্ট্র আর সুইডেন গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের মতো বিষয়গুলোতে একই মৌলিক নীতি আর আদর্শ ধারণ করে। দুই দেশের রয়েছে মজবুত বন্ধুত্ব, আর এটা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিভাবে দুই দেশের সমৃদ্ধি আর নিরাপত্তার বিষয়টি আরো শক্তিশালী করা যায় সেটা নিয়ে আজ আমরা কথা বলেছি।”

মঙ্গলবার ওভাল অফিসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তরফে উষ্ঞ আতিথেয়তা গ্রহণ করেন সুইডিশ ট্রেড ইউনিয়নের একসময়কার শীর্ষ নেতা ও দেশটির বর্তমান স্যোশাল ডেমোক্রেট দলের চেয়ারম্যান প্রধানমন্ত্রী লোফভেন।

দুই নেতার উদ্বোধনী বক্তব্যের পরপরই ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে নতুন শুল্ক আরোপ, হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তাদের ‘অভ্যন্তরীন দ্বন্দ্ব’ ও উত্তর কোরিয়াসহ নানান ইস্যুতে সংবাদসম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

স্টীল আর অ্যালমুনিয়ামে ট্রাম্প ঘোষিত নতুন শুল্ক আরোপ বিষয়ে নিজের নিজের অস্বস্থি কথা তোলে ধরে সুইডিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন “মুক্ত বাণিজ্যে সহযোগিতামূলক প্রতিযোগিতা মাধ্যমেই সুইডিশ সমৃদ্ধি আসবে। যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে যে বাণিজ্য শুল্ক আরোপ করেছে দীর্ঘ মেয়াদে তা সবাইকে ক্ষতিগ্রস্থ করবে। বাঁধা এড়িয়ে বাণিজ্যকে এগিয়ে নেয়া যায়র ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রচেষ্টাকে একজন সুইডিশ হিসেবে আমি অবশ্যই সমর্থন করি।”

নতুন শুল্ক আরোপ ইস্যুতে প্রশ্ন করা হলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন “দশকের পর দশক ধরে বন্ধু কিংবা যারা ঠিক বন্ধুও নয় এমন সব দেশের বাণিজ্যে কর সুবিধা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। বছরের আমাদের ৮০০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে, আমি আর এটা ঘটতে দিতে চাই না। অনেকেই আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে, অনেক সময় এটা করেছে নিখুঁতভাবে। হয়নি একরকম উদাহরণ খুবি কম আছে।”

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন “আমি এটা থেকে দেশকে রক্ষা করতে চাই। আমি নির্বাচিত হওয়ার পেছনে এটা একটা কারণ যে, আমি দেশের শ্রমিকদের অধিকারের পক্ষে সুরক্ষা দিয়ে যাচ্ছি। কোম্পানিগুলোকে সুরক্ষা দিচ্ছি। দেশের কোনো ক্ষতি আমি আর হতে দেবো না। তাই আমরা স্টীলের উপর শুল্ক আরোপ করেছি। আমরা স্টীল শিল্পকে হারাতে চাইনা। অতীতে এটা ভগ্ন অবস্থার মধ্যে ছিলো। একইভাবে অ্যালমুনিয়াম শিল্পকেও আমরা হারাতে পারিনা।”

হোয়াইট হাউস ‘কেওয়াস’ বা কর্মকর্তাদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি ‘দ্বন্দ্ব’ পছন্দ করেন বলে মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন “ইস্যুটি ভয়নাক করে তোলা হচ্ছে। আমি দ্বন্দ্ব পছন্দ করি। দুই ব্যক্তির দুই রকম চিন্তাগত পার্থক্য থাকাটা আমি ভালো দৃষ্টিতে দেখি। নিশ্চিতভাবে আমারো এটা রয়েছে। এর উপর ভিত্তি করেই আমি একটা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। মতপার্থক্যের এ বিষয়টা আমি দেখতে, পর্যবেক্ষণ করতে পছন্দ করি। এটা চলতে দেওয়াটাই সবচাইতে ভালো উপায়।”
হোয়াইট হাউসের অসাধারণ কর্মক্ষমতা রয়েছে উল্লেখ করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, আমাদের অনেক প্রতিভা আছে। অনেকে হোয়াইট হাউসে কাজ করতে চায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসে। যেমন সামনেও পরিবর্তন আসবে। যা আমি সুনির্দিষ্ট করছিনা”।

উত্তর কোরিয়া ইস্যুতে উত্তেজনা প্রশমনের আশাবাদ ব্যক্ত করে ট্রাম্প বলেন এ ইস্যুতে দেশটি আন্তরিক হবে বলে তার বিশ্বাস। তিনি বলেন, অবরোধের ব্যাপারে অন্যরাও আন্তরিক। আমরা যেটা করছি সেটা উত্তর কোরিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই, আর এ ব্যাপারে বড় সহযোগিতা করছে চীন। এ বিষয়টিত চীন আরো বেশী কিছু করতে পারতো। তবে তারা যেটুকু করছে সেটা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশী।

ট্রাম্প আরো বলেন “অবরোধ কঠোর থেকে কঠোরতর হচ্ছে। এটা হোক আমরা তা চাই না। আমি প্রকৃত অর্থে বিশ্বাস করি তারা আন্তরিক হবে। আশা করি তা তারা করবে। আমরা দ্রুতই এ বিষয়ে সমাধানে পৌঁছতে চাই।”

(জাস্ট নিউজ/জিএস/১৩২০ঘ)