চেকার্সে ট্রাম্প-মে যৌথ সংবাদসম্মেলন

ব্রেক্সিটে সাজেশন দিয়েছি, অ্যাডভাইস নয়: ট্রাম্প

ব্রেক্সিটে সাজেশন দিয়েছি, অ্যাডভাইস নয়: ট্রাম্প

লন্ডন থেকে মুশফিকুল ফজল আনসারী, ১৩ জুলাই (জাস্ট নিউজ) : যুক্তরাজ্য সফররত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ব্রেক্সিট ইস্যুতে আমি সাজেশন দিয়েছি, অ্যাডভাইস নয়। থেরেসা মে তাঁর উপদেশ শোনেননি মর্মে ব্রিটিশ দৈনিক দ্য সানে প্রকাশিত সাক্ষাতকার খন্ডিত আকারে প্রকাশ হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

শুক্রবার বাকিংহামশায়ারে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন চেকার্সে থেরেসা মে'র সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে হাজির হয়ে এমন অভিমত ব্যক্ত করেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

স্থানীয় সময় দুপুর ১.৫০ মিনিটে শুরু হওয়া দীর্ঘ ৫০ মিনিটব্যাপী এই সংবাদ সম্মেলনে উঠে আসে বর্ডারকন্ট্রোল, ইমিগ্রেশন, ব্রেক্সিট, রাশিয়া, ন্যাটো, যৌথ বাণিজ্য ও আসন্ন ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু।

শুক্রবার প্রকাশিত ব্রিটিশ দৈনিক দ্য সানে বিস্ফোরণমুখ সাক্ষাতকারের বিষয়ে অবস্থান পরিষ্কার করে সংবাদসম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, "আমার বক্তব্যটি 'ফেইক নিউজ'র মতো প্রকাশ করা হয়েছে"। তিনি বলেন, "আমি যা বলেছি, আমার প্রেস সেক্রেটারি সারাহ স্যান্ডার্সের কাছেও তার পূর্ণাঙ্গ রেকর্ড রয়েছে"।

আমি প্রশ্নোত্তরে কথার পিঠে কথা বলেছি। যেমন জানতে চাওয়া হয়েছিল বরিস জনসন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কেমন করবেন? আমি জবাবে বলেছি- অবশ্যই ভালো করবেন। সংবাদসম্মেলন জুড়ে থেরেসা মে'র প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তিনি বলেন, "থেরেসা মে দেশের জনগণের স্বার্থ রক্ষায় সিদ্ধ হস্ত।"

ব্রেক্সিট প্রসঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, আমি আশা করি থেরেসা মে'র নেতৃত্বে ভালো সমাধানে পৌঁছাবে যুক্তরাজ্য। এসময় তিনি থেরেসা মে'কে উদ্দেশ্য করে বলেন, "যে ধরনের ডিল-ই করেন না কেন আমরা বাণিজ্যিক সম্পর্ক অব্যাহত রাখতে চাই।"

ইমিগ্রেশন ইস্যুতে অনেকটা পরস্পর বিরোধী বক্তব্য দেন ট্রাম্প ও মে। যথারীতি ইমিগ্রেশনের সমালোচনা করে ট্রাম্প বলেন, আমরা ইমিগ্রেশন নিয়ে মারত্মক অবস্থার সম্মুখীন। আমাদের (যুক্তরাষ্ট্রের) ইমিগ্রেশন আইনটি অবশ্যই পরিবর্তন করতে হবে।

ট্রাম্প ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, "আমি একে ইমিগ্রেশন আইন বলতে নারাজ। কেউ একজন কোনো রকমে সীমান্ত পাড়ি দিয়েই মামলা ঠুকে দিল। এটা চলতে পারেনা।"

ট্রাম্প বলেন, বর্ডারকন্ট্রোলে আমরা কোনো ছাড় দেবােনা।

থেরেসা মে বর্ডারকন্ট্রোলে একমত পোষণ করলেও ইমিগ্রেশন প্রসঙ্গে বলেন, "মানবাধিকারকে সমুন্নত রেখে মানুষকে আশ্রয় দানের বিষয়ে যুক্তরাজ্যের দীর্ঘ দিনের ঐতিহ্য রয়েছে। যারা আমাদের এখানে আছেন তারা সামাজিক এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নেও অবদান রেখে চলেছেন।" তবে বর্ডার কন্ট্রোলে সচেষ্ট হবার কথা বলেন তিনি।

