উ. কোরিয়ার কারাগার থেকে মুক্তি পেলো ৩ আমেরিকান

বিমান ঘাঁটিতে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালেন ট্রাম্প

বিমান ঘাঁটিতে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালেন ট্রাম্প

জয়েন্ট বেস এন্ড্রুস থেকে মুশফিকুল ফজল আনসারী, মে ১০ (জাস্ট নিউজ): জয়েন্ট বেস এন্ড্রুস- যুক্তরাষ্ট্রের একটি সামরিক বিমান ঘাঁটি। ঘড়ির কাটায় তখন স্থানীয় সময় রাত ২ টা ৪২ মিনিট। একটি বিমান স্পর্শ করলো রানওয়ের মাটি। বাইরে স্বস্ত্রীক অপেক্ষমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও আর আমন্ত্রিত গণমাধ্যম কর্মীরা। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের দৃষ্টি তখন টেলিভিশন ও স্যোশাল মিডিয়ায় নিবদ্ধ। বাইরের দুনিয়াও অবাক বিষ্ময়ে প্রত্যক্ষ করছে এক স্মরণীয় মূহুর্ত। মুক্ত হয়ে দেশে ফিরছেন ৩ আমেরিকান। আবেগ, শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় বরণ করে নিচ্ছে তাদের গর্বিত জাতি।

উত্তর কোরিয়ার কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করে বৃহস্পতিবার সরাসরি দেশের পথে রওনা করেন কিম ডং চুল, কিম সাং ডাক ও কিম হাক সাং। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও পিয়ংইয়েং স্বশরীরে হাজির হয়ে তার দেশের নাগরিকদের মুক্তি নিশ্চিত করে একই সময় দেশের পথে পা বাড়ান। মেডিকেল সরজ্ঞামাদির সুবিধাসহ ৩ নাগরিককে বহনকারী যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশেষ বিমান রাত ২ টা ৪৯ মিনিটে দেশটির জাতীয় পতাকা আচ্ছ্বাদিত বিশেষ টারমিনালে এসে দাড়ায়। এগিয়ে যান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ফার্স্ট লেডি মেলিনিয়া ট্রাম্প। পেছনে তাদের অনুসরণ করেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ও সেকেন্ড লেডি কারেন পেন্স ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। ২ টা ৫৪ মিনিটে ট্রাম্প দম্পতি সোজা প্রবেশ করেন বিমানের ভিতরে। মিনিট ৬ অবস্থানের পর রাত ৩ টায় হাত ধরে সিড়িঁ বেয়ে নামিয়ে আনেন মুক্ত ৩ আমেরিকান নাগরিককে। সহাস্যে তারাও বেরিয়ে এলেন স্বদেশের মাটিতে। উত্তর কোরিয়া আর যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের নাটকীয় পালা-বদলের ঘটনা প্রতক্ষ্য করলো সারা দুনিয়া।

তিন নাগরিককে সাথে নিয়ে হোয়াইট প্রেস কোরের সামনে উপস্থিত হয়ে হয়ে নিজের অনুভূতির কথা জানান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। বলেন, তিন জন ফিরে আসায় আজকের রাতটা বিশেষ রাতে পরিণত হয়েছে।

তার সঙ্গে উত্তর কোরীয় নেতা কিম জন উনের নির্ধারিত বৈঠকের আগেই তিন নাগরিকের মুক্তি দেয়ার ঘটনাকে ‘শুভ বার্তা’ বলে উল্লেখ করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, এমনটি আমি নিজেও ভাবিনি। তবে আশার কথা সেটি ঘটেছে। এজন্য আমি উত্তর কোরিয়ার নেতা কিমকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

নাগরিকদের কারামুক্তিকে নিজের সেরা অর্জন হিসাবে ভাবছেন কিনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে প্রেসিডেন্ট বলেন, পুরো কোরিয়াকে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত করাটাই হবে সবচয়ে বড় অর্জন। তবে নিঃসন্দেহে এটি একটি বড় অগ্রগতি।

তিনি বলেন, এটা বড় একটা অর্জন। কিন্তু সত্যিকারের বড় অর্জন তখনি হবে যখন পরমাণু অস্ত্র বন্ধে বিজয় আসবে।

একদিন উত্তর কোরিয়া সফর করবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন ট্রাম্প।

বন্দিদশা থেকে মুক্ত একজন নাগরিক বলেন, এ মুক্তি অকল্পনীয়। মনে হচ্ছে যেনো স্বপ্ন। নিজ দেশের সরকার ও জনগনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তারা। কারাবাসের অভিজ্ঞতার কথা জানতে চাইলে বলেন, তাদেরকে দিয়ে অনেক কষ্টের কাজ করানো হতো। তবে অসুস্থ হওয়ার পর তারা পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা পেয়েছেন।



বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড পাওয়া এই ৩ নাগরিককে সাধারন ক্ষমা ঘোষণা করেন কিম। উত্তর কোরিয়ার পিয়োংইয়োং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করতে যাওয়া কোরায়িয়ান বংশোদভূত নাগরিক কিম হাক সাং কে মে ২০১৭ সালে দেশটির সরকার। গত বছরের ২২ এপ্রিল বিমান বন্দর থেকে আটক হন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষক টনি কিম বা কিম সাং ডাক। গুপ্তচরের অভিযোগ এনে দক্ষিণ কোরিয়ায় জন্ম নেয়া আমেরিকান নাগরিক কিম ডং চুলকে গ্রেফতার করা হয় ২০১৫ সালের অক্টোবরে। চুল উত্তর কোরিয়া ও চীন সীমান্তে হোটেল ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন।

এরকম কোনো আয়োজন না থাকলেও ২০১৭ সালের জুন মাসে উত্তর কোরিয়ার বন্দিদশা থেকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় মুক্তিলাভ করেছিলেন আমেরিকান কলেজ ছাত্র অটো ওয়ার্মবিয়ার। তবে কারা নির্যাতনে তিনি এতোটাই বিপর্যস্থ হয়েছিলেন যে ফেরার ৬ দিনের মাথায় তাকে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতে হয়েছে। ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে হংকং হয়ে উত্তর কোরিয়া বেড়াতে গিয়ে আটক হন ওয়ার্মবিয়ার।

(জাস্ট নিউজ/জিএস/১৯০০ঘ)