ওয়াশিংটন থেকে মুশফিকুল ফজল আনসারী, সেপ্টেম্বর ১৫ (জাস্ট নিউজ): আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক রাজনীতির মেরুকরণ, দ্বি-পাক্ষিক বুঝাপড়াসহ বিভিন্ন ইস্যুতে শাটল ডিপ্লোমেসি চলছে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিসের ভারত সফরের রেশ কাটতে না কাটতেই শুক্রবার ওয়াশিংটনে পাড়ি জমিয়েছেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল।
দুই দেশের মধ্যকার সাম্প্রতিক এ সিরিজ বৈঠকগুলোকে ভূ-রাজনীতির নতুন মেরুকরণ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।
ভারত ছাড়াও চালকের আসনে পাকিস্তানের নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ফলে দায়িত্ব গ্রহণের সাথে সাথে চলতি মাসের শুরুতে ইসলামাবাদ পৌঁছে বার্তা স্পষ্ট করে আসলেন মাইক পম্পেও।
ভারতে জাতীয় নির্বাচন আসন্ন। এছাড়া বাংলাদেশসহ পাশ্ববর্তী প্রতিবেশী দেশগুলোতে নির্বাচনসহ নানা পটপরিবর্তন অপেক্ষমান। চীনের বৈরিতা আর ইরানের সখ্যতাসহ নানা বিষয় সামনে রেখে গত ৬ সেপ্টেম্বর এশিয়া সফরের অংশ হিসেবে ভারত যান যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। সঙ্গে ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস। টু প্লাস টু বৈঠক করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ আর প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সিতারমনের সঙ্গে। এসময় যুক্তরাষ্ট্রের দুই মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত হয় দোভালের। বৈঠকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টসূত্রগুলো বলছে- এসব বৈঠক শুধুমাত্র নিয়মরক্ষা আর যথারীতি নিরাপত্তা ইস্যু কেন্দ্রিক ছিলোনা। এর বাইরে আঞ্চলিক, প্রতিবেশি রাষ্ট্রসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আর এ নিয়ে ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দেন-দরবারের রেশটা বুঝা যায় পাল্টা-পাল্টি সফরের দিকে তাকালে। মিডিয়ার কাছে বিষয়টি দৃষ্টি এড়ায়নি। দেন-দরবার কি নিয়ে তা নিয়ে তৈরি হচ্ছে প্রতিবেদন।
ভারত সফরে যাবার আগেই পাকিস্তানের নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান, পররাষ্ট্র মন্ত্রী শাহ মেহমুদ কোরেশি এবং সেনাপ্রধান জেনারেল কামার বাজওয়া’র সঙ্গে ইসলামাবাদে বৈঠকে মিলিত হন মাইক পম্পেও।
৬ সেপ্টেম্বরের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র যোগাযোগ, নিরাপত্তাসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করে।
ভারতের নিরাপত্তা উপেদেষ্টা অজিত দোভাল শুক্রবার স্টেট ডিপার্টমেন্টে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও’র সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন।
বৈঠকে দোভালকে সঙ্গ দেন ওয়াশিংটনে নিযুক্ত নয়াদিল্লির রাষ্ট্রদূত নভতেজ স্বণা। পৃথক পৃথকভাবে বৈঠক করেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জেমস ম্যাটিস এবং নিরাপত্তা উপদেষ্ট জন বোল্টনের সঙ্গে।
দ্বি-পাক্ষিক বিভিন্ন ইস্যুর মধ্যে ভারত-ইরান সম্পর্ককে খুব একটা ভালো চোখে দেখছেনা যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রতিফলন এবং পরোক্ষ ইঙ্গিত রয়েছে স্টেট ডিপার্টমেন্টে অনুষ্ঠিত মাইক পম্পেও’র শুক্রবারের সংবাদসম্মেলনে।
ইরানের ব্যবসায়িক অন্যতম অংশীদার ভারত। যেকটি বড় দেশ ইরান থেকে তেল আমদানি করে ভারত তার অন্যতম। এছাড়া ইরানের কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূণ ছাবাহার বন্দরের মেরামত উন্নয়ন কাজ করছে দেশটি। সেটাও ভারতের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বিরাগভাজন হবার অন্যতম একটি কারণ।
স্টেট ডিপার্টমেন্টের সংবাদসম্মেলনে কোনো দেশের নাম উল্লেখ না করে ইরানের ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়ে পম্পেও বলেন, ”আগামী ৪ নভেম্বর ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অবরোধ পুরোপুরিভাবে কার্যকর হবে। এবিষয়টিকে এড়িয়ে যারা অন্য নীতির উপর ভিত্তি করে দেশটির সঙ্গে অর্থনৈতিক যোগাযোগ রক্ষা করবে তাদের সতর্ক হতে হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ”এতে কোনো রকমের সন্দেহ নেই যে ৪ নভেম্বরের মধ্যে যারা ইরানের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করবেনা তাদের ব্যাপারে আলাদা নীতি তৈরি হবে”।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ”কিছু কিছু দেশ ইতিমধ্যে ইরানের সঙ্গে তাদের সব লেনদেন গুটিয়ে নিচ্ছে। তারা আমাদের অবরোধের গুরুত্ব বুঝতে পেরেছে”।
(জাস্ট নিউজ/জিএস/০৩১৭ঘ)