পুতিনের সঙ্গে আসন্ন বৈঠক প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, ইউক্রেন, সিরিয়ার মতো বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে হেলেনস্কিতে আগামী সোমবার তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হবেন। প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের ভালো ফলাফল হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।

দুই দেশের যৌথ বাণিজ্য, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার বিস্তারিত দিক নিয়ে উভয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন বলে সংবাদসম্মেলনে জানান।

থেরেসা বলেন, নিরাপত্তা আর সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র-বৃটেন গলাগলি করে এগিয়ে যাবে।

সেলিসবুরি থেকে রাশিয়ার নার্ভ এজেন্ট অ্যাটাকের কথা উল্লেখ করে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রকে পাশে থাকার জন্য সাধুবাদ জানান। গণতন্ত্র দুর্বল করে এমন কোনো প্রচেষ্টা মানা হবেনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র-বৃটেন রাশিয়াকে একসঙ্গে নিয়েই কাজ করতে চায়। আমরা একতা কিভাবে আরো বৃদ্ধি করা যায় সে প্রচেষ্টার লক্ষ্যে বৈঠকে একমত হয়েছি।

চেকার্সকে ঐতিহাসিক একটি জায়গা মন্তব্য করে ট্রাম্প বলেন, এটা সত্যিকারের আনন্দ যে চেকার্সে আসলাম। ছোটবেলায় ইতিহাসে তার কথা পড়েছি।

যুক্তরাষ্ট্র আর যুক্তরাজ্য দুই দেশই একটি বাণিজ্য চুক্তি করতে আগ্রহী উল্লেখ করে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাজ্য ইইউ ছাড়ার পর দুই দেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করার বিষয়ে আমরা রাজি হয়েছি। দুই দেশের দ্বি-পাক্ষিক বিনিয়োগ এক ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি, আমরা এটাকে ছাড়িয়ে যেতে চাই।

বৈঠকে পরমাণূ ইস্যু নিয়ে কথা হয়েছে জানিয়ে ট্রাম্প বলেন, অংশিদারিত্বের ভিত্তিতে বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী আর আমি পরমাণূ নিরস্ত্রকরণ কার্যক্রম নিয়ে কথা বলেছি। তিনি বলেন, আমরা ইরান নিয়ে কথা বলেছি। ইরানকে অবশ্যই পরমাণুুশক্তিধর দেশ হবার সুযোগ দেয়া যাবে না।

সংবাদ সম্মেলনে সিএনএন’র করা প্রশ্ন এড়িয়ে যেতে চান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি বলেন,” সিএনএন হলো ফেক নিউজ। আমি সিএনএনের কাছ থেকে কোনো প্রশ্ন নোবো না।”

পাশাপাশি এনবিসি ও বৃটিশ পত্রিকা স্যান’র সমালোচনা করেন ট্রাম্প। এসময় সিএএনের হোয়াইট হাউস করসপন্ডেন্ট জিম অ্যাকোস্টাকে বার বার প্রশ্ন করার সুযোগ চাইলে থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন ট্রাম্প। তারে না দিয়ে ফক্স নিউজ চ্যানেলের সাংবাদিক জন রবার্টসের দিকে ইঙ্গিত করেন। সুযোগ পেয়ে রবার্টস জানতে চান, ক্রাইমিয়া রাশিয়ার দখলে যতদিন থাকবে ততদিন কি রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের উন্নতি ঘটার কোনো সুযোগ আছে?
সিএনএনের অ্যাকোস্টা আশা ছেড়ে না দিয়ে উচ্চস্বরে জানতে চান, মিস্টার প্রেসিডেন্ট, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন থেকে দূরে থাকতে কি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের প্রতি আপনি আহ্বান জানাবেন? তবে এক্ষেত্রে তিনি নিরাশ করেননি। সংবাদসম্মেলন শেষ হয়ে গেলেও প্রশ্নটি শুনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘুরে দাঁড়ান এবং উত্তরে বলেন, হ্যাঁ।

(জাস্ট নিউজ/জিএস/২২০০ঘ)