‘রাষ্ট্রদূত বার্নিকাটের বক্তব্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান এক ও অভিন্ন’

‘রাষ্ট্রদূত বার্নিকাটের বক্তব্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান এক ও অভিন্ন’

ওয়াশিংটন থেকে বিশেষ সংবাদদাতা, জুলাই ৭ (জাস্ট নিউজ): বাংলাদেশের সিটি নির্বাচন ভোটে অনিয়ম নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করায় শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরাগভাজন হয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রেরদূত মার্শা বার্নিকাট। মন্ত্রী, এমপি, দলীয় নেতা আর নির্বাচন কমিশনের রোষানল আর বিদ্বেষে গলা মিলিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী পুত্র এবং তাঁর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ও। ‘যুক্তরাষ্ট্র রাষ্ট্রদূত বিএনপির মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছেন’ বলেও মন্তব্য করেন জয়। বিষয়টি নিয়ে তুমুল আলোচনার মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়ে জানিয়েছে- রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের বক্তব্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান এক ও অভিন্ন।

বাংলাদেশের সিটি নির্বাচনের অনিয়ম, সরকারের মন্ত্রী, এমপি আর উপদেষ্টাদের বিরুপ প্রতিক্রিয়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে দেশটির অবস্থান ও প্রতিক্রিয়া জানতে চায় জাস্ট নিউজ।

জাস্ট নিউজের কাছে পাঠানো লিখিত প্রতিক্রিয়ায় স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র বলেন, ‘রাষ্ট্রদূত বার্নিকাটের বক্তব্যই যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বক্তব্য, তিনি কেবল সরকারের পক্ষ হয়েই কথা বলেন।’

বাংলাদেশে স্বচ্ছ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র উল্লেখ করে লিখিত প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়, ‘যুক্তরাষ্ট্র সরকার সবসময়ই বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ এবং শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার স্বপক্ষে আহবান জানিয়ে আসছে।’

‘যুক্তরাষ্ট্র কোনো দলের পক্ষপাতি নয়’ উল্লেখ করে এতে বলা হয় ‘যুক্তরাষ্ট্র কোনো প্রার্থী বা দলকে সমর্থন করে না। আমরা বাংলাদেশ এবং যে গণতান্ত্রিক নীতির উপর এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাকে সমর্থন করি।’

প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়, ‘প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল অনুসারে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে যে, মুক্ত, স্বাধীন এবং গণতান্ত্রিক জাতিই সমৃদ্ধি, মানুষের সুখ আর শান্তির বার্তা বয়ে আনতে পারে।’

এতে বলা হয়, ‘আমাদের মিত্র এবং বন্ধুত্বপূর্ণ দেশগুলোর সঙ্গে শুরু থেকেই আমরা এ নীতি অবলম্বন করে যাচ্ছি আর যুক্তরাষ্ট্র তা অব্যাহত রাখবে।’

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট বলেছিলেন, গাজীপুর সিটি নির্বাচনে অনিয়মের খবরে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন। খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ ওঠার পর এ নির্বাচন নিয়েও একই ধরনের অভিযোগ ওঠায় উদ্বেগ বেড়েছে।

এর প্রতিক্রিয়ায় গত রবিবার আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতের এভাবে কথা বলা সমীচীন হয়নি।’ এর একদিন পর গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট বলেন, কেবলমাত্র বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনেই যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন দিয়ে থাকে।

এর আগে গত ২ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজের এক স্ট্যাটাসে ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস বিএনপির মুখপাত্রে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন।

ওই স্ট্যাটাসে জয় আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান সরকারের নীতি হচ্ছে, অন্যকোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক না গলানো। তাই এই বক্তব্যটি ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের বলে ধরে নেয়া যায়।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত খুলনা আর গাজিপুর সিটি করর্পোরেশনের অনিয়ম আর কারচুপি নিয়ে কোনো রাখ-ঢাক না করেই তার কড়া সমালোচনা করেছেন সুজন, ইডব্লিউজিসহ দেশীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থাগুলো। আর সে অনিয়ম, আর গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করায় উল্টো আওয়ামী নেতৃত্বাধীন সরকারের তোপের মুখে পড়েছেন বার্নিকাট।

প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্র ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে এক তরফা, ভোটারবিহীন নির্বাচন আখ্যা দিয়ে নতুন একটি স্বচ্ছ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশের প্রতি আহবান জানিয়েছিল। নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন আয়োজন এবং মানবধিকার সুরক্ষার জন্য দেশটি বরাবরই তাগিদ দিয়ে আসছে। সে বিষয়টিতেই বিরাগভাজন শেখ হাসিনা সরকার। আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফও তৎকালীন যুক্তরাষ্ট্রের দূত ড্যান মজিনার কড়া সমালোচনায় কম জাননি। বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন এবং ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেবার জন্য মজিনার অবস্থানকে সহ্য করতে না পেরে ‘কোথাকার কোন মজিনা, কাজের মেয়ে মজিনা’ বলে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেছেন।

বাংলাদেশের নির্বাচন বা অভ্যন্তরীণ কোনো বিষয়ে নাক না গলাতে বার্নিকাটের প্রতি প্রচ্ছন্ন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক ও যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

(জাস্ট নিউজ/জিএস/০১২০ঘ)