ভারত প্রবেশে বাধা প্রসঙ্গে কার্লাইল

বাংলাদেশ সরকারের চাপেই ভারত এমন আচরণ করেছে

বাংলাদেশ সরকারের চাপেই ভারত এমন আচরণ করেছে

ঢাকা, ১৪ জুলাই (জাস্ট নিউজ): বাংলাদেশ সরকারের চাপের মুখেই ভারত তাদের দেশে স্বনামধন্য আইনজীবি লর্ড কার্লাইলকে অবস্থানের অনুমতি দেয়নি। জেলে আটক প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে যেন কোনো কথা বলা না যায় সেটাই ছিলো বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্য।

আন্তর্জাতিক প্রভাবশালী গণমাধ্যম আল জাজিরায় এমনটাই বলেছেন বৃটেনের উচ্চ কক্ষ-হাউস অব লর্ডসের সদস্য এবং বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের মামলার অন্যতম আইনজীবি লর্ড কার্লাইল।

বাংলাদেশ সরকারের নীতিতে ভারত নিজেদের আত্মসমর্পণ করেছে এটা ভেবে আমি মর্মাহত হয়েছি বলে জানান কার্লাইল।

বিএনপি চেয়ারপারসনের মামলা নিয়ে প্রথমত বাংলাদেশ আসতে চাইলেও তার অনুমতি পাচ্ছিলেন না প্রতিথযশা এই বৃটিশ আইনজীবি। বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে খালেদা জিয়ার মামলা নিয়ে সংবাদ সম্মলেন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সঙ্গত কোনো কারণ ছাড়াই তাঁকে বিমানবন্দর থেকেই ফেরত পাঠায় ভারত সরকার।

‌'ইউকে লইয়ার অ্যালিগস ইন্ডিয়া ডিপোরটেড হিম আন্ডার বাংলাদেশ প্রেসার' শিরোনামের ঐ প্রতিবেদনে কার্লাইল আরো বলেন, আইনের শাসনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন একঘরে দেশে পরিণত হয়েছে। ঢাকার চাপে আমাকে প্রবেশের অনুমতি না দেবার জন্য ভারতের উচিত লজ্জায় মরে যাওয়া।

বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমের খবরে জানা যায়, লর্ড কার্লাইলের আসন্ন ভারত সফর এবং তাঁর ভিসা প্রদান নিয়ে আপত্তি জানাতে এক সপ্তাহ আগে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার ড. আদর্শ সাক্ষ্যকে তলব করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হকের সঙ্গে আল জাজিরার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি।

কার্লাইলকে বিমানবন্দর থেকে দেশত্যাগে বাধ্য করার সময় একটি বিবৃতি দেয় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়। সেসময় তাতে বলা হয়, ১১ জুলাই নয়াদিল্লি বিমানবন্দরে আসার পর যথাযথ ভিসা প্রদর্শন করতে না পারায় কার্লাইলকে ভারতে অবস্থানের অনুমতি দেয়া হয়নি।

এর কয়েক ঘন্টা পর বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রাভেস কুমার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, কার্লাইলের গতিবিধি কিছুটা সন্দেহজনক ছিলো। আমাদের কাছে মনে হয়েছে তাঁর এ সফরে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে সমস্যা তৈরি হতে পারে এবং ভুল বুঝাবুঝি হতে পারে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির।

এ প্রসঙ্গে লর্ড কার্লাইল আল জাজিরাকে বলেন, আমি ভারতে ই ভিসার আবেদন করেছিলাম। এ সংক্রান্ত তাদের প্রয়োজনীয় প্রশ্নের যথাযথ উত্তরও দিয়েছি। তিনি বলেন, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র যে সব কথা বলেছেন তা অসত্য এবং অন্যায়। এসব কেন করা হলো তার ব্যাখা জানার জন্য ভারতের হাইকমিশন বরবার ব্যাখা জানতে যাচ্ছি এবং ক্ষতিপূরণও চাইবো আমি ।

ভারতে কেন আসতে চেয়েছিলেন সে প্রসঙ্গে বৃটিশ আইনজীবি বলেন, বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী নেতা বেগম খালেদা জিয়ার মামলা নিয়ে আন্তর্জাতিক মিডিয়াকে অবগত করতে আমি ভারতে গিয়েছিলাম।

তিনি বলেন, ভারতে গণমাধ্যমের একটা বড় রকমের আন্ত:সংযোগ রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় সংবাদ প্রসারে এটা একটা সুবিধা। আর সেজন্য ভারতে যাবার ইচ্ছা সঠিক মনে করেছিলাম।

খালেদা জিয়ার মামলা প্রসঙ্গে কার্লাইল বলেন, খালেদা জিয়ার মামলাটা পুরোই রাজনৈতিক একটা মামলা। এতে অভিযুক্ত করবার কোনো প্রমাণ নেই।খালেদা জিয়াকে যেভাবে অভিযুক্ত করা হয়েছে তা আইনের শাসনের মূলনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।আর সাম্প্রতিক কর্মকান্ডগুলো এটাই প্রমাণ করে যে এ মামলায় অবাধ রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ রয়েছে।

বাংলাদেশে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার আর কোনো অস্তিত্ব নেই মন্তব্য করে কার্লাইল বলেন, শুনানিকে প্রভাবিত করার জন্য বিচারচলাকালে খালেদা জিয়ার আইনজীবিদেরকে একাধিকবার তল্লাসি করা হয়েছে। খালেদা জিয়া জামিনের আবেদন করার পরও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবিদের অনিয়মে তা বাধগ্রস্থ হয়েছে।

গত মে মাসে খালেদা জিয়াকে জামিন দেয় সুপ্রিম কোর্ট, তারপরও তিনি কারাগারে আটক রয়েছেন।তাঁকে আরো তিনটি মামলায় আটক দেখানো হয়েছে।

কার্লাইল জানান তাঁকে ভারত থেকে ফিরিয়ে দেবার বাংলাদেশ সরকারের উদ্দেশ্যটা হীতে আরো বিপরীত হয়েছে। মামলাটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এখন আরো বেশি গুরুত্ব পাবে।

(জাস্ট নিউজ/জিএস/০০২০ঘ)