যুক্তরাষ্ট্রের রিলিজিয়াস ফ্রিডম প্রতিবেদন

ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় ব্যর্থ বাংলাদেশ

ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় ব্যর্থ বাংলাদেশ

ওয়াশিংটন থেকে বিশেষ সংবাদদাতা, ৩০ মে (জাস্ট নিউজ): সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষ নীতি থাকা স্বত্তেও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দিতে বাংলাদেশ সরকার ব্যর্থ হয়েছে। সরকারকে অবগত করার পরও উচ্ছেদ ও জমি দখলে থেকে নিষ্কৃতি পাচ্ছেনা দেশটির সংঘলঘু সম্প্রদায়গুলো। বৌদ্ধ ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের বাড়িতে আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটেছে।

২০০টি দেশের ধর্মীয় স্বাধীনতা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দফতর মঙ্গলবার “২০১৭ বার্ষিক রিপোর্ট ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম”এ বাংলাদেশ প্রসঙ্গে এ তথ্য প্রকাশ করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, পাঠ্যপুস্তকে ঐতিহ্যগত ধর্মনিরপেক্ষতার বিষয়গুলোয় তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে। পাঠ্যপুস্তক থেকে অমুসলিম লেখকদের লেখা সরিয়ে ধর্মের সঙ্গে সম্পর্ক নেই—এমন সব বিষয়েও ধর্মীয় উপাদান যুক্ত করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, যেমন: হিন্দু, বৌদ্ধ, ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষদের উচ্ছেদ ও তাদের জমি দখল হয়ে যাওয়ার বিষয়ে কার্যকর সুরক্ষা দিতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে।

গত বছর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন, বিশেষ করে বৌদ্ধ ও হিন্দুদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। জুন মাসে দেশটির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে চাকমাদের ৩০০ বাড়িতে আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটেছে। ওই সময় ৭০ বছর বয়সী এক নারী হামলায় নিহত হন। একজন মুসলিম ব্যক্তিকে হত্যার ঘটনা থেকে আগুন-সহিংসতার সূত্রপাত ঘটে। ফেসবুকে ইসলাম অবমাননাকর পোস্ট দেয়ার অভিযোগে দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলা রংপুরে হিন্দুদের ৩০টি বাড়িতে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়।

এতে বলা হয়, স্থানীয় প্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় বাংলা পাঠ্যপুস্তক থেকে দেশটির ঐতিহ্যগত ধর্মনিরপেক্ষতার বিষয়গুলোতে তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে। যেমন অমুসলিম লেখকদের লেখা সরিয়ে নেয়া হয়েছে এবং ধর্মের সঙ্গে সম্পর্ক নেই—এমন সব বিষয়েও ধর্মীয় উপাদান যুক্ত করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ধর্মীয় সহিষ্ণুতার ওপর জোর দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তা, বিশিষ্ট নাগরিক, বেসরকারি সংস্থা ও ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে দেখা করেছেন। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের দূতাবাসের পক্ষ থেকে মানবিক সহায়তা দেয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে সংখ্যালঘুদের ব্যাপারে সরকারের উদাসীনতার কড়া সমালোচনা করা হয়। এতে বলা হয়, যখনি উচ্ছেদ আর ভূমি দখলের মতো ঘটনা ঘটে তখনি আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে এ ব্যাপারে ধীর গতি দেখা যায়।

মিডিয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬ সালে ধর্মনিরপেক্ষ যেসব ব্লগার এবং লেখকদের হত্যা করা হয়েছিল তাদের তদন্ত পুরোপুরি শেষ হয়নি।বছর শেষে কারো বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করতে পারেনি পুলিশ।

হিন্দু-খ্রিস্টানসহ বিভিন্ন সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর সম্পদ এবং সম্পত্তি অনেক বিষয়গুলোতে এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।আর এসব নিয়ে পুলিশ কিংবা রাজনৈতিক নেতৃত্বের দ্বারস্থ হয়ে কোনো সুফল পাওয়া যায়না। মানবাধিকরা সংস্থার অধিকার বলছে, আইনি জটিলতা এবং বিভিন্ন মারপ্যাচের কারণে বঞ্চিত হচ্ছে সংখ্যালঘুরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটিতে অধিকাংশ মসজিদ স্বাধীনভাবে চললেও অনেক ক্ষেত্রে ইমাম নিয়োগ এবং খুতবার বিষয়ে সরকার প্রভাব খাটিয়ে থাকে। ধর্মীয় কমিউনিটি নেতারা জানিয়েছেন- সরকারের নীতির বিরুদ্ধে যায় এমন বিষয় খুতবায় সাধারণত এড়িয়ে চলা হয়।

বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের তথ্যমতে, সরকার ভূমি বিরোধ সংক্রান্ত মামলাগুলোর ভিতর এ পর্যন্ত তিন শতাংশ বিচার করেছে। যেসব হিন্দুরা সম্পত্তি রেখে ভারত চলে গেছে সেগুলোর বিরোধ নিষ্পত্তিতে জেলা প্রশাসক এবং আইন মন্ত্রণালয়ে ধীর গতিতে কাজ করছে।

বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বন্ধ হয়নি উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, সহিংসতা এখনো মৃত‌্যু, আঘাতপ্রাপ্ত হওয়া, জমি হারানো এসব ঘটনা ঘটছে।

এতে বলা হয়, বাংলাদেশস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস বরাবরই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার আহবান জানিয়ে আসছে আর এ লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।

(জাস্ট নিউজ/জিএস/০৩৫০ঘ)