নারী ক্রিকেটে উত্তুঙ্গ সাফল্যের নেপথ্যে

নারী ক্রিকেটে উত্তুঙ্গ সাফল্যের নেপথ্যে

ঢাকা, ১৯ জুলাই (জাস্ট নিউজ) : ফুটবল বিশ্বকাপের আমেজ এখনও রয়ে গেছে। এরইমাঝে ক্রিকেটে বাংলাদেশের দুটি বিপরীতমুখী ঘটনা অনেকটা অগোচরে ঘটে গেছে। এক, ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে দুই টেস্টের সিরিজে লেজেগোবরে অবস্থা হয়েছে সাকিব আল হাসানদের। দুই, বাংলাদেশের মেয়েরা সাফল্যের সুরভি ছড়িয়েছেন অবিরাম। শেষ ১৩টি টি ২০ ম্যাচের ১১টিতেই জয়।

নেদারল্যান্ডসে টি ২০ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে সালমা খাতুনরা তাদের সাফল্যের মুকুটে যোগ করেছেন সবচেয়ে উজ্জ্বল পালক। এমন মনোহর সাফল্যের কারণ বদলে যাওয়া মানসিকতা। এভাবেই এই বর্ণিল বিবর্তনকে ব্যাখ্যা করেছেন বাংলাদেশ নারী টি ২০ দলের অধিনায়ক সালমা খাতুন।

সালমা খাতুন বলেন, ‘মানসিকতার পরিবর্তন হওয়ায় আমরা সাফল্য পাচ্ছি। দলটা যে নতুন তা নয়। আগেও আমরা এই দল নিয়ে খেলেছি। এতদিন আমাদের মূল সমস্যা ছিল ব্যাটিংয়ে। এই জায়গায় উন্নতি করায় ফল পাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘এই উন্নতির পেছনে বর্তমান কোচিং স্টাফের বড় অবদান রয়েছে। আমাদের সঙ্গে বিসিবির ভালোমানের একজন কোচ রয়েছেন। তিনি ফাহিম স্যার (নাজমুল আবেদিন)। নতুন কোচরাও আমাদের অনেক কিছু শেখাচ্ছেন। যা খুব কাজে দিচ্ছে।বিসিবি আমাদের সবসময়ই সমর্থন দিয়ে থাকে। এখন বেশি করে খোঁজখবর নিচ্ছে। কোথায় আছি বা কোথায় যাচ্ছি, কি খাচ্ছি- এসব আর কি। ভালো লাগছে।’

দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ব্যর্থতার পর মেয়েদের কোচিং স্টাফ ঢেলে সাজানো হয়েছে। ভারতের অঞ্জু জৈন প্রধান কোচ। দেবিকা পালশিখর তার সহকারী। দলের ফিজিও ভারতের।

জাহানারা আলম বলেন, ‘সাহসই আমাদের পাল্টে দিয়েছে। এই দলটার বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় একসঙ্গে প্রায় ছয়-সাত বছর ধরে খেলছি। সবাই অভিজ্ঞ। ফিল্ডিং ও ব্যাটিং ভালো হচ্ছিল না। সেটাও এখন ভালো। দারুণ কোচিং স্টাফ যারা, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বুঝিয়ে দিচ্ছেন। সঙ্গে সাহস- এই তিনটা জিনিসই আমাদের সাফল্যের পেছনে বড় অবদান রেখেছে।’

তিনি বলেন, ‘বোর্ড এতদিন আমাদের পেছনে বিনিয়োগ করেছে। পর্যাপ্ত ম্যাচ খেলার সুযোগ এবং অন্য সুবিধাগুলো পেলে আমরাও যে ভালো করতে পারি, সেটাও দেখাতে পেরেছি। এটা এখন ধরে রেখে এগোতে হবে।’

নাজমুল আবেদিন ফাহিম বলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে পেস বোলারদের খেলে মেয়েদের দারুণ অভিজ্ঞতা হয়েছে সেটাই তারা প্রয়োগ করে সফল হচ্ছে।’

আয়ারল্যান্ড সফরে পেসবান্ধব উইকেটে বাংলাদেশের প্রথম নারী বোলার হিসেবে টি ২০ ক্রিকেটে পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন জাহানারা। পান্না ঘোষও পাঁচ উইকেট নিয়েছেন। ফাহিমা খাতুন করেছেন হ্যাটট্রিক। দুই লেগ-স্পিনার ফাহিমা খাতুন ও রুমানা আহমেদ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে পাঁচ ম্যাচে নিয়েছেন ১৯ উইকেট।

তাদের গুরু এবং খুলনা বিভাগীয় নারী দলের কোচ ইমতিয়াজ হোসেন পিলু বলেন, ‘তাদের ধারাবাহিকতাটা দারুণ। উন্নতি করার মানসিকতা সবসময় আছে। তারা বোলিংয়ে দারুণ জুটি বেঁধেছে। এসবই সাফল্যের পেছনে বড় অবদান রেখেছে।’

টি ২০ বোলিং র‌্যাংকিংয়ে সেরা পাঁচের তালিকায় উঠে এসেছেন ১৮ বছর বয়সী বাঁ-হাতি স্পিনার নাহিদা আক্তার। তার ঠিক উপরে থাকা পাকিস্তানের আনাম আমিনের (৬০২) চেয়ে মাত্র ৩ রেটিং পয়েন্ট কম নাহিদার।

গত মাসে টানা চার ম্যাচ জিতে মালেশিয়ায় অনুষ্ঠিত টি ২০ এশিয়া কাপ জিতেছিল বাংলাদেশ। এই জয়ের পথে আগের ছয়বারের চ্যাম্পিয়ন ভারতকে দু’বার হারিয়েছেন সালমারা। নেদারল্যান্ডসে বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব শুরু হওয়ার আগে আয়ারল্যান্ড সফরে স্বাগতিকদের বিপক্ষে ২-১-এ টি ২০ সিরিজে জেতে বাংলাদেশ।

এরপর নেদারল্যান্ডসে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশ টানা পাঁচ ম্যাচ জিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। গ্রুপপর্বে পাপুয়া নিউগিনি, স্বাগতিক নেদারল্যান্ডস ও সংযুক্ত আরব আমিরাতকে হারায়। এরপর সেমিফাইনালে স্কটল্যান্ড ও ফাইনালে আয়ারল্যান্ডকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হন সালমারা।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১১২৫ঘ.